দেবহাটায় টিসিবি’র ৩৫ টাকা মূল্যের ৩০ বস্তা পেঁয়াজ পাচারকালে উদ্ধার

দেবহাটায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র ৩৫ টাকা মূল্যের সরকারি পেঁয়াজ জণসাধারনের মাঝে সুষ্ঠভাবে বিক্রি না করে অতিমুল্যে অন্যত্র বাজারে বিক্রির জন্য পাচারকালে ৩০ বস্তা পেঁয়াজ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত টিসিবি’র দুর্নীতিবাজ ডিলার সুভাষ ঘোষ ওরফে বাবলুকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন লিখিত ভাবে পেঁয়াজ পাচারের সাথে জড়িত টিসিবি’র ডিলার বাবলুকে শোকজ করেন।

পাশাপাশি সুভাষ ঘোষ ওরফে বাবলুর নামে থাকা টিসিবি’র লাইসেন্স বাতিল সহ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের নির্দেশে বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন ইউএনও।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে সখিপুরের ঈদগাহ বাজারের গোডাউন থেকে ভ্যান ভর্তি টিসিবির পেঁয়াজ পাচারকালে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনের তৎপরতায় দলীয় নেতাকর্মীরা গাজীরহাট বাজার থেকে পাচারকৃত ৩০ বস্তা পেঁয়াজ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত ৩০ বস্তা টিসিবি’র পেঁয়াজ সখিপুর বাজারে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা কেজি দরে জনসাধারণের মাঝে বিক্রির নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন। সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন জানান, ২০০৯ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাতক্ষীরা-০৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপির সুপারিশে দেবহাটা উপজেলার জন্য টিসিবি’র লাইসেন্স সহ ডিলারশিপের অনুমতি করিয়ে নেয় দেবহাটার মাঘরী গ্রামের কার্তিক চন্দ্র ঘোষের ছেলে সুভাষ ঘোষ ওরফে বাবলু।

ডিলারশিপ পাওয়ার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সরকারের ব্যাপক অর্থ ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহকৃত কম মূল্যের টিসিবি’র চিনি, তেল, ডাল, ছোলা, সেমাই, চিড়ে সহ বিভিন্ন মালামাল জনসাধারণের মাঝে সুষ্ঠভাবে বিক্রি না করে বিগত ১০ বছর ধরে এসব মালামাল উচ্চ মুল্যে বাইরের বিভিন্ন বাজারে পাচার করে এসেছে ডিলার বাবলু। শুধু তাই নয় দেশের অন্যান্য স্থানের মতো দেবহাটা উপজেলাতেও যে প্রতিবছর টিসিবি’র বিভিন্ন মালামাল পৌছায় গত ১০ বছরে তা জানতে পারেনি সাধারণ মানুষ।

এমনকি টিসিবি থেকে জনগণের জন্য কমমুল্যে কি কি সরবরাহ হতো কিংবা মালামাল গুলো কখন বাবলুর গোডাউনে আসতো এবং কখন সেসব মালামাল গোডাউন থেকে পাচার হয়ে যেত তাও জানতো না কেউ। মূলত টিসিবি’র লাইসেন্সের বদৌলতে সরকারের ভর্তুকি দেয়া মালামাল জনসাধারণের নাম করে কম দামে নিয়ে এসে সেগুলো উপজেলার অভ্যন্তরীণ ও আশপাশের বাজারে পাচার পরবর্তী গত দশ বছর ধরে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিলার বাবলু। আর টিসিবির এসব মালামাল পাচারের জন্য বাবলু গড়ে তুলেছে কয়েকজনের একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট। এদের মধ্যে বাবলুর ভাই সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন সহ রয়েছে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও।

একসময়ে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো যার, সেই বাবলু টিসিবি’র লাইসেন্সের বদৌলতে ১০ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী পেঁয়াজের বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারীভাবে সাতক্ষীরাতে ৩৫-৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়।

তাৎক্ষনিক ভাবে দেবহাটাতেও টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রির জন্য দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন অনুসন্ধান করে ডিলার বাবলুকে আবিষ্কার করেন। সেই থেকে মাস খানেক হলো টিসিবি’র ডিলার হিসেবে বাবলুকে চিনতে শুরু করেছে উপজেলার মানুষ। উপজেলাতে বিক্রির জন্য এরমধ্যে দু’বারে ১৩ টন টিসিবি’র পেঁয়াজ নিয়ে এসেছে বাবলু। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিতে ইউএনও বা সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়ে সোমবার রাতে ডিও ছাড়াই সাতক্ষীরা থেকে আরো ৭টন টিসিবি’র পেঁয়াজ নিয়ে আসে সে। ওই রাতেই পাচারের জন্য গাজীরহাট বাজারের এক আওয়ামী লীগ নেতার টিসিবি’র গোডাউনের নাম করে ২৩ বস্তা পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলে ডিলার বাবলু।

মূলত সে টিসিবি’র যাবতীয় মালামালের সিংহভাগ দেবহাটার মাঘরী গ্রামের মৃত মোবারক হালদারের ছেলে দাউদের নিয়ন্ত্রণাধীন নলতার একটি ব্যাক্তি মালিকানাধীন গোডাউনে পাচার করতো। মঙ্গলবার দুপুরে আবারো টিসিবি’র অবশিষ্ট পেঁয়াজ থেকে ৩০ বস্তা পেঁয়াজ গাজীরহাট বাজারের ওই আওয়ামী লীগ নেতার গোডাউনে পাঠানোর নাম করে ডিলার বাবলু নলতায় দাউদের নিয়ন্ত্রণাধীন গোডাউনে পাচার করার সময় পেঁয়াজ গুলো উদ্ধার করা হয়। পরে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতনের জিজ্ঞাসাবাদে টিসিবি’র পেঁয়াজ পাচারের বিষয়টির সত্যতা প্রমাণিত হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)