সাতক্ষীরার বৈচনায় যৌতুকের দাবীতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

সাতক্ষীরার বৈচনায় যৌতুকের দাবীতে খাদিজা বেগম (১৯) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দেবহাটার সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের কলুপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। নিহত গৃহবধু খাদিজা বেগম দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের নুনেখোলা গ্রামের মুনসুর আলী গাজীর মেয়ে। মঙ্গলবার গৃহবধু খাদিজার ময়নাতদন্ত শেষে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে গৃহবধুর বাবা মুনসুর আলী গাজী বাদী হয়ে যৌতুকলোভী স্বামী সাইফুদ্দীন সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।

দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখিত অন্যান্য আসামীরা হলো- নিহত গৃহবধু খাদিজার শ্বশুর বৈচনার নুর মোহাম্মাদ মন্ডলের ছেলে সোলাইমান মন্ডল, শ্বাশুড়ী শামীমা বেগম ও ভাষুর লোকমান মন্ডল। অন্যদিকে একই ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত এজাহার সুত্রে জানা গেছে, বিগত প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে শরীয়ত মোতাবেক সদর উপজেলার বৈচনা কলুপাড়া এলাকার সোলাইমান মোড়লের ছেলে সাইফুদ্দীনের সাথে বিয়ে হয় তার মেয়ে খাদিজা বেগমের। বিয়ে পরবর্তী যৌতুক হিসেবে গৃহবধু খাদিজার বাবা মুনসুর আলীর কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা সহ স্বর্ণের আংটি, মোবাইল ফোন ও আসবাবপত্র মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা আদায় করে তার স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন।

এর কিছু দিন যেতে না যেতেই খাদিজার কাছে আরো ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করে নির্যাতন শুরু করে স্বামী সাইফুদ্দীন সহ অন্যান্যরা। এমনকি যৌতুকের ৫০ হাজার টাকার দাবীতে খাদিজাকে শ্বশুর বাড়ী থেকে বের করে দেয়া হলে সে তার বাবার বাড়ী দেবহাটার নুনেখোলায় আশ্রয় নেয়। পরে ঘরোয়া শালিষ মীমাংসার পর খাদিজাকে শ্বশুর বাড়ীতে নিয়ে এসে যৌতুক লোভী স্বামী সাইফুদ্দীন, শ্বশুর সোলাইমান, শ্বাশুড়ী শামীমা বেগম ও ভাসুর লোকমান মন্ডল মিলে আবারো তার ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।

সোমবার দুপুর থেকে ওই ৫০ হাজার টাকার জন্য খাদিজাকে মারপিট শুরু করে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। বিষয়টি ৩টার দিকে মোবাইলে খাদিজা তার বাবাকে জানায়। এর ঘন্টা খানেক পরে বৈচনা থেকে স্থানীয়রা মুনসুর আলীকে মোবাইল করে তার মেয়েকে হত্যা করার বিষয়টি জানায়। পরে খাদিজার বাবা সহ অন্যান্যরা শ্বশুরবাড়ীতে মেয়ের লাশের কাছে পৌছানোর আগেই গা ঢাকা দেয় তার স্বামী সাইফুদ্দীন সহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। গৃহবধু খাদিজাকে পিটিয়ে ও গলাটিপে হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার মুখে নাটকীয় ভাবে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার পরবর্তী মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত পরবর্তী জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলোক শাস্তির দাবী জানিয়েছে গৃহবধু খাদিজার পরিবার।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খাদিজার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া ঘটনাটির তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)