মাত্র ৬০ সেকেন্ডে ৭১ জনের শরীরে ভাইরাস দিয়েছেন এক ব্যক্তি

করোনার কোনো উপসর্গ তার মধ্যে ছিল না। শরীরের যে মারণ ভাইরাস বাসা বেঁধেছে, তা তিনি নিজেও জানতেন না। তবে লিফটে চড়ার পরই সব কিছু পাল্টে যায়। মাত্র ৬০ সেকেন্ডে ৭১জনের শরীরে করোনা ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি!

তার শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল না। বাইরে থেকে ফেরার পর নিজেকে ঘরবন্দিই করে রেখেছিলেন ওই নারী। নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরও হননি। খাবারও আনছিলেন বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে। কিন্তু লিফটে চড়তেই তার থেকে দ্রুতহারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অন্যদের শরীরে।

নভেল করোনাভাইরাস যে কিভাবে, কত তাড়াতাড়ি মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়ে ফেলে তার জ্বলন্ত উদাহরণ এটি। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোলের (সিডিসি) নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রত্যেক ট্রাভেলারের মধ্যে উপসর্গহীন করোনা দেখা যাচ্ছে। এমনকি তারা যে ভাইরাসের অন্যতম বাহক, তারা তা বুঝতে পারছেন না। আর এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল সমস্য়া। এর জেরেই করোনার সংক্রমণের বিস্তার দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা সবাই এতদিনে জেনেছি যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। যার মাধ্যমে শরীর থেকে ড্রপলেট বেড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রথমে প্রকাশ না করলে, পরে স্বীকার করে নিয়েছে যে, করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে করোনা মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধতা কতটা কাজে দিচ্ছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কারণ করোনার বায়ুবাহিত হয়ে পড়ায় এর শেষ কোথায় তা বুঝে উঠতে পারছেন খোদ বিজ্ঞানীরাই।

এরই মধ্যে উপসর্গহীন করোনা রোগীই বর্তমানে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় ও বিধ্বংসী অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার দ্বিতীয় দফার ছোবলে ফের লকডাউনের ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা,দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড-সহ বিশ্বের বহু দেশ।

সুপারস্প্রেডার

সিডিসি স্টাডির তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি, চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের গভীর যোগাযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহের আগে পর্যন্ত চীনের ওই প্রদেশের নামই নাকি সামনে আসেনি। ২ এপ্রিলে, দুজন ব্যক্তির স্ট্রোক হলে করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো সামনে আসে। কিন্তু তার আগে এই মারণভাইরাসের কোনো পরীক্ষা তাদের করা হয়নি বলে জানা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হলে তিন ছেলেই তার পাশে ছিলেন। ওই রোগী থেকে অজান্তেই ওই হাসপাতলের তিন চিকিত্‍সক-সহ মোট ২৮ জন নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়ে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, করোনা পরীক্ষার আগেও ওই ব্যক্তি আরো একটি হাসপাতলে ভর্তি ছিলেন। তার পাশাপাশি মোট ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হোন। এইভাবেই ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস।

এতো জনের মধ্যে মারণভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসনের। অন্য আরেক ব্যক্তির শরীরে মেলে করোনাভাইরাসের লক্ষণ। তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করার পরই জানা যায় তিনি করোনা পজিটিভ। তবে প্রথম রোগীর মধ্যে মারণভাইরাসের লক্ষণ নজরে না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস।

তবে শুধু হাসপাতালেই নয়, করোনা আক্রান্ত তার তিন ছেলে বাজারঘাট সবই করেছেন। সেইসময় লকডাউন জারি করা হয়নি কোনো প্রদেশেই। ফলে কড়াকড়িও ছিল না। দেদার ঘুরে বেড়িয়েছেন যেখানে, সেখানে। পরিবারের সকলে আক্রান্ত তো হয়েছেনই, এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মারণভাইরাস। পরিস্থিতি শোচনীয় দেখে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় লকডাউন। আর তারপর তো গোটাটাই ইতিহাস।

সূত্র; ইন্ডিয়া টাইমস।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)