সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে বাংদেশেই

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপালের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে পোষা হচ্ছে হরেক রকম সাপ। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, এসব সাপ পোষা হচ্ছে মানুষের কল্যাণে। সাপে কাটা মানুষের জন্য চমেক হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে তৈরি হচ্ছে প্রতিষেধক। এখানে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি গবেষকরা।

দুই বছর আগে পাঁচটি সাপ নিয়ে শুরু, বর্তমানে সাপের সংখ্যা ১২০টি। এরমধ্যে ৪৪টি সাপ প্রাপ্তবয়স্ক, বাকি সব বাচ্চা। এসব সাপ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে। খাবার হিসেবে সাপগুলোকে দেয়া হয় মুরগির বাচ্চা, মাছ ও ইঁদুর। বাচ্চা সাপকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে পোষা হচ্ছে সাপ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে পোষা হচ্ছে সাপ

জানা গেছে, এটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ‘অ্যান্টিভেনম’ বা প্রতিষেধক তৈরির একটি প্রকল্প। সাপে কাটলে যেন কারো মৃত্যু না হয়, সেজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী দু’বছর আগে হাতে নেয়া হয় এ প্রকল্প। তিন পদ্ধতিতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাপ সংগ্রহ ও বিষের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা হয় চমেকের এ গবেষণাগারে। আক্রান্ত কেউ সাপ ধরে আনলে তাও সংরক্ষণ করা হয়।

চমেকের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত একজন বলেন, কেউ আমাদের তথ্য দিলে আমরা আমরা গিয়ে সাপ সংগ্রহ করি। গবেষণাগারে নেয়ার আগে দুই মাস কোয়ারেন্টাইন রুমে রাখা হয় সাপগুলো। এসব সাপ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য আছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন চিকিৎসক।

একজন চিকিৎসক বলেন, সাপগুলো অসুস্থ কিনা, নিয়মিত খাচ্ছে কিনা, ওজন কমছে কিনা- এসব দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত দেই কোন সাপ থেকে ভেনম নেয়া যাবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে পোষা হচ্ছে সাপ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে পোষা হচ্ছে সাপ

প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন ও এলাকাভিত্তিক পার্থক্যের কারণে সাপের বিষের তারতম্য ঘটতে পারে। সেদিক থেকে বিষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণা চালিয়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল মিলবে বলে মনে করছেন তারা।

‘অ্যান্টিভেনম’ বা প্রতিষেধক তৈরি প্রকল্পের প্রধান গবেষক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, আমরা মাত্র এক-দুই ধাপ পার হতে পেরেছি। আমাদের অনেক সাপ সংগ্রহ করা বাকি, ভেনমও সংগ্রহ করতে হবে। তবে এ বছরের মধ্যে যে ভেনম সংগ্রহ করেছি তা ক্যারেক্টারাইজ করা সম্ভব।

‘সাপের বন্ধু’ খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও ভেনম রিসার্চ সেন্টারের ইন্টার্ন গবেষক মো. রফিক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫-৬ টি সাপ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে হস্তান্তর করি। সেখানে সাপগুলোকে যত্নে লালন-পালন করা হচ্ছে। এসব সাপের বিষ দিয়ে জীবন রক্ষাকারী প্রতিষেধক তৈরির উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অসাধারণ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)