জানা-অজানা কম্পিউটার ভাইরাস

কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন বিষয়টি তাদের জন্য সবচেয়ে ঝামেলার, তাহলে এক কথাতেই বোধহয় এর উত্তর হবে ভাইরাস। হ্যাঁ, ভাইরাসের জ্বালায় জ্বলেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনেক সাবধানে এবং সতর্কতার সাথে কম্পিউটার ব্যবহার করার পরেও অনেকেই আক্রান্ত হয়ে যান ভাইরাস দ্বারা।

অফলাইনে পেনড্রাইভ কিংবা এক্সটার্নাল স্টোরেজ ডিভাইসের পাশাপাশি ইন্টারনেটেও ইমেইল কিংবা ওয়েবলিংক থেকেও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন ভাইরাসে। ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাই সর্বদাই সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন। আর এর জন্য অ্যান্টিভাইরাস কিংবা অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজন ভাইরাসকে চিনতে শেখা।

সবদিক থেকেই যেমন প্রযুক্তি বিশ্বের উন্নয়ন ঘটছে, তেমনি ভাইরাসও এগিয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস। প্রথম প্রজন্মের ভাইরাসের তুলনায় বর্তমানের নতুন ভাইরাসগুলো আরও বেশি স্মার্ট। প্রতিনিয়ত চেহারা বদলালেও ভাইরাসের কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণী তো রয়েছেই। তথ্যপ্রযুক্তি’র পাঠকদের জন্য ভাইরাসের কিছু রকমফের নিয়ে আলোচনা করা হলো এই লেখায়।

বুট সেক্টর ভাইরাস

মাইক্রোসফটের এমএস-ডস অপারেটিং সিস্টেম যখন থেকে জনপ্রিয় হতে শুরু করে, তখন থেকেই যাত্রা শুরু করে বুট সেক্টর ভাইরাস। এই ধরনের ভাইরাস কম্পিউটারের বুট সেক্টরে প্রবেশ করে এবং কম্পিউটারকে বুট করতে বাঁধা দেয়। এর আক্রমণের একটা পর্যায়ে এসে কম্পিউটার বুট করতে ব্যর্থ হতে থাকে এবং গোটা অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাশ হয়ে যায়। এমএস-ডস এবং উইন্ডোজের শুরুর দিকে বুট সেক্টর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যম ছিল ফ্লপি ডিস্ক। তখনকার দিনে অবশ্য ফ্লপি ছাড়া এক্সটার্নাল ডাটা ডিভাইস হিসেবে অন্য কিছু ছিলও না। বায়োস থেকে রিমুভেবল ডিভাইসের মাধ্যমে বুট করার প্রক্রিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে বুট সেক্টর ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

ফাইল ভাইরাস

ভাইরাস বা পিসির জন্য ক্ষতিকর প্রোগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত রূপটিই হচ্ছে ফাইল ভাইরাস। কম্পিউটারের বিভিন্ন এক্সিকিউটেবল ফাইল হিসেবেই সাধারণত থাকে এই ধরনের ভাইরাস। এই ফাইলগুলোকে কোনোভাবে এক্সিকিউট করা হলে সেগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং পিসির বিভিন্ন ফাইলকে যথাসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ভাইরাসগুলো যেসব ফাইলকে আক্রমণ করে, সেগুলোকে পুরোপুরি কিংবা আংশিক ওভাররাইট করে কিংবা নষ্ট করে ফেলে। *.exe, *.bat, *.com and *.vbs প্রভৃতি ফরম্যাটেই সাধারণত থাকে এই ভাইরাসগুলো। এক্সিকিউটেবল ফাইলগুলোর স্বয়ংক্রিয় চালু বন্ধ করে এগুলো থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

ম্যাক্রো ভাইরাস

ভাইরাস হিসেবে ম্যাক্রো ভাইরাসও বহুল ব্যবহূত। মাইক্রোসফট অফিস বা এক্সেলের মতো প্রোগ্রামগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ম্যাক্রো প্রোগ্রামের ব্যবহার রয়েছে, যেগুলো মূলত নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা ও কাজের সমষ্টি। এই ধরনের ম্যাক্রোর ছদ্মবেশে পিসিকে আক্রমণ করে থাকে ম্যাক্রো ভাইরাস। *.do*, *.xl* and *.ppt প্রভৃতি কমন ফাইল ফরম্যাট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে আক্রমণ করে থাকে ম্যাক্রো ভাইরাস। বিভিন্ন ধরনের ম্যাক্রো বিভিন্নভাবে কাজ করলেও এরা মূলত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস

বেশিরভাগ ভাইরাসই পিসিকে একটি উপায়েই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে কিছু ভাইরাস রয়েছে, যেগুলো কেবল একটি উপায়ে নয়, বরং একাই একাধিক উপায়ে আক্রমণ করে পিসিতে। এই ভাইরাসগুলোকেই বলা হয়ে থাকে মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস। এগুলো হয়ত কোনো একটি ফাইলের প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে। আবার একইসাথে এই অন্য কোনো ফাইলকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। অপারেটিং সিস্টেমকেও আক্রমণ করতে পারে এই ধরনের ভাইরাস।

ওয়েবস্ক্রিপ্টিং ভাইরাস

বিভিন্ন ওয়েবসাইট যথাযথভাবে চালু করতে হলে ভিডিও বা অডিও চালু কিংবা এই ধরনের কিছু কাজের জন্য জটিল প্রোগ্রাম চালুর প্রয়োজন হয়। এর জন্য নানা ধরনের অ্যাড-অনস বা প্লাগ-ইনস ইনস্টলের প্রয়োজন হতে পারে ব্রাউজারে। এসব প্লাগ-ইনস বা অ্যাড-অনসের ছদ্মবেশেই ওয়েবস্ক্রিপ্টিং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে পিসিতে। অনেক ওয়েবসাইটই রয়েছে কেবল এই ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আবার অনেক ভালো ওয়েবসাইটেও প্লাগ-ইনস বা অ্যাড-অনসের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)