ফল কম খাওয়ায় বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে বাংলাদেশিরা

ফল কম খাওয়ায় বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। শীর্ষ ৫টি মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে বাকিগুলো হচ্ছে সবজি কম খাওয়া, অতিরিক্ত সোডিয়াম বা লবণ গ্রহণ, শস্যদানা, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার কম খাওয়া। বিখ্যাত স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল দি ল্যানসেটের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে , বাংলাদেশে ১৭ থেকে ৩৪ বছর বয়সের ২৬ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণে। বয়স্করা বেশি ভোগেন হৃদরোগের মৃত্যু ঝুঁকিতে। ৪৯.১ থেকে ৫৭.৪ বছর বয়সের ৫৩ ভাগের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এ কারণে। এ সমস্যাগুলোর সবগুলোই খ্যাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জড়িত।

প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে খ্যাদ্যাভ্যাস জনিত কারণে প্রতি লাখে ৩১৩-৩৯৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এমন দেশের তালিকাতে বাংলাদেশকে দেখানো হয়েছে। ভারত, চীন আফ্রিকার কয়েকটি দেশ রয়েছে এই অবস্থানে।

এতে আরও বলা হয়, বাজে খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিশ্বে প্রতি পাঁচ জনের এক জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত মাংস, লবণ ও চিনি গ্রহনই এর বড় কারণ। এ কারণে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩০০ জনের বেশি মারা যাচ্ছে বাংলাদেশে।

গবেষণা অনুযায়ী ধূমপান থেকে শুরু করে অন্য যে-কোনো ঝুঁকির চেয়ে খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিশ্বে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বছরে ১.১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।

গবেষণাটির রচয়িতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হেলথ মেটরিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক ক্রিস্টোফার মারে বলছেন, ‘নিম্নমানের খাবার মানুষের জন্য অন্য যে-কোনো কিছুর চেয়ে বড় মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করছে, এতদিন এমন কথা কথা বলা হলেও এই গবেষণার মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের মূল্যায়ন বলছে খাবারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ সোডিয়াম (লবণ) বেশি গ্রহণ আর স্বাস্থ্যকর খাবার কম গ্রহণ।

গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বে খাবার সংক্রান্ত মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে উজবেকিস্তান। আর সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে আছে ইসরায়েল।

কীভাবে মৃত্যু হচ্ছে: প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে বছরে ১.১০ কোটি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসের কারণে। এর মধ্যে ১ কোটি মানুষই মারা যায় হৃদরোগ জনিত কারণে। এ ধরনের সমস্যা মূলত তৈরি হয় খাবারে লবণের পরিমাণ থেকে।

অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। একই সঙ্গে লবণ হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে শস্যদানা, সবজি ও বীজ জাতীয় খাবার হৃদরোগজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমায়। বিশ্বে খাদ্যাভ্যাসজনিত বাকি মৃত্যুগুলো হয় ক্যানসার ও টাইপ টু ডায়াবেটিক রোগে।

কী করতে হবে
বিশেষজ্ঞরা সুস্থভাবে বাঁচার জন্য এবং মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের তাগিদ দিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরেই। এর আগে জানুয়ারিতে প্রকাশিত ল্যানসেটের আরেক প্রতিবেদনে লাল মাংস ও চিনি খাওয়ার গড় পরিমাণ অর্ধেক কমিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। অন্যদিকে সবজি, ফল, এবং বাদাম জাতীয় খাবার বিদ্যমান পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণ করার কথা বলছে, যা একদিকে স্থূলকায় হয়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করবে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাতেও ভূমিকা রাখবে। সেখানেও অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ এবং শস্যদানা ও ফল কম খাওয়াকে খ্যাদ্যাভ্যাসের বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)