উত্তেজক ওষুধে সয়লাব দেশ

নিয়ন্ত্রণহীন আলোচিত যৌন উত্তেজক ওষুধ ‘ভায়াগ্রা’। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের শহর-বন্দর হয়ে গ্রামগঞ্জেও এখন এই ওষুধ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এটি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও বেশি মুনাফার লোভে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দেদারছে বিক্রি করছেন। ফলে ওষুধটির অপব্যবহার বেড়েই চলেছে।

এদিকে বিনা প্রেসক্রিপশনেই এই ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও কোনোভাবেই মানছে না ফার্মেসিগুলো। মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, অনুমোদিত ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনোভাবেই বিক্রির সুযোগ নেই। তারপরও দেশের বাস্তবতায় এখনো প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে মনিটরিং চলছে। খুব শিগগিরই এটা দৃশ্যমান হবে।

জানা গেছে, যত্রতত্র ভায়াগ্রা পাওয়া যাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারছে। যৌন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও যিনি যৌন সমস্যাগ্রস্ত নন, তিনিও ভায়াগ্রায় মারাত্মভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই আসক্তের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে উঠতি তরুণ ও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া ৩৫ থেকে ৫০ বছরের নারী-পুরুষের ভায়াগ্রায় আসক্তদের সংখ্যাও অনেক। অথচ চিকিত্সা বিজ্ঞানে বাজারজাতকৃত ভায়াগ্রা একটি বাণিজ্যিক নাম।

এটির জেনেরিক নাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট। যুক্তরাজ্যের ফাইজার কোম্পানি গবেষণামূলক উত্পাদিত ভায়াগ্রা ওষুধ প্রথমে ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারজাত শুরু করে। সেবনকারীদের ব্লাডপ্রেশার তো নিয়ন্ত্রণ হয়নি, উলটো তাদের যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। পরে ফাইজার কোম্পানি যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে ভায়াগ্রা সারাবিশ্বে বাজারজাত শুরু করে। এটা এখন বিশ্বে সমাদৃত ওষুধ।

সমাজ গবেষকদের মতে, ভায়াগ্রার অপব্যবহার সমাজের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা কেবল সেবনকারীকেই নয়, গোটা সমাজকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ ও পারিবারিক কলহ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভায়াগ্রার অপব্যবহারে যৌন ক্ষমতা স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। এছাড়া হূদরোগ, লিভার-কিডনি-ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত এবং চোখেও জটিলতা সৃষ্টি করে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম ইত্তেফাককে জানান, কারো হার্টে বা ব্রেনে সামান্যতম সমস্যা থাকলে, ভায়াগ্রা সেবনে তার মৃত্যু অবধারিত। তাই নির্ধারিত (চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ) চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ভায়াগ্রা সেবন করতে হবে। বাইপাস সার্জারি, ব্লাডপ্রেশার ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা ভায়াগ্রা খেতে পারবেন না।

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা জানান, ভায়াগ্রা কেউ বেশিদিন সেবন করলে আসক্ত হয়ে যায়। সে আর এটা ছাড়তে পারবে না। তিনি বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভায়াগ্রা সেবন মারাত্মক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। এটা যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বিদেশে কুকুরের ওষুধ ক্রয় করতে হলেও প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হয়। অথচ আমাদের দেশে এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া অবাধে বিক্রি হচ্ছে।

এক ধরনের এনার্জি ড্রিংক তৈরিতে ভায়াগ্রা মেশানো হয়। এ ধরনের এনার্জি ড্রিংক সেবনকারী কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)