২০১৯ যেন হ্যাটট্রিকের বছর
পরপর তিন বলে তিন উইকেট- অর্থাৎ হ্যাটট্রিক। যেকোনো বোলারের পুরো ক্যারিয়ারেরই অন্যতম একটি অর্জন এই হ্যাটট্রিক। যা নেই অনেক কিংবদন্তি বোলারেরও। তবে ক্যারিয়ারের মাত্র অষ্টম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই জাদুকরী এ অর্জন পেয়ে গেছেন ভারতের ডানহাতি পেসার দ্বীপক।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ইনিংসের শেষ তিনটি উইকেট নিয়ে এ কীর্তি গড়েছেন চাহার। তার হ্যাটট্রিকটি হয়েছে দুই ওভার মিলিয়ে। ১৮তম ওভারের শেষ বলে শফিউল ইসলাম এবং ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলে মোস্তাফিজ ও আমিনুল আউট হলে হ্যাটট্রিক পূরণ হয় চাহারের।
তার এই হ্যাটট্রিকটি সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২তম। বিশ্বের ১১ জন বোলার মিলে করেছেন এই ১২টি হ্যাটট্রিক। একাই জোড়া হ্যাটট্রিক রয়েছে লাসিথ মালিঙ্গার। মজার বিষয় হলো, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ১২ বছরে হ্যাটট্রিক হয়েছিল মাত্র ৬টি। সেখানে চলতি বছরে এরই মধ্যে হ্যাটট্রিক হয়েছে আরও ৬টি।
সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে ২ ও টেস্টে আরও ১টিসহ চলতি বছর মোট ৯টি হ্যাটট্রিক দেখেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এছাড়া আইসিসি স্বীকৃত লিস্ট এ ম্যাচে ৩টি এবং টি-টোয়েন্টিতে আরও ৬টি হ্যাটট্রিক হয়েছে চলতি বছর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ চলতি বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯টি এবং আইসিসি স্বীকৃত ক্রিকেটে অন্তত আরও ৯টি হ্যাটট্রিকের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। যা কি না কোনো নির্দিষ্ট বছরের জন্য বিশ্ব রেকর্ড। এর আগে কখনোই কোনো বছরে এতগুলো হ্যাটট্রিক দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব।
কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে চলতি বছরের প্রথম হ্যাটট্রিকটা করেন আফগানিস্তানের লেগস্পিনার রশিদ খান। তিনি শুধু হ্যাটট্রিকই করেননি, নিয়েছিলেন চার বলে চারটি উইকেট। ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২ রানে জেতা ম্যাচে ১৬তম ওভারের শেষ বলে কেভিন ওব্রায়েন এবং ১৮তম ওভারের প্রথম তিন বলে যথাক্রমে জর্জ ডকরেল, শন গেটকেট এবং সিমি সিংকে ফেরান রশিদ খান।
রশিদের দেখাদেখি সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টানা চার বলে চারটি উইকেট নেন শ্রীলঙ্কার তারকা পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। তিনি ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ চার বলে যথাক্রমে ফেরান কলিন মুনরো, হ্যামিশ রাদারফোর্ড, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম এবং রস টেলরকে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি এটি ছিলো মালিঙ্গার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক।
এরপর চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ডের পাতায় নাম তুলেছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে), ওমানের লেগস্পিনার খাওয়ার আলি (নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে), পাপুয়া নিউগিনির পেসার নরম্যান ভানুয়া (বারমুডার বিপক্ষে) আর সবশেষ ভারতীয় পেসার দ্বীপক চাহার (বাংলাদেশের বিপক্ষে)।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ৬টি হ্যাটট্রিকে পাশাপাশি চলতি বছর হ্যাটট্রিক হয়েছে ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটেও। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে হওয়া একমাত্র হ্যাটট্রিকটি করেছেন ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। তিনি পরপর তিন ডেলিভারিতে সাজঘরে পাঠান ড্যারেন ব্রাভো, শামার ব্রুকস ও ড্যারেন ব্রাভোকে।
আর ওয়ানডে ক্রিকেটে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত হয়েছে দুইটি হ্যাটট্রিক। এ দুইটিই ছিলো বিশ্বকাপে। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট এবং পরে আফগানিস্তানের সঙ্গে সাউদাম্পটনে ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামি করেন এ কীর্তি। বোল্টের হ্যাটট্রিকের শিকার ছিলেন উসমান খাজা, মিচেল স্টার্ক ও জেসন বেহরেনডর্ফ। অন্যদিকে শামি পরপর তিন বলে ফেরান মোহাম্মদ নবী, আফতাব আলম ও মুজিব উর রহমানকে।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ৪৪টি, ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৮টি এবং টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক হয়েছে মোট ১২টি। এর মধ্যে টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন অলক কাপালি এবং সোহাগ গাজী। ওয়ানডেতে এ কীর্তি দেখিয়েছেন শাহাদাত হোসেন রাজীব, রুবেল হোসেন, তাইজুল ইসলাম এবং তাসকিন আহমেদ। টি-টোয়েন্টিতে এখনও পর্যন্ত হ্যাটট্রিক করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলার।
এছাড়া টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ব্লিগনট ও নিউজিল্যান্ডের জেমস ফ্রাংকলিন। ওয়ানডেতে করতে পেরেছেন শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস, দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা ও ভাসের স্বদেশি শেহান মাদুশাঙ্কা। আর টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম হ্যাটট্রিকই হয় বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০০৭ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে যেটি করেন অস্ট্রেলিয়ান গতি তারকা ব্রেট লি। এরপর শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা এবং ভারতের দ্বীপক চাহার করলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি হ্যাটট্রিক।