সাতক্ষীরায় ‘মানব পাচার প্রতিরোধ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বাল্য বিবাহ বন্ধ করুন, শিশু কিশোরদের হাতে এনরয়েড মোবাইল নয় এমন সব পরামর্শ বাস্তবায়ন করা গেলে সমাজ থেকে মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ দুর করা সম্ভব হবে । এ ব্যাপারে প্রথমেই সচেতন হতে হবে অভিভাবক ও স্কুল কলেজের শিক্ষকদের। এর সাথে সাথে আইনের যথাযথ প্রয়োগ সমাজকে কলুষমুক্ত করতে সহায়তা করবে।
রোববার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেছেন বক্তারা। ‘নোটারি পাবলিক’এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে কোনো বিয়ে হয় না উল্লেখ করে তারা বলেন সমাজে কিছু সংখ্যক অসাধু ম্যারেজ রেজিস্টার টাকার বিনিময়ে অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোর কিশোরীদের বিয়ের কাগজপত্র তৈরি করছে। এ ধরনের অসম বিয়ের পরিণতি অপুষ্ট সন্তানের জন্ম, শিশু ও মায়ের রোগগ্রস্থ হয়ে উঠা যার শেষ পরিনতি সংসার ভেঙ্গে যাওয়া এবং মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু। আত্মহত্যা এমনকি পারিবারিক সহিংসতায় কিশোরী মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে চলেছে একই কারণে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা আরও বলেন দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত মেয়েরা সচরাচর পাচারের শিকার হয়ে থাকে। দেশের সীমানার বাইরে নিয়ে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় পতিতালয়ে। তাদের জীবনের বাকি অংশ কাটে অসামাজিক কাজের মধ্যে।
বক্তারা বলেন এখনকার সময়ে সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচার আগের মতো হয়না , তবে পাচার হয় ভিন্ন প্রক্রিয়ায়। এই পাচার রোধে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ভাল ভূমিকা রাখতে পারেন। একই সাথে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানের প্রতি দরদী হয়ে বাল্য বিবাহ থেকে বিরত থাকবেন। ১৮ এর আগে বিয়ে নয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে মানবপাচারও হ্রাস পাবে বলে উল্লেখ করেন তারা। পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচারালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমে এসব বিষয় বেশি বেশি করে প্রতিবেদন প্রচার করা হলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এতে মানবপাচার, বাল্য বিবাহ, পারিবারিক সহিংসতা, নারীর ওপর সহিংসতা, শিশু পাচার, শিশু শ্রম এমনকি নারী ও শিশুকে যৌন হয়রানির মতো অবস্থা থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জাহিদ হোসেন, ইনসিডিন বাংলাদেশ এর সমন্বয়কারী এড. রফিকুল ইসলাম খান, যুব উন্নয়ন অধিদফতর কর্মকর্তা সঞ্জীব দাস, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি এড. নাদিরা পারভিন, পূজা দাস, ইনসিডিন সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সাকিবুর রহমান প্রমূখ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব প্রতিনিধি, শিশু প্রতিনিধি, উপজেলা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দ।