ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া ও নেয়ার চুক্তিপত্র যেভাবে করতে হয়

নিরাপদ ভাবে থাকতে নিশ্চয় বাসা ভাড়া নেয়ার প্রয়োজন হয়! ঠিক তেমনি যিনি বাসা ভাড়া দেন, তার নিজেরও নিরাপত্তার দরকার হয়। তাইতো আইনগতভাবে এখন তৈরি হয়েছে চুক্তিপত্র।

এখন ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া দেয়া এবং নেয়ার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র করতে হয়। তাইতো ফ্ল্যাটের মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে চুক্তিপত্র হয়, সে সম্পর্কে উভয়ের স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য আজকের আয়োজনে সেই চুক্তিপত্রের নমুনা তুরে ধরা হলো-

ফ্ল্যাট/বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র (নমুনা)

নাসিমা, পিতা: সোলাইমান, সাং-৩০/২, হাজী ওসমান গণি রোড, থানা-বংশাল পেশা-গৃহিণী, ধর্ম-ইসলাম, জাতীয়তা-জন্মসূত্রে বাংলাদেশী।——————— প্রথম পক্ষ/বাড়ি/ফ্ল্যাটের মালিক

মোঃ মারুফ উদ্দিন, পিতা-বশির উদ্দিন, সাং-সোহানপুর, থানা-আশুগঞ্জ, জেলা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া, পেশা-ব্যবসা, ধর্ম-ইসলাম, জাতীয়তা-জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। ———–দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়া

পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করিয়া অত্র ফ্ল্যাট/বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্রের বয়ান আরম্ভ করিলাম। যেহেতু, আমি প্রথম পক্ষ নিম্ন তফসিল বর্ণিত বাড়ির মালিক ও দখলকার নিয়ত থাকিয়া ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি। আমি মালিক পক্ষ প্রকাশ্যে মাসিক ভাড়াটিয়া হিসাবে ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব বা ঘোষণা করিলে পর আপনি দ্বিতীয় পক্ষ উক্ত প্রস্তাবে রাজি ও সম্মত হইলে পর আমরা উভয় পক্ষ নিম্নলিখিত শর্তাধীনে অত্র ফ্ল্যাট/বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র সম্পাদন করিলাম।

শর্তাবলি

১. অত্র ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তিপত্র অদ্য ———– ইং তারিখে হইতে আরম্ভ হইয়া আগামী ———- ইং তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ —– বছরের জন্য বলবৎ থাকিবে।

২. প্রথম পক্ষ চুক্তিকালীন সময়ে দ্বিতীয় পক্ষের নিকট হইতে জামানত বাবদ অগ্রিম ———- টাকা গ্রহণ করিয়া দ্বিতীয় পক্ষকে ফ্ল্যাটটির দখল বুঝাইয়া দিবেন।

৩. প্রকাশ থাকে যে, দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়া মেয়াদান্তে ফ্ল্যাট/বাসা ছাড়িতে মনস্থ করিলে তাহার জামানতের ———– টাকা প্রাপ্তি রশিদের (দ্বিতীয় পক্ষ তাহার প্রদানকৃত টাকা বুঝিয়া পাইয়াছে মর্মে) মাধ্যমে প্রথম পক্ষ ফেরত দিতে বাধ্য থাকিবেন। অগ্রিম প্রদানকৃত টাকা হইতে ভাড়া বাবদ কোনোরুপ টাকা কর্তন হইবে না।

৪. ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ———- টাকা মাত্র। প্রতিমাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ——– তারিখের মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষ প্রথম পক্ষকে পরিশোধ করিবেন। ১ম পক্ষ উক্ত ভাড়া প্রাপ্ত হইয়া ২য় পক্ষকে ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ করিবেন।

৫. অত্র ফ্ল্যাট/বাসা ভাড়ার চুক্তির মেয়াদকালের মধ্যে ফ্ল্যাটের কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হইলে ফ্ল্যাট ছাড়িবার সময় দ্বিতীয় পক্ষ নিজ খরচে উহা মেরামত করিয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন। যদি মেরামত করিয়া না দেন তবে জামানতের টাকা হইতে প্রথম পক্ষ কাটিয়া রাখিয়া বাকি টাকা এককালীন ফেরত প্রদান করিবেন।

