ডায়াবেটিস: খাদ্য নির্দেশিকা

যে কোনো সুষম খাদ্য পরিকল্পনার জন্য একটি খাদ্য নির্দেশিকা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে পাওয়া যাবে শরীরের চাহিদামাফিক সব পুষ্টি উপকরণ। হৃদেরাগ ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমে। অনেকে ইউএসডিএ খাদ্য নির্দেশিকা ‘মাই পিরামিড’ ব্যবহার করেন সুষম খাদ্যের জন্য। ডায়াবেটিস রোগীরাও ‘মাই পিরামিডের’ সাহায্য নিতে পারেন এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শে এতে কিছু পরিবর্তন এনে কাজে লাগাতে পারেন।

খাদ্য নির্দেশিকা

lযে পরিমাণ শ্বেতসার ও শর্করা দিনের জন্য প্রয়োজন একে ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন বেলায় খাওয়া যেতে পারে। এক বেলা বেশি শর্করা খাওয়া ঠিক হবে না। খাদ্য পরিকল্পনা আগেভাগে করে নিলে ভালো, যাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে একসঙ্গে খাবার খাওয়া যায়।

lখাবারে যেন হরেক রকম খাদ্য এবং খাদ্যে যেন থাকে বৈচিত্র্য। lআহারের পর রক্তের সুগার মাপা ভালো। এতে বোঝা যায় এর ওপর খাদ্যের প্রভাব কী পড়ল।

lগর্ভবতী নারী বা স্তনদানকারী নারী যার ডায়াবেটিস, তার পুষ্টি চাহিদা গর্ভবতী নারী যার ডায়াবেটিস নেই, একই সমান। গর্ভবতী নারীর সব পুষ্টি প্রয়োজন। বিশেষ চাহিদা লৌহ ও ফলিক এসিড, প্রয়োজনে এর সাপ্লিমেন্ট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসে দিনে বাড়তি ৩০০ ক্যালোরি প্রয়োজন। নিয়মিত বেলার আহার ও নাস্তা চাই যাতে গর্ভকালে ও স্তন্যদানকালে রক্তের সুগার কমে না যায়। পুষ্টিবিদের পরামর্শও নেয়া ভালো।

খাদ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করলে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্ল্যান হয় সহজ

lপ্রতিটি গ্রুপের খাদ্যের মধ্যে একই রকম পুষ্টি যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের মধ্যে থাকে একই পরিমাণ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন ডি ও রাইবোফ্লাডিন। রক্তের সুগারের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে শর্করা। এক বেলাতে যত বেশি শর্করা খাওয়া যাবে তত ওপরে উঠবে রক্তের সুগার মান। শর্করা সারাদিনের খাবারে নানা বেলায় বিতরণ করে খেলে রক্তের সুগার ঠিক রাখা যায়। প্রতিদিন প্রতিটি খাদ্য গ্রুপ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত আহার খুব দরকার।

নিয়মিত আহার

lদিনে রাতে আহারকে ছোটো ছোটো খাবারে ভাগ করে নিলে ভালো।

চার-ছয়টি বেলার খাবার ও নাস্তা।

একই সঙ্গে পরিকল্পনা করুন নানা বেলার খাবারের। বিভিন্ন খাদ্য গ্রুপের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ভালো। যেমন—শস্য, শাকসবজি, ফল,

তেল, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, মাংস ও বিনস ইত্যাদি।

আহারের সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু নিয়মনীতি থাকা ভালো

lসক্রিয় থাকা, ব্যায়াম করা

lসিমিত আহার করা। প্রতিটি গ্রুপের পছন্দগুলো যেমন হয় স্বাস্থ্যসম্মত। চর্বি বা চিনি যত কম যোগ করা যায় তত ভালো।

lব্যক্তিকেন্দ্রিক মাইপিরামিড পাওয়া যায় ওয়েব সাইটে : বয়স, জেন্ডার এবং শরীরচর্চার পরিমাণ ভেবে খাদ্য পরিকল্পনা হয় এবং ওয়েবসাইট থেকে তা পাওয়া যায়। lপরিমাণ : যেসব খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন নির্দেশ আছে সেখান থেকে বেশি, যেখানে কম খেতে হবে বলা হচ্ছে সেখান থেকে কম খাওয়া ভালো। পিরামিড দেখলে বোঝা যাবে। বৈচিত্র্য : সবগুলো খাদ্য গ্রুপ থেকে আহার করা উচিত। ক্রমান্বয়ে উন্নতি : ডায়েট ও লাইফস্টাইল উন্নতি করা উচিত ধীরে-ধীরে, ধাপে-ধাপে।

lএমনভাবে খাদ্য পরিকল্পনা করতে হবে যাতে সব গ্রুপ থেকে আহার করা হয়। পুষ্টিবিদ পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারেন।

lপ্রাতঃরাশে সাধারণত থাকবে দুধ, ফল ও শস্য গ্রুপ থেকে খাবার। মাংস, সবজিও মাঝে মধ্যে খাওয়া যেতে পারে। মধ্যাহ্ন আহার ও নৈশ আহারে খাবার থাকবে সব খাদ্য গ্রুপ থেকে।

lস্ন্যাকস থাকবে এক বা একাধিক গ্রুপ থেকে। (যেমন ফল, রুটি)

lদুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য হলো আলাদা গ্রুপ। দুধ সহ্য না হলে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও অন্যান্য পুষ্টি আহরণ করতে হবে অন্যান্য খাদ্য থেকে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া ভালো।

lপরিমিত পরিমাণে খাওয়া

উচিত। যে সার্ভিং সাইজ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে একে অনেক সময়

বড়ো মনে হতে পারে। যেমন প্লেট ভর্তি স্ন্যাগেটি (প্রায় দুই কাপ) খাওয়া মানে শস্য গ্রুপ থেকে ৬টি সার্ভিং খাওয়া হলো। সার্ভিং সাইজ সম্পর্কে ধারণা থাকা ভালো। যেমন—এক আউন্স, তিন আউন্স, অর্ধেক কাপ, পুরো কাপ, ১ চা চামচ, ১ টেবিল চামচ। খাওয়ার আগে ও খাওয়ার ১-২ ঘণ্টা পর রক্তের সুগার মাপলে বোঝা যাবে রক্তের সুগারের ওপর খাওয়ার প্রভাব কী পরিমাণ পড়ল। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস

বারডেম, ঢাকা

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)