দূর্নীতির আঁখড়া দেবহাটা পি.আই.ও অফিস : সরকারি ঘর নির্মানে দূর্নীতি ও সময়ক্ষেপন

সাতক্ষীরার দেবহাটায় প্রায় তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দে টিআর প্রকল্পের আওতায় দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মানে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দূর্নীতি-অনিয়ম ও সময় ক্ষেপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারি অর্থ বরাদ্দের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ঘরের নির্মান কাজ শুরু করলেও, নির্মান কাজে দূর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কয়েকমাস আগেই মাঝপথে নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ওই ইউপি সদস্য। এরপর থেকে অতিবাহিত বিগত কয়েকমাসে ওই ইউপি সদস্যকে বারবার গৃহ নির্মানের তাগিদ দিয়ে এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও সরকারী বরাদ্দের ঘরটি তৈরী করে নিতে পারেননি ভুক্তভোগী পরিবারটি।ফলে সরকারি ঘরে বসবাসের আশায় থাকতে থাকতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও সুপার সাইক্লোন আম্পান সহ সাম্প্রতিক সময়ের প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে তীব্র দূর্ভোগ দূর্দশায় দিন কাটছে অসহায় পরিবারটির।

ভুক্তভোগী দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের গৃহহীন হতদরিদ্র মৃত ওমর আলী গাজীর ছেলে হাবিবুল্লাহ গাজী ও তার পরিবার অভিযোগে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সন্তানাদি নিয়ে জরাজীর্ন কুঁড়েঘরে বাস করে আসছেন তারা। তাদের দূর্ভোগ দূর্দশার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গণি’র সহায়তায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের অধীনে টিআর প্রকল্পের আওতায় দুই লক্ষ নিরানব্বই হাজার টাকার বরাদ্দকৃত দূর্যোগ সহনীয় সরকারী বাসগৃহ নির্মানের বরাদ্দ দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, অর্থ বরাদ্দের কিছুদিনের মধ্যেই ঘর নির্মানের কাজ শুরু করেন নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আবুল কাশেম। নির্মানকাজে নিন্মমানের ইট, ইছামতি নদীর চিকন বালু ও নামমাত্র সিমেন্ট ব্যবহার করে কাজে দূর্নীতি অনিয়ম করতে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ঘরের জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের চিকন কয়েল রড। পাশাপাশি নিয়ম বর্হিভূতভাবে ওই পরিবারটির ব্যাক্তিগত অর্থে ঘরের মেঝে ও বারান্দার মাটি ভরাট করিয়ে নেন ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি আবুল কাশেম।

এরই মধ্যে বাসঘরটির নির্মান ও টিনের ছাউনি কোনভাবে শেষ হলে দূর্নীতি-অনিয়মের তীব্র প্রতিবাদ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। এসময় ওই পরিবারটিকে গালিগালাজসহ নির্মানাধীন ঘরটি বাস উপযোগী না করেই নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন ইউপি সদস্য আবুল কাশেম।

প্রায় তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দের সরকারি গৃহ নির্মানের ওই প্রকল্পে ডিজাইন অনুযায়ী দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ সহ মাটি ভরাট, ঘরের মেঝে ও দেয়াল প্লাস্টার, রান্নাঘর, বাথরুম নির্মান পরবর্তী রংকরণ শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার কাজ বুঝে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তরের নির্দেশনা থাকলেও, অদ্যবধি দুই তৃতীয়াংশ নির্মান কাজ শেষ না করেই যাবতীয় নির্মান কাজ বন্ধ করে রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমনকি ঘরের নির্মান কাজ শেষ না করেও ইউপি সদস্য আবুল কাশেম সরকারী বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশারের সহায়তায় তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অন্যদিকে বিগত কয়েকমাস ধরে ঘরটির নির্মান কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হলেও তাতে কর্নপাত না করে বরং নানা অজুহাতে ঘর নির্মানে সময় ক্ষেপন করে চলেছেন ইউপি সদস্য। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তাতে কোন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারটির।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্মান কাজ শেষ করবো কিভাবে? সরকারি ভাবে প্রত্যেকটি ঘর নির্মানে দুই লক্ষ নিরানব্বই হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের সাথে ঘরপ্রতি নির্মানে আমাদের দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা দেয়ার মৌখিক চুক্তি হয়। কিন্তু তা থেকেও বিশ হাজার টাকা বাদ রেখে পিআইও অফিস থেকে আমাদের ২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এর আগের প্রকল্পে প্রত্যেকটি ঘর বাবদ সরকারী দুই লক্ষ আটান্ন হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও, ঘরপ্রতি নির্মানে দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকায় চুক্তি হয় পিআইও’র সাথে। কিন্তু আমরা নির্মান কাজ শেষ করার এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদেরকে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে বাকি টাকা উত্তোলন করে পিআইও অফিস নিয়ে নিয়েছে। এব্যপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বহু ইউপি সদস্যরা নানা প্রকল্পের কাজ শেষ করে বরাদ্দের টাকা না পেয়ে প্রতিনিয়ত প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

এব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গণি বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্মান কাজে দূর্নীতি অনিয়ম স্বত্ত্বেও অদ্যবধি ওই পরিবারটির বরাদ্দকৃত সরকারী ঘরটি নির্মান করে দেয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন বলেন, নির্মান কাজে দূর্নীতি অনিয়মের অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের জন্য সৃষ্ট পরিস্থিতির কারনে গৃহ নির্মানের কাজ সাময়িক বন্ধ থাকতে পারে। তবে শীঘ্রই সরকারি বরাদ্দকৃত ওই ঘরটির নির্মান কাজ শেষ করে পরিবারটির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)