জেলা নাগরিক কমিটির সভায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বাধ সংস্কারে পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবী

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির এক সভা আজ ৫ জুন ২০২০ ইং বেলা ১০ টায় দৈনিক পত্রদূত অফিসে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম। সভায় গত ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এর নির্বাহী কমিটি একনেকের বৈঠকে সাতক্ষীরা শহর ও সংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে “সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

সভায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা মরিচ্চাপ ও বেতনা নদী সংলগ্ন এলাকার ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৪ সালে প্রাথমিক সমীক্ষার পর ২০১৪ সালে এই প্রকল্পটি প্রণয়ন করে। দীর্ঘ দিন পর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হওয়ায় এটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হয়।

সভায় আরো বলা হয়, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর একনেকের সভা শেষে মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে সাতক্ষীরার বেড়িবাধ ভেঙে সমূদ্রের লবনাক্ত জোয়ারের পানি কৃষি এলাকায় ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তাঁর উদ্বৃতি দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

সভায় বলা হয়, প্রকল্পটি সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এই প্রকল্পের এলাকায় নয়। বাঁধ ভেঙে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার ৪, ৭-২ ও ১৫ নম্বার পোল্ডারে অবস্থিত শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, শ্রীউলা, প্রতাপনগর, খাজরাসহ সংলগ্ন এলাকা।

ফলে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পটি দ্রুত শুরু করার পাশাপাশি আম্পানে ধ্বংশপ্রাপ্ত বেড়িবাধ সংস্কারে পর্যাপ্ত বরাদ্দের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের দৃষ্ঠিতে আনতে সাতক্ষীরার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আহবান জানানো হয়। একই সাথে এ বছর বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা শহরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্ঠি না হয় সেজন্য এক্ষুণি উদ্যোগ গ্রহণের দাবী জানানো হয়। সভায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর নির্মাণে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সরকারী সহায়তা প্রদান এবং চিংিড়িসহ অন্যান্য ফসল ও আমসহ মৌসুমি ফলের ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার চাষিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করারও দাবী জানানো হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্রুত সংস্কার করার দাবী জানানো হয়।

সভায় করোনা পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরার সরকারি হাসপাতালে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম আরো জোরদার করা এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানানো হয়।সভায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলার লাখ লাখ মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে সরকারীভাবে যে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেশন কার্ডের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের দাবী জানানো হয়।

সভায় সাতক্ষীরার উন্নয়নে আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফা এবং আম্পান ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য দাবীতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, আব্দুল বারী, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সুধাংশু শেখর সরকার, মধাব চন্দ্র দত্ত, নিত্যানন্দ সরকার, আনোয়ার জাহিদ তপন, এড. মুনির উদ্দিন, গাজী শাহজাহান সিরাজ, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মরিয়ম মান্নান, কমরেড আবুল হোসেন, এড. আল মাহামুদ পলাশ, শেখ শরিফুল ইসলাম, অধ্যাপক তপন কুমার শীল, আসাদুজ্জামান লাভলু, এম জিললুর রহমান, এসএম রফিকুল ইসলাম, আলী নুর খান বাবলু ও আবুল কালাম আজাদ।

সভায় করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে তায়েমা-আরিফুর রহিম ট্রাস্টের সহায়তায় ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৭০০ টাকা ও মাস্কসহ খাদ্য সামগ্রি সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করায় ট্রাস্টের সকলকেসহ নাগরিক কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)