৬. দ্বিতীয় পক্ষ ফ্ল্যাট/বাসার সৌন্দর্যের জন্য প্রয়োজনীয় ডেকোরেশন দরকার মনে করিলে তাহা আলোচনা সাপেক্ষে নিজ খরচে করিবেন। ইহাতে ফ্ল্যাটের কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হইলে উহা দ্বিতীয় পক্ষ নিজ খরচে মেরামত করিয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন।

৭. দ্বিতীয় পক্ষ ভাড়াটিয়া তফসিল বর্ণিত ফ্ল্যাটে কোনো অবৈধ বা অসামাজিক কার্যকলাপ করিতে পারিবেন না। অবৈধ কোনো কার্য করিলে তাহার জন্য দ্বিতীয় পক্ষ দায়ী থাকিবেন এবং অত্র ফ্ল্যাট হইতে উচ্ছেদযোগ্য হইবেন।

৮. বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস ও পানি বিল মালিক পক্ষ বহন করিবেন।

৯. প্রথম পক্ষ বিশেষ কোনো প্রয়োজনে ——– মাসের নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করার অধিকার সংরক্ষণ করেন এবং দ্বিতীয় পক্ষ ফ্ল্যাট ছাড়িয়া দেয়ার ক্ষেত্রে একই অধিকার সংরক্ষণ করিবেন। এইক্ষেত্রে কেহ কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ দাবি করিতে পারিবেন না।

১০. চুক্তিকালীন সময়ে যদি ফ্ল্যাটের কোনো কিছু (যেমন- বাথরুম ফিটিংস, জানালার কাচঁ, গ্রীল ইত্যাদি) ক্ষতি হয় তাহা দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়া নিজ খরচে ঠিক করিয়া লইবেন।

১১. দ্বিতীয় পক্ষ চুক্তির মেয়াদকালে ফ্ল্যাট বর্ধিতকরণ বা সংরক্ষণ বা অন্য কাহাকেও উক্ত ফ্ল্যাট ভাড়া বা সাবলেট বা উপ-ভাড়া দিতে পারিবেন না।

১২. প্রথম পক্ষ/মালিক এবং দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়ার মধ্যে যদি ভবিষ্যতে কোনরুপ মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে উভয় পক্ষ একত্রে বসিয়া তাহা মীমাংসা করিবেন এবং কোনোভাবে প্রথম পক্ষ ও দ্বিতীয় পক্ষ তৃতীয় পক্ষের দ্বারা বিরোধ মীমাংসা করিতে পারিবেন না। আমরা উভয় পক্ষ এই শর্ত গ্রহণ করিয়া মানিয়া নিলাম।

১৩. প্রথম পক্ষ যে অবস্থায় দ্বিতীয় পক্ষকে ফ্ল্যাট বুঝাইয়া দিয়াছেন মেয়াদান্তে দ্বিতীয় পক্ষ প্রথম পক্ষকে সেই অবস্থায় উক্ত ফ্ল্যাট হস্তান্তর করিতে বাধ্য থাকিবেন।

১৪. যেহেতু, অত্র চুক্তিপত্রের মেয়াদ মৌখিকভাবে শুরু হইয়াছে গত ———– ইং তারিখ হইতে কিন্তু অত্র চুক্তিপত্র লিখিতভাবে সম্পাদন করা হইল অদ্য ———– ইং তারিখে।

১৫. অত্র চুক্তিপত্রে যেসব শর্ত উল্লেখ করা হয় নাই তাহা দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক আমরা উভয় পক্ষ মানিয়া চলিতে বাধ্য থাকিব।

তফসিল

জেলা—–, থানা—–, —– সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং নং—-, ————- তলার ——- পাশের —– টি রুমসহ —– ডাইনিং স্পেসের একটি ফ্ল্যাট যাহা মাসিক ভাড়ায় ভাড়াকৃত বটে।

আমরা উভয় পক্ষ অত্র চুক্তিপত্র পড়িয়া , মর্ম সম্যক অবগত হইয়া, সুস্থ শরীরে ও মস্তিষ্কে, স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় সাক্ষীগণের মোকাবেলায় অত্র চুক্তিপত্র দলিলে আমাদের নিজ নিজ নাম স্বাক্ষর করিলাম।

সাক্ষীগণের স্বাক্ষর:
১। ……………………………………….

২। ………………………………………..

৩। ………………………………………..

১।————-প্রথম পক্ষ/মালিকের স্বাক্ষর

৩।————-দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়ার স্বাক্ষর

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)