পদ্মাসেতুতে বসলো ২৭তম স্প্যান, দৃশ্যমান ৪ হাজার ৫০ মিটার

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝেও থেমে নেই পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ। এরই ম‌ধ্যে পদ্মাসেতুতে ২৭তম স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) বসানো হয়ে‌ছে।

শনিবার সকাল ৯টা ২০ মি‌নি‌টে জা‌জিরা প্র‌া‌ন্তের ২৭ ও ২৮ নম্বর খুঁটির ওপর এ স্প্যানটি বসানো হয়। ফলে সেতুর ৪ হাজার ৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। এর আগে ১০ মার্চ বসানো হয় ২৬তম স্প্যান। ওই স্প্যান বসানোর ১৯ দিনের মাথায় বসানো হলো ২৭তম স্প্যানটি।

পদ্মা সেতু প্রক‌ল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবীর জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দি‌কে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেন দি‌য়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যান‌টি বহন করে জাজিরা প্রান্তের ২৭ ও ২৮ নম্বর পিলারের কাছে এনে নোঙর করে রাখা হয়।

শনিবার সকাল ৭টার দি‌কে স্প্যান‌টি খুঁটির ওপর উঠানোর কাজ শুরু করে সেতু প্রক‌ল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচা‌রীরা। সকাল ৯টা ২০ মি‌নিটে স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৭ নম্বর স্প্যানটি উঠানোর কথা ছিল আগামী ৩১ মার্চ। তবে আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় তিন দিন আগেই এটি উঠানো হলো। পদ্মাসেতুর মূল ভিত এখন সম্পন্ন। ৪২টি খুঁটির ৪১টি সম্পন্ন এখন। বাকি শুধু এখন ২৬ নম্বর খুঁটি । খুঁটির সর্বশেষ প্রক্রিয়া ক্যাপ। এই খুঁটির ক্যাপের রড বাঁধাই হয়ে গেছে। এখন শুধু ঢালাই। কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঢালাই সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানান প্রকৌশলী। এই খুঁটিটি সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে আগামী ১০ এপ্রিল। তবে এর আগেই সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে তিনটি স্প্যান বসলেও মার্চে বসছে দু’টি স্প্যান। গত ১০ মার্চ এর পাশের ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারে ‘৫ডি’ নম্বরের ২৬তম স্প্যানটি বসানো হয়। তখন সেতুর ৩৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। ২৭ তম স্প্যান বসে যাওয়ায় পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হতে আর মাত্র বাকি থাকছে ১৪টি স্প্যান। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পদ্মাসেতুতে ৪১টি স্প্যান বসবে। এরইমধ্যে মাওয়ায় পৌঁছে গেছে ৩৯টি স্প্যান। বাকি রয়েছে মাত্র ‘২ই’ ও ‘২এফ’ নম্বরের দুইটি মাত্র স্প্যান।

চীনে করোনাভাইরাসের কারণে এই দু’টি স্প্যান বসাতে বিলম্ব হচ্ছিল। তৈরি হয়ে যাওয়া এ স্প্যানের বাকি ছিল শুধু পেইন্টিংয়ের কাজ। চীনের উহানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার কারণে এখন এ কাজ চলছে পুরোদমে। তাই আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এই দু’টি স্প্যানও মাওয়ায় এসে পৌঁছাবে।

পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, এ দুই স্প্যান ২০ এপ্রিলের দিকে মাওয়ার পৌঁছানোর টার্গেট রয়েছে। শিগগিরই স্প্যান দুটি বাংলাদেশের উদ্দেশে শীপমেন্ট করা হবে।

তিনি জানান, চৈনিক নববর্ষের ছুটিতে চীনে গিয়ে যেসব কর্মীরা আটকে ছিলেন এদের অনেকে ফিরে এসে ‘সঙ্গনিরোধ’ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর কাজে যোগ দিয়েছেন। এছাড়াও ওয়েল্ডিংয়ের কাজে ছয়টি রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ৮ মার্চ থেকে ছয়টি রোবট সফলভাবে কাজ করছে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) নিজস্ব এই রোবটগুলো চীন থেকে নিয়ে আসে।

পদ্মাসেতুর আরেক সুখবর হচ্ছে, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) টি গার্ডার বসানো শুরু হয়েছে। গত তিনদিন ধরে এ টি গার্ডার স্থাপন হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮টি টিগার্ড স্থাপন করা হয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এর আগে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কে টিগার্ডার স্থাপন করা হয়। এই প্রান্তে টিগার্ডার স্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

২৭তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মাসেতুর ৪ হাজার ৫০ মিটার বা ৪.০৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো। এর আগে ১০ মার্চ ২৬তম স্প্যানটি বসানো হয়।

পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, দেশে করোনাভাইরাস আতঙ্ক থাকলেও পদ্মাসেতুর কাজ থেমে নেই। শুক্রবার স্প্যানটি ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ পিলার দুটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের সহায়তায় শনিবার ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন সেতুর ২৭ ও ২৮ নম্বর পিলারের উপর বসানো হয়। প্রথমে ভাসমান ক্রেনটি নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। তারপর দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর রাখা হয় স্প্যানটিকে। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এভাবেই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হলো পিলারের উপর।

তিনি আরো জানান, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আরো দুটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে তাদের প্রস্তুতিও চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে পদ্মাসেতু প্রকল্পের দেশীয় শ্রমিকদের বড় একটি অংশ ছুটিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীও রয়েছে। এখন শ্রমিকরা আগে জোড়া লাগানো স্প্যান রং করার কাজ করছে। তারা যথেষ্ট সুরক্ষিত হয়েই সেতুর কাজ করছে।

দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, পদ্মাসেতুতে বসানোর জন্য এখনো পাঁচটি স্প্যান প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে দুটিতে রঙ করার কাজ চলছে। শ্রমিকরা ছুটি থেকে ফিরে এলে এ কাজের গতি আরো বাড়বে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি হবে দ্বিতল, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)