দীর্ঘ দেড় যুগ পর পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে কলারোয়ার মুক্তিযোদ্ধাপত্নীর ধর্ষণ মামলা

কামরুল হাসানঃ
কলারোয়ার হিজলদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাপত্নীর উপর চালনা পাশবিকতার বিচার দাবি করেছেন। ১৮ বছর আগে সংঘটিত এই পাশবিকতার সাথে জড়িতদের বিচার নতুন করে শুরু করার আহবান জানান তিনি। ধর্ষিতা একইসাথে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার বিচার দাবি  করেন।
শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বেশ কিছু উপহার নিয়ে ধর্ষিতার সাথে তাঁর বাড়িতে এসে সাক্ষাৎ করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেরারেল সুজিত চ্যাটার্জী, হাশেম আলী ও তাঁদের সঙ্গীরা।
তিনি এসময় তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খোঁজখবর  নিতে ও শুভেচ্ছা উপহার দিতে এসেছি। ‘২০০২ সালে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। তখন বিএনপি এবং এখানকার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখানকার জনগণই তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন। আপনারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন। সেজন্য আজকে আমরা তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমাদের বলেছেন যে ধর্ষিতা ওই নারীকে খোঁজখবর নেয়ার জন্য এবং তিনি কী অবস্থায় আছেন, তাঁর মামলা কী অবস্থায় আছে এই সব কিছুর খোঁজখবর নেয়ার জন্য আমাদের বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা তাকে উপহার প্রদান করেছি।’
তিঁনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি খুবই গরীব, তাদের মামলা পরিচালনা করার ক্ষমতা নেই। নেত্রী বলেছেন সমস্ত দায়-দায়িত্ব তিঁনিই নিবেন। মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর মন কাঁদে। কিন্তু বিভিন্ন কাজে এতো ব্যস্ততার কারণে আপনার কাছে আসতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুভেচ্ছা থাকলো আপনার উপর’। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটা ম্যাসেজ আমি দিতে চাই তখন যদি এই শ্লীলতাহানীর জন্য আমাদের নেত্রী আসছিলেন তাঁকে যদি আঘাত করা না হতো, তাঁকে ধর্ষকের পক্ষে এই বিএনপি এবং তার দোসররা যে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলো তখন সেই সাহায্যের জন্য আজকে দেশে ধর্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেদিন যদি ধর্ষিতার পক্ষে থাকতেন বিএনপি এবং তৎকালীন সরকার পক্ষ আমাদের আজকে এই ধর্ষণের কেস বৃদ্ধি পেতো না। আমরা মনে করি এবং আপনারা জানেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ধর্ষকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছন, জিরো টলারেন্সে আছেন এবং আগামিতে ছাড়া হবে না কোন ধর্ষকদের।’ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত অ্যাটার্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, ‘আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হন। আপনারা এক হন, সামনে আরও কঠিন দিন আসবে। বিএনপির সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে। আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি কোন কম্প্রোমিউজার থাকে তাহলে তাদের অনুরোধ করবো আপনারা মাফ করেন আমাদের। সাচ্চা লোক নিয়েই আওয়ামী লীগ হবে। যেখানে সৎ, নির্ভিক এবং দেশের জন্য যারা আত্মনিয়োগ করবেন, দলের জন্য যারা আত্মনিয়োগ করবেন তাদের নিয়েই আওয়ামী লীগ আবার নতুন করে শক্তি সঞ্চার করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আপনারা সহযোগিতা করবেন, সাহায্য করবেন।’
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মদ স্বপন, সম্পাদক আলিমুর রহমান, ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এড. মোহাম্মাদ হোসেন, সাতক্ষীরা জর্জ কোটের পিপি আব্দুল লতিফ, ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত: শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ওই ধর্ষিতা ১৫ শতক জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেন। এই খাস জমিতেই তারা বসবাস করতেন। এই জমি কেড়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তার ওপর এই পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। ২০০২ সালের ২৬ আগস্ট হিজলদী গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী। গভীর রাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নিকটস্থ একটি জঙ্গলে ফেলে তাকে ধর্ষণ করা হয়। অচেতন অবস্থায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনার পর ৩০ আগস্ট তারিখে খুলনা সফররত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা খুলনা থেকে তাকে দেখতে সাতক্ষীরা হাসপাতালে আসেন। পরে তিনি যশোর অভিমুখে ফিরে যাবার সময় সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর সফরসঙ্গীদের কয়েকজন আহত হন। এসময় গুলির ঘটনা ঘটে। ওই ধর্ষণ মামলার সাতক্ষীরার আদালতে আমিরুল বৈদ্য, আসাদুজ্জামান, তোজাম্বর ও হাসান এর বিরুদ্ধে পুলিশ ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর চার্জশীট দেয়। এতে সবাই খালাস হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে তিনি চলে যান যশোরের মনিরামপুরে। এরপর দীর্ঘসময় ঢাকায় কাটিয়ে সম্প্রতি তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)