খালেদের মুখে ৫০ নাম, বিস্মিত পুলিশ কর্মকর্তারা

ক্যাসিনো বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিতে সহায়তাকারী হিসেবে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তার নাম একে একে বেরিয়ে আসছে। যুবলীগের ক্যাসিনোবাজ নেতা খালেদ মাহমুদের মুখ থেকে এমন অন্তত ৫০ জনের নাম শুনে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। বিশেষ করে মতিঝিল ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোগুলো থেকে পুলিশ প্রকাশ্যে মাসোহারা নিয়ে যেত। গুলশান থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা দুই মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেছেন, ‘এক চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে খাতির আছে। আমি টাকা দিয়ে কাজ নেই। এই যেমন একটা কাজের জন্য তাকে ১৯ কোটি টাকা দিয়েছি।’ ক্যাসিনোর টাকা কার কাছে যায়নি—এমন বিস্ময়সূচক মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংসদ সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও প্রভাবশালী মহলের অনেকের পকেটেই যেত। ঢাকায় ৮০-৯০টি হাইরাইজ বিল্ডিং করেছি। এসব টেন্ডার আমি পেয়েছি। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকে অফিসের হাতে। কে টেন্ডার পাবে, কে কী করবে—এসব তো তারা নির্ধারণ করে। এতে নির্দিষ্ট একটা পারসেন্ট দেওয়ার বিষয় থাকে। একটি কাজ পেতে তাদের ৫ কোটি টাকাও দিতে হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও এই অর্থপ্রাপ্তি থেকে বাদ যেতেন না। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের আগারগাঁও অফিসের এক কর্মকর্তাকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কারণ আমার ৫০ লাখ টাকার একটি বিল আটকে রেখেছিলেন তিনি।’

ডিবির একটি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তত ৫০ জনের নাম বলেছেন, যাদের সঙ্গে তার অর্থ লেনদেন হয়েছিল। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোন, শিক্ষা ভবনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তার টেন্ডারবাজির কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। রেল মন্ত্রণালয়ের টেন্ডারে ব্যাপক আধিপত্য ছিল খালেদের। চট্টগ্রামের রেলওয়ের একটি টেন্ডার নিয়মবহির্ভূতভাবে ঢাকায় আয়োজন করা হয়। রেলের টেন্ডারবাজিতে কোথাও ৫ শতাংশ, কোথাও ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদ।

মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন যুবলীগের এই নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়ংম্যানস ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করতেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ টাকা নিতেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।

খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হতো খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের হাট বসে। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা চাঁদা তাকে দেওয়া হতো। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন খালেদ দখল করে রেখেছেন। নিজের আধিপত্য বিস্তারে শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান-ক্লাবও নির্মাণ করেছেন খালেদ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)