আশাশুনিতে প্রধান শিক্ষকের নির্মম বেত্রাঘাতে জখম জিবা ১৫ দিনেও সুস্থ হয়নি

স্কুলে বেতের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শিক্ষার্থীকে প্রহার, মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন, ভীতি প্রদর্শন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সরকারি নিয়মনীতির থোড়াই তোয়াক্কা করেন উপজেলার কাদাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম।
কাদাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে শিক্ষক কামরুল ইসলামের বেত ও লাঠির ব্যবহার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মুখ খিস্তির কারনে শিক্ষার্থীরা তাকে ব্যাপক ভাবে ভয় পেয়ে আসছে। অনেক শিশু শিক্ষকের শিক্ষক সুলভ আচরণের পরিবর্তে অযাচিত ও নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো কার্যকলাপের কারনে স্কুলে যেতে অনীহা দেখাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের শিশুবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। অনেকবার তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও রূঢ় আচরনের ঘটনা ঘটেছে বিদ্যালয়ে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ অভিভাবকরা তার আচরনের কড়া প্রতিবাদ করতে সাহস পাননা। বাধ্য হয়ে কিছু কিছু অভিভাবক সন্তানের উপর অবিবেচিত মারপিট ও শাসনের নামে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টির কারণ জানতে গেলে ম্যানেজে পারদর্শী প্রধান শিক্ষক এসএমসি সভাপতি ও বন্ধু শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে অপরাধ মিটিয়ে নিয়েছেন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্কুলের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী কাদাকাটি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের কন্যা সোমাইয়া খাতুন জিবাকে কঞ্চির লাঠি দিয়ে নির্দয় ভাবে পিটান প্রধান শিক্ষক। লাঠির নির্মম আঘাতে জিবার হাতের তালু রক্তাক্ত জখম হয়। গরীব পিতা প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। শিক্ষক বা স্কুল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ ৫দিনে তাদেরকে শান্তনা জানাতেও আসেননি। মেয়ের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মেয়েকে নিয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি আইনের আশ্রয় নিতে আশাশুনিতে যান। খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক সভাপতিসহ অন্যদের ম্যানেজ করে তাকে আশাশুনি থেকে ফিরিয়ে আনান। ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক জিবাদের বাসায় যান, কিন্তু শান্তনা দেওয়া বা ভুল স্বীকার করা পড়ে থাক, উল্টো মেয়ে কোন স্কুলে পড়াবেন—, বাড়াবাড়ি করবেন না এমন আস্ফালন করে আসেন। ২ সপ্তাহ পার হয়েছে, তারা স্থানীয় এক চিকিৎসকের থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন বটে, কিন্তু এখনো তার ক্ষতস্থান পুরোপুরি ভাল হয়নি। তার অবস্থা দেখে পাশের ছেলেমেয়েরা ঐ স্কুলে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অভিভাবকদের মাঝেও বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, কিছুদিন আগে ৩য় শ্রেণির ছাত্র বর্তমানে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সাকিবকে নির্মমভাবে পিটিয়েছিলেন এই প্রধান শিক্ষক। সাকিবের মা ছেলের করুন দশা দেথে স্থির থাকতে পারেননি, সাথে সাথে স্কুলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষক একই ভাবে ম্যানেজের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আচরনের পরিবর্তন হয়নি। একের পর এক ছাত্র পিটানোর ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। স্কুলের মায়শা, মারিয়া. জুইসহ অনেক শিক্ষার্থী তার হাতে লাঠিপেটার শিকার হয়েছে। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলামের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, ‘হাতের লেখার ঘটনা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে’ বলে মারপিটের কথা স্বীকার করলেও স্কুলে বেতের ব্যবহার করা হয়না, ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য একটি মহল চেষ্টা করছে বলে তিনি দাবী করেন।
এভাবে কতদিন চালাবেন প্রধান শিক্ষক তার অনৈতিক কার্যকলাপ। সরকারি নিয়ম নীতিকে বেমালুম ভুলে গিয়ে বা তুয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অন্যায় করার পরও কেন তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করেন না? এভাবে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলবে? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)