সদর উপজেলা জাতীয় পার্টিকে সদস্য সচিব : আশুর ভাইরাভাই তপন না বিপুল! নেতা-কর্মীদের মাঝে বিতর্ক

কে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পাটির সদস্য সচিব তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এতে নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। জানা যায়, সরদার আব্দুল মজিদকে আহবায়ক ও আনোয়ার জাহিদ তপনকে সদস্য সচিব করে ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির ৯১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তা প্রত্যাখান করে আহবায়ক কমিটিকে না মানিয়া নিজের ইচ্ছা মত সদস্য সচিব আনোয়ার জাহিদ তপন নিজেকে সদর উপজেলা জাতীয় পাির্টর সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া ও জাতীয় পার্টির সদর উপজেলা আহবায়ক কমিটিকে অস্বীকার করিয়া পার্টির চেয়ারম্যানকে অবমানোনার মত অপরাধ করায় ও সংগঠনের একাধিক মিটিং এ অনুপস্থিত থাকায় আহবায়ক কমিটির পরিচিতি সভায় ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে শেখ শরিফুজ্জামান বিপুলের নাম প্রস্তাব করেন মোড়ল আব্দুল করিম। এই প্রস্তাবে কন্ঠ ভোটের মাধ্যমে উপস্থিত সকল সদস্য একমত পোষণ করিলে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ ইংরেজি তারিখ হতে শেখ শরিফুজ্জামান বিপুলকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে রেজুলেশনের কপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠালে তা বিচার বিশ্লেষণ করে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক পত্রে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ.বি.এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে শেখ শরিফুজ্জামান বিপুলকে অনুমোদন দিয়ে নিজের নাম স্বাক্ষর করেন। এতে জেলা জাপার সম্পাদক আশুর ভাইরাভাই তপন নিজের অবস্থান ও অস্তিত্ব জানান দিতে সংগঠন বিরোধী কাজ করায় হ য ব র ল হয়ে পড়েছে সংগঠন।

আরও জানা যায়, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটিগুলো গঠনের মাধ্যমে পার্টিকে উজ্জীবিত ও এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে পোঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন আহবায়ক কমিটি নেতারা। নব গঠিত আহবায়ক কমিটি পার্টিকে উজ্জীবিত করতে মাঠে নেমে পড়েন। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের দু’একটি বাদে সকল ইউনিয়নে ঝিমিয়ে পড়া কমিটিগুলোকে পুনগঠন করেন নেতারা। এতে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান ওরফে আশু ক্ষেপে ওঠেন। কারণ তার একান্ত নিজের লোক বাদে কমিটির আহবায়ক সরদার আব্দুল মজিদ হওয়ায় মানতে নারাজ ছিলেন তিনি। ফলে আশু ও মজিদ এর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাদের পরস্পর বিরোধী বিবৃতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় তর্কযুদ্ধ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আশু দীর্ঘদিন কুক্ষিগত করে রেখে জাতীয় পার্টিকে নিজের স্বার্থের পাশাপাশি নিজ ভাইরাভাই তপন ও নিকট আত্মীয়রা মিলে পার্টিকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে নিজের সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। এমনি সমেয় পার্টিকে উজ্জীবিত ও এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে পোঁছাতে উপজেলা জাতীয় পার্টির ৯১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তা প্রত্যাখান করে আহবায়ক কমিটির একাধিক সভায় উপস্থিত না হয়েও তপন এই কমিটি মানেনা বলিয়া জানান এবং পার্টির চেয়ারম্যান কর্তৃক অনুমোদিত আহবায়ক কমিটির প্রতি বিরুপ কথা বলায় দলীয় ভাবে তাহার অপরাধের বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ সহ ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব শেখ শরিফুজ্জামান বিপুলকে সদস্য সচিব ঘোষণা করবার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বরাবর কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রেরন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২১ জুলাই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-দফতর সম্পাদক এম.এ রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত একপত্রের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখা কমিটির সাংগঠনিক কাযক্রম চলমান প্রসঙ্গে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির অনুলিপি সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সম্পাদক বরাবরও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-দফতর সম্পাদক।

