অবশেষে পেট্রাপোল বন্দরে শতভাগ পণ্য পরীক্ষণের সিদ্ধান্ত স্থগিত: ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি

বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য চালান খালাস হওয়ার পূর্বে আনলোড করে শতভাগ পরীক্ষণের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তা স্থগিত করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বন্দরে পর্যাপ্ত জনবল, জায়গা ও পণ্য উঠা-নামানোর যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পেট্রাপোল কাস্টমস এমন সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বলে জানা গেছে। তবে এতে ব্যবসায়ীরা আপাতত খুশি হলেও দূঃচিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না।

আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় এমনিতেই একটি পণ্য চালান ভারত হতে আমদানি হতে পাঁচ থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পেট্রাপোল বন্দরে আবার প্রতিটি পণ্য চালান আনলোড করে শতভাগ পরীক্ষা করতে গেলে ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যেত। এর ফলে পণ্য খালাস একদিকে যেমন কঠিন হয়ে পড়তো তেমনি আমদানি খরচও বেড়ে যেত। যার প্রভাব পড়তো দেশীয় বাজারে। ব্যবসায়ীরা আর এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হতাকারি মূলক সিদ্ধান্ত স্থগিতে বাণিজ্যে আবার গতি ফিরবে।

জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, আমদানি-রফতানি পণ্য চালান খালাসের আগে পেট্রাপোল বন্দরে শতভাগ পরীক্ষা করতে হবে। যার স্মারক নম্বর ১১(২৬)১১৩/পিটিপিএল-আরডি/আইএমপি/এমআইএসসি/২০১৮-১৯/২৭২৫। এতে পরের দিনে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে পণ্য চালান প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে টনক নড়ে ব্যবসায়ীদের।

বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে (১৮ এপ্রিল) এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় একটি অনুসন্ধান মূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এমন সিদ্ধান্ত নিলে কি হবে তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নিউজটিতে। এর পরই নড়ে চড়ে বসেন সকলে। পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে আপাতত শতভাগ পরীক্ষণের নির্দেশনা স্থগিত করেন।

যশোরের আমদানি কারক ইদ্রিস আলী বলেন, ভারতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় বেনাপোল বন্দরে। এখানে পরীক্ষণ মানায়। কিন্তু পণ্য চালান আমদানির আগে পেট্রাপোল বন্দরে শতভাগ পরীক্ষণের সিদ্ধান্ত হটকারি ছাড়া আর কিছুই না।

ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, আমদানি পণ্যের শতভাগ পরীক্ষণ বন্ধের সিদ্ধান্ত অস্থায়ী। সেটা যে কোন সময় আবার কার্যকর হতে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে পাকা বৈঠকের দরকার রয়েছে। তা না হলে পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা আবার একই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাত্তিক চন্দ্র দাস জানান, বাংলাদেশের মতