পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল পোষ্য প্রাণী

শখ কম বেশি সব মানুষেরই থাকে। কিন্তু সবার শখই একরকম হয় না। প্রকৃতি ও প্রাণীর  প্রতি ভালোবাসা সবার মাঝেই আছে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের ভেতরেই প্রকৃতির প্রতি একটা দুর্বলতা কাজ করে। আর এই দুর্বলতা প্রায়শই শখ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যেমন ধরুন, বাগান করার শখ, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দূরদূরান্তে ভ্রমণের শখ অথবা জীবজন্তু পোষার শখ। কিন্তু জীবজন্তু পোষার শখ যেমন থাকে তেমনই তাদের লালন পালনেও ব্যয় করতে হয় অনেক টাকা। ঠিক তেমনই কিছু ব্যয়বহুল পোষ্য প্রাণী আছে যা কেবল ধনী শ্রেণীর লোকেরাই পুষতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল পোষ্য প্রাণীদের সম্পর্কে-

দ্য গ্রিন মাংকি
নামের ভেতর ‘মাংকি’ শব্দটা থাকলেও ‘দ্য গ্রিন মাংকি’-র কিন্তু বাঁদরের সাথে কোনো সংস্রব নেই। এটা ছিলো একটা আমেরিকান রেসের ঘোড়া। প্রায়শই রেসে ব্যবহৃত ঘোড়ার দাম সাধারণ ঘোড়ার তুলনায় অনেক বেশি হয়। কিন্তু ‘দ্য গ্রিন মাংকি’-র বিক্রয়মূল্য রীতিমতো রেকর্ড গড়েছিল। ২০০৬ সালে দু’ বছর বয়সে এই ঘোড়াটি বিক্রি হয় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে! এত দামে এখনো পর্যন্ত কোনো ঘোড়ার সওদা হয়নি। অবশ্য এই দামটা একেবারে অমূলক ছিল না। কারণ ঘোড়াটির যেমন ছিল সৌন্দর্য, তেমনই ছিল অসাধারণ গতি। সিএনবিসির তথ্য মোতাবেক, প্রথম রেসে সে ৯.৮ সেকেন্ডে ২২০ গজ দূরত্ব অতিক্রম করে। অর্থাৎ ১ ঘণ্টায় ৪৮ মাইল বেগে ছুটতে পারতো ‘দ্য গ্রিন মাংকি’।

পাম কাকাতুয়া
কাকাতুয়া পরিবারের সদস্য এই বৃহদাকার কালো টিয়াগুলোকে গোলিথ কাকাতুয়া অথবা গ্রেট ব্লাক কাকাতুয়া নামেও ডাকা হয়। এদের প্রধান বাসস্থান নিউ গিনি অঞ্চল ছাড়াও আরো কিছু এলাকায় এদের দেখা মেলে। দৃষ্টিনন্দন ঝুঁটি, লম্বা ঠোঁট আর লাল রঙের গালের পালক (যা এদের মেজাজের সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলায়) এদেরকে এদের অন্যান্য জ্ঞাতিভাই থেকে আলাদা করে চিনতে সহায়তা করে। ৫৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য আর ৯১০ থেকে ২,১০০ গ্রাম ওজনবিশিষ্ট এই পাখি শৌখিন অভিজাত শ্রেণীর অত্যন্ত প্রিয় একটি পোষ্য। প্রায় ১৬,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আপনিও আপনার ঝুল-বারান্দার শোভা বাড়াতে পারেন এই দুর্লভ পাখির মনোহর সৌন্দর্যে।

তিব্বতী ম্যাসটিফ
নেপাল, তিব্বত আর হিমালয়ের পার্বত্যাঞ্চল এই প্রজাতির কুকুরের আদি নিবাস। তবে বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত তিব্বতী ম্যাসটিফ। ২০১১ সালে এই জাতের একটি দুর্লভ কুকুর বিক্রি হয় ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। প্রথম দর্শনে অতিকায় তিব্বতী ম্যাসটিফকে সিংহ ভেবে ভুল করতে পারে অনেকেই। চীনাদের প্রিয় এই সারমেয় পাহারাদারিতে অত্যন্ত পটু। প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত এরা নিষ্ঠার সাথে প্রভুর সম্পত্তি রক্ষা করে চলেছে। ৩২ ইঞ্চির বেশি দৈর্ঘ্য আর ৫০ পাউন্ডেরও বেশি ওজন বিশিষ্ট তিব্বতী ম্যাসটিফ কালো, লাল, ধূসর, সাদা, বাদামি ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের হয়। তবে সাদা রঙের ম্যাসটিফ একটু বেশিই দুর্লভ। আর সেজন্যই আরো একটু বেশি দামি!

মিস মিসি
‘মিস মিসি’ হলস্টিন প্রজাতির একটি গাভীর নাম। যে সে গাভী সে নয়- রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন গাভী! আমেরিকার ওয়েস্টার্ন ফল ন্যাশন শো (পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যানিম্যাল শোগুলোর একটি) এর গ্রান্ড চ্যাম্পিয়ন এর খেতাবসহ আরো অনেকগুলো উপাধিই আছে তার ঝুলিতে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, যে গাভীর অর্জনের পরিধি এত বৃহৎ, তার বাজারদর একটু চড়া হবারই কথা। কিন্তু সেই দর যদি হয় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, তাহলে খানিকটা অবিশ্বাসের অবকাশ থাকে বৈকি! অথচ এই অবিশ্বাস্য দামেই বিক্রি হয়েছিল কানাডার এই গাভী। বলা বাহুল্য, গাভী বিকিকিনির ইতিহাসে এটা এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূল্য।

স্যার ল্যানসেলট এনকোর
এডগার ও নিনা ওটোর সুখের সংসার। অবশ্য এই সংসারের আরো একজন সদস্য ছিলো ওদের আদরের ল্যাব্রাডর। ২০০৮ তাদের সন্তানতুল্য কুকুরটা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই ঘটনাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না এই দম্পতি। তাই তারা এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিলেন, তা হলো তাদের স্নেহের কুকুরের ক্লোন করার সিদ্ধান্ত! এই পদ্ধতিতে জন্ম নিলো তাদের আদরের কুকুরের হুবহু নকল। তার নাম রাখা হলো, স্যার ল্যানসেলট এনকোর। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় ওটো দম্পতির খরচ হইয়েছিল’ ১৫৫,০০০ ডলার!

শ্বেত সিংহ শাবক
দক্ষিণ আফ্রিকার তিম্বাভাতি এলাকার বাসিন্দা মহাদুর্লভ শ্বেত সিংহ। ১৯৩৮ সালে প্রথমবারের মতো মানুষের নজরে আসে এরা। বর্তমানে অতি সহজেই এদের দেখা পাওয়া যায় দক্ষিণ আফ্রিকার দু-তিনটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণালয়ে। অতি দুষ্প্রাপ্য ব্রিডের এই সাদা সিংহকে এখনো আলাদা প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ এরাও মূলধারার সিংহ গোষ্ঠীরই সদস্য। গ্লোবাল হোয়াইট লায়ন প্রোটেকশন ট্রাস্টের জরিপ অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে মাত্র ৩০০টি সাদা সিংহ আছে। আপনার ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার বৈচিত্র্য বাড়াতে একটি শাবক আপনি আনতেই পারেন! তবে তার জন্য আপনাকে গুনতে হবে ‘মাত্র’ ১৩৮,০০০ মার্কিন ডলার।

স্টাগ বিটল
লুক্যানাইড পরিবারের অধিভুক্ত গুবরে পোকা ধাঁচের এই পতঙ্গটিও সংগ্রাহকদের মাঝে রীতিমতো প্রতিযোগী মনোভাবের উদ্রেক করে। সাত বছরের পরমায়ু বিশিষ্ট এই প্রাণীটির দাম ৮৯,০০০ ডলারের কাছাকাছি! আনাড়ি চোখে একে সাধারণ একটা পোকা মনে হলেও, এটি একেবারেই সাধারণ নয়। লাল রক্ত বিশিষ্ট ২-৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এই পতঙ্গ তার নিজের জ্ঞাতিবর্গের ভেতরে বেশ দুর্লভ। আর মানুষের অদ্ভুত মনস্তত্ত্বে যত তুচ্ছ বস্তুই হোক না কেন- যা দুর্লভ তাই মূল্যবান!

সাভানা ক্যাট
এটি হলো বেড়ালের বেশে কুকুর। বন্ধুসুলভ ক্রীড়াপ্রেমী এই বেড়াল, কুকুরকে একেবারেই ভয় পায় না। আর সাধারণ বেড়ালের মতো পানিতে ভিজতে আপত্তি না করে বরং উপভোগ করে। পোষ্য বেড়াল আর বনবেড়ালের শংকরায়ণের মাধ্যমে তৈরী এই বেড়ালের নাম সাভানা ক্যাট। বাজারদর প্রায় ২৫,০০০ ডলারের মতো।

হায়াসিন্থ ম্যাকাও
হায়াসিন্থ ম্যাকাও পৃথিবীর বৃহত্তম উড্ডয়নক্ষম টিয়া। সচরাচর এদেরকে ডাকা হয় ব্লু ম্যাকাও নামে। গাঢ় নীলবর্ণ পাখিগুলোর ঠোঁটের গোড়ায় আর চোখের চতুর্দিকে রয়েছে উজ্জ্বল হলুদ রঙ। এদের প্রাকৃতিক নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল। আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ব্রাজিল, বলিভিয়া ও প্যারাগুয়েতে এদের দেখা মেলে বেশি। বিভিন্ন প্রকারের বাদাম, ফল, সবজি ও শস্যদানা এদের খাদ্যতালিকায় প্রাধান্য পায়। তাছাড়া বলিষ্ঠ ঠোঁটের আঘাতে এরা নারকেল পর্যন্ত ভেঙে খেতে পারে। এই পাখির মালিকানা হাসিল করতে ‘মাত্র’ ১৪,০০০ ডলারের মতো খরচ করতে হবে।

দে ব্রাজাস্ মাংকি
মধ্য আফ্রিকার জলাভূমির এই বাসিন্দাকে সোয়াম্প মাংকি নামেও ডাকা হয়। তবে ‘দে ব্রাজাস্’ নামটি এসেছে প্রখ্যাত ফরাসি ভূপর্যটক ও অভিযাত্রী ‘পিয়ের্রে দে ব্রাজা’-র নাম থেকে। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বানরের প্রজাতি। স্বভাবজাত অসাধারণ লুকোনোর ক্ষমতার জন্য এদের নাগাল সহজে পাওয়া যায় না। মাথাপিছু ২২ বছর পরমায়ু বিশিষ্ট এই প্রাণী কমলা রঙের ঝুঁটি আর সাদা দাড়ির জন্য বহুল প্রশংসিত। পোষ্য হিসেবেও এদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তা-ইতো ব্যবসায়ীরা এর দাম হাঁকিয়েছে ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)