আরও বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটিগুলো গঠনের মাধ্যমে পার্টিকে উজ্জীবিত ও এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে পোঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন আহবায়ক কমিটি নেতারা। কিন্তু জেলা জাপার সম্পাদক আশরাফুজ্জামান ওরফে আশুও পছন্দের লোক না হওয়ায় তিনি সংগঠন বিরোধী কাজ শুরু করেন এবং ২০১৮ সালের ০৬ জুন এরপরে জাতীয় পার্টি সদর উপজেলা আহবায়ক কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সেই থেকে আজও সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির কোন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি; তবুও দলীয় কর্মসূচীগুলোতে অংশ গ্রহণ না করলেও তপনকে কিছু সংগঠনের অতিথি হতে দেখা যায়। তপনের কাদা ছোড়াছুড়ির কারণে সাংগঠনিক কর্মসূচী পালন নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে এবং উপজেলা জুড়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। আমরা আশুর পারিবারিক বলয়ের অবসান ও উপজেলায় সম্মেলন দাবি করি।

বিষয়টি সম্পর্কে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন, আমরা কোনো সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়নি। তবে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির একটি আহবায়ক কমিটি নিয়ে এসেছিল সরদার আব্দুল মজিদ। ওই কমিটিতে আনোয়ার জাহিদ তপন সদস্য সচিব ছিল। একাধিক সভায় অনুপস্থিত থাকায় ও সংগঠনের কাজ পরিচালনা না করায় তপনকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব করা হয় শেখ শরিফুজ্জামান বিপুলকে। পরবর্তীতে তপন কমিটি আনার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক পত্রে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ.বি.এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে শেখ শরিফুজ্জামান বিপুলকে অনুমোদন দিয়ে নিজের নাম স্বাক্ষর করেন। তখন থেকে আজও শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। কেউ যদি নিজে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব দাবি করেন; তার উপযুক্ত প্রমাণ তপন দিতে ব্যর্থ হলে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো আমরা।

সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল বলেন, এতদিন সম্পাদক দাবি করতো এবং সরদার আব্দুল মজিদ এর আহবায়ক কমিটির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করতো। কিন্তু পহেলা এপ্রিল ২০২০ ইংরেজি তারিখে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রদূত পত্রিকা পাঠ করতে যেয়ে দেখলাম সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আনোয়ার জাহিদ তপন দাবি করেন। তবে, সরদার মজিদকে আহবায়ক মানতে নারাজ ছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আহবায়ক কমিটির একাধিক সভায় অনুপস্থিত থাকায় ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে রেজুলেশনের কপি কেন্দ্রে পাঠালে তা বিশ্লেষণ করে পার্টির তৎকালিন মহাসচিব আমাকে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব করে একপত্রে নিজের নাম স্বাক্ষর করেছেন। ওই স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ হলেও তপন কেন্দ্রে খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা জেনে দেখুক। তা না জেনে মৌখিকভাবে আনোয়ার জাহিদ তপন সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব দাবি করতে পারে না। মৌখিক কথায় তো আর দল চলে না। তপন যে সদস্য সচিব তার বৈধ কাগজ পত্র দেখাক আমাদের। তখন আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা জাপার সদস্য সচিব পরিচয়দানকারি আনোয়ার জাহিদ তপন বলেন, গত ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত আহবায়ক কমিটি ও পরবর্তীতে মহাসচিব এ.বি.এম রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাক্ষরিত একপত্রে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির বৈধতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তখন আহবায়ক কমিটি আমরা প্রত্যাখান করেছিলাম। যেহেতু জেলা কমিটির অধীনে সদর উপজেলা কমিটি। তাই, জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক নুরুল ইসলাম কে আহবায়ক ও আমাকে সদস্য সচিব করে সদর উপজেলা আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। তখন থেকে আমরা সদর উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের কমিটিগুলো করে দিয়েছি। তবে আরেকটি আহবায়ক কমিটি থাকায় তৃণমূল কর্মীরা দ্বিধান্বিত। এ অবস্থার অবসান জেলা তথা কেন্দ্রীয় নেতারা করতে পারবেন। আমরা তো আর করতে পারি না। কেন্দ্র কত তারিখে তপনের কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)