পূজায় হরেক পদের নাড়ু, মোয়া ও লাড্ডু

পূজা মানেই হরেক পদের নাড়ু- লাড্ডুর সমাহার। বাঙালিদের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি জাতীয় এসব পদ থাকবিই। ছোট বড় সবাই এসব মিষ্টান্ন পছন্দ করেন।   আবার অনেক সময় বাচ্চারা বায়না করে থাকে এই মজার নাড়ু খাওয়ার জন্য। শুধু পূজা নয় বরং বিভিন্ন সময় তৈরি করে নিতে পারেন এসব নাড়ু বা লা্ডু। রইলো সহজ রেসিপি-

* মাওয়া লাড্ডু  

উপকরণ: মাওয়া ২ কাপ, সেদ্ধ গাজর ১ কাপ, ঘি ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, এলাচ গুঁড়া আধা চা চামচ।

প্রণালী: ঘি গরম করে সেদ্ধ গাজর দিয়ে ভাজুন। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে আরো ২ মিনিট ভেজে চিনি দিন। এলাচি গুঁড়া দিন। মাখা মাখা হয়ে পাক ধরে এলে নামিয়ে লাড্ডু আকারে গড়ে পরিবেশন করুন।

* সুজির সন্দেশ

উপকরণ: সুজি এক কাপ, এক কাপ নারিকেল কোরানো, চিনি এক কাপ, ৩/৪ কাপ দুধ, কিশমিশ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালী: সুজি ভেজে নিতে হবে। নারিকেল কোরা মিহি করে বেটে নিতে হবে। নারিকেল বাটার সঙ্গে সুজি, চিনি ও দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে কড়াইয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। এরপর ২/৩ কাপ ঘি এর মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। সবকিছু ভালোভাবে মিশে গেলে আঁশ হয়ে এলে নামিয়ে ফেলতে হবে। বিভিন্ন আকারে সুজির সন্দেশ বানাতে হবে।

* খইয়ের মুড়কি 

উপকরণ: খই ৫০০ গ্রাম,গুড় ৩০০ গ্রাম।

প্রণালী: গুড় কড়াইয়ের মধ্যে জ্বাল দিতে হবে। গুড়ে আঁশ হয়ে গেলে খইয়ের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। আঁঠালো হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন। খই নির্দিষ্ট একটি বড় পাত্রে রাখলে খইয়ের মুড়কি বানাতে অনেক সুবিধা হয়।

* চিঁড়ার মোয়া 

উপকরণ: ৫০০ গ্রাম চিঁড়া, ২০০ গ্রাম গুড়, গোলমরিচের গুঁড়া পরিমাণমতো।

প্রণালী: চিঁড়া ভালোভাবে পরিষ্কার করে কাঠের খোলায় চিঁড়া ভেজে নিন। লাল লাল হয়ে গেলে এতে গুড় ঢেলে দিতে হবে। একসঙ্গে গুড় ও চিঁড়া কষাতে হবে। কষানোর সময় কাঠি বা কোনো কিছু দিয়ে সারাক্ষণ নাড়তে হবে। যেন গুড় ও চিঁড়া লেগে না যায়। আঠালো হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে গোলমরিচের গুঁড়া দিতে হবে। গরম থাকতে থাকতে মোয়া বানিয়ে ফেলতে হবে। চিঁড়া ঠান্ডা হয়ে গেলে মোয়া তৈরি করা যায় না। তাই গরম থাকা অবস্থায়ই তৈরি করে ফেলতে হবে।

* মুড়ির মোয়া

উপকরণ: মুড়ি ৫০০ গ্রাম, গুড় ২৫০ গ্রাম,লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালী: গুড় কড়াইয়ে জ্বাল দিতে হবে। গুড়ে আঁশ হয়ে গেলে মুড়ির মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। তারপর বিভিন্ন আকার অনুযায়ী মোয়া তৈরি করতে হবে। গুড় আঠালো থাকা অবস্থায় মোয়া বানাতে হবে।

* নারিকেলের লাড্ডু

উপকরণ: নারিকেল কোরা ২ কাপ, চিনি আধা কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, এলাচ গুঁড়া সিকি চা চামচ।

প্রণালী: ঘি বাদে বাকি সব উপকরণ কড়াইতে দিয়ে চুলায় বসান। চিনি গলে শুকিয়ে আঠালো ও মাখা মাখা হলে ঘি দিয়ে নাড়তে থাকুন। পাক হলে নামিয়ে গোল গোল লাড্ডু বানিয়ে সংরক্ষণ করুন।

* মিহি দানা

উপকরণ: বেসন ২৫০ গ্রাম, পানি ২৫০ গ্রাম, সুজি ১০ গ্রাম, খাবার রঙ আধা চা চামচ, তেল ১ কাপ।

সিরা তৈরি: চিনি ১ কাপ, পানি আধা কাপ একত্রে জ্বাল দিয়ে সিরা বানিয়ে নিন।

প্রণালী: সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে বেটার বানিয়ে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে মিহি দানার লাড্ডু ভাজার বিশেষ চামচ দিয়ে বেটার গরম তেলে ভাজুন। ভাজা হয়ে গেলে তুলে সিরায় দিয়ে ১০ মিনিট রেখে উঠিয়ে নিন। এবার হাত দিয়ে আধা ভাঙা করে গোল গোল লাড্ডু বানিয়ে পরিবেশন করুন।

* বুন্দি লাড্ডু

উপকরণ: বেসন ৩০০ গ্রাম, সুজি ৫০ গ্রাম, পানি ২৫০ মি.লি, হলুদ খাবার রঙ সিকি চা চামচ, তেল ১ কাপ।

সিরা তৈরি: পানি ২৫০ মি.লি, চিনি ২ কাপ, একত্রে চুলায় জ্বাল দিয়ে সিরা বানিয়ে রাখুন।

প্রণালী: তেল বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে বেটার (গোলা) বানিয়ে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে ঝাঝরি চামচ দিয়ে গোলা ছেড়ে ভাজুন। ভাজা বুন্দি উঠিয়ে সিরায় ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পরে উঠিয়ে লাড্ডু বানিয়ে পরিবেশন করুন।

* ক্ষীরের সন্দেশ 

উপকরণ: দুধ ১ লিটার, চিনি ১ কাপ, এলাচি গুঁড়া ১/৮ চা চামচ,ঘি ১ চা চামচ, বিভিন্ন ডিজাইনের ছাঁচ কয়েকটা।

প্রণালী: একটা ননস্টিক প্যানে করে দুধ চুলায় বসান এবং অনবরত নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না দুধ শুকিয়ে ঘন হয়ে কাইয়ের মতো হয়। খেয়াল রাখবেন যাতে নিচে পুড়ে না যায়। দুধ যখন ঘন হয়ে আসবে, তখন আগুন খুব কম করে দিতে হবে। কারণ, একটুও যদি নিচে লেগে যায় তাহলে রংটা নষ্ট হয়ে যাবে। দুধ শুকিয়ে যখন ক্ষীর হয়ে যাবে (কাই এর মতো), তখন চুলা থেকে নামিয়ে ক্ষীর একটা বাটিতে নিয়ে নিন এবং প্যানটা ধুয়ে নিন। এবার ক্ষীরটা অর্ধেক ভাগ প্যানে নিয়ে ১/২ কাপ চিনি এবং ২ চা চামচ পানি দিয়ে অল্প আঁচে চুলায় বসান এবং অনবরত নাড়ুন।

এ সময়টা বেশি সাবধান থাকতে হবে যাতে পুড়ে না যায়। নাড়তে নাড়তে যখন আঠা আঠা ভাব আসবে, তখন সামান্য এলাচির গুঁড়া দিয়ে ভালো করে নেড়ে নামিয়ে নিন। এখন ছাঁচগুলোতে ঘি লাগিয়ে ও হাতে একটু ঘি লাগিয়ে ছাঁচের আন্দাজে ক্ষীর নিয়ে দুই হাতে ডলে ছাঁচের ওপর চেপে চেপে ভালো করে বসিয়ে আস্তে আস্তে হালকা হাতে সন্দেশ তুলে নিন। এভাবে সবগুলো করে নিন। হয়ে গেল ক্ষীরের সন্দেশ। এই ধরনের ছাঁচ দিয়ে করলে এক লিটার দুধ দিয়ে প্রায় ২০-২২টা সন্দেশ হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)