সাতক্ষীরায় আলোচিত লুৎফর নিকারী হত্যা মামলার প্রধান আসামীর জামিন বাতিল

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সাতক্ষীরার তালায় আলোচিত লুৎফার নিকারী হত্যা মামলার প্রধান আসামী সরদার মশিয়ার রহমানের মানবিক বিবেচনায় দেওয়া জামিন বাতিল করেছে জেলা ও দায়রা জজ। রোববার বেলা ১২টার দিকে আসামীর জামিন বাতিল করেন বিচারক শেখ মফিজুর রহমান।

সরদার মশিয়ার রহমান (৩৫) তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত সাংগঠণিক সম্পাদক। তিনি তালা সদরের বারুইহাটি গ্রামের মৃত. নুর আলী সরদারের ছেলে।

জামিন শুনানী দিন ছিল। মায়ের অসুস্থতা, মায়ের কুলখানি, মানবিক বিবেচনা আর আজ মূল জামিন শুনানীতে স্থায়ী জামিনের আবেদন করে। সেই আবেদন শুনানী না ম ুর হয়।

সাতক্ষীরা আদালতের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ বলেন, আসামী ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মানবিক বিবেচনায় অন্তবর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। আজ (রোববার) জামিন আবেদন শুনানী হয়। শুনানীতে আসামী পক্ষ স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে বাদী পক্ষ জামিন বাতিলে আবেদন করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে হত্যা মামলার প্রধান আসামীর অন্তবর্তীকালীন জামিন বাতিল করে আসামীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন জেলা ও দায়রা জজে বিচারক শেখ মফিজুর রহমান।

তিনি জানান, এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর মায়ের অসুস্থতায় মানবিক বিবেচনায় ১০ দিন, ১৬ সেপ্টেম্বর মায়ের কুলখানির জন্য ১০ দিন, ২৭ সেপ্টেম্বর মানবিক বিবেচনায় আরও ১৫ দিন অন্তুবর্তীকালীন জামিন দেন জেলা ও দায়রা জজ। আজ হত্যা মামলাটির আসামী পক্ষের প্রধান আসামীর জামিন আবেদন ও বাদী পক্ষের জামিন বাতিলের আবেদনের উপর শুনানীতে অন্তবর্তীকালীন জামিন বাতিল করেন বিচারক।

সাতক্ষীরা কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর অমল ঘোষ জানান, আসামী সরদার মশিয়ার রহমানকে এখন আদালতের হাজতে রাখতে রাখা হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে আসামীকে কারা কর্তৃপক্ষ জেলহাজতে নিবেন।

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগষ্ট (সোমবার) রাত ১১টার দিকে তালা উপজেলার নলবুনিয়া বিলের সরকারি খালে মাছ ধরার সময় সরদার মশিয়ার রহমানের মাছের ঘেরে মাছ চুরির অভিযোগ এনে লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারীকে বেধড়ক মারপিট করে হত্যার চেষ্টা করে মশিয়ার রহমান। সঙ্গে ছিলেন তার সহযোগী হাজরাকাটি গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী তালা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন শেখ ও বারুইহাটি গ্রামের জাবেদ আলী বিশ^াসের ছেলে রনি বিশ^াস। তিনজন একত্রে মারপিট করছে এমন খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সেলিম নিকারীর বাবা লুৎফর নিকারী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মশিয়ার রহমান তাকে বুকে লাখি মেরে খালে ফেলে দেন। এরপর গ্রামবাসীরা লুৎফর নিকারীকে উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠে গোটা তালা উপজেলা। ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে লাশ নিয়ে তালা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারী মশিয়ার রহমানের ফাঁসির দাবিতে থানা ঘেরাও করে গ্রামবাসী। পুলিশ মশিয়ার রহমানকে গ্রেফতার করে ও ঘটনায় জড়িত তিনজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করে। মামলা বাদী হন নিহতের ছেলে সেলিম নিকারী। তাছাড়া ১৯ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন সরকারি দলের এসব খুনী ও সহযোগীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়া হাজার হাজার গ্রামবাসী। ওই দিন রাতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় সন্ত্রাসী মশিয়ার রহমানকে। মশিয়ার রহমানকে সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে তালা উপজেলাজুড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠণ করে তাÐব চালানোর বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কার লিপিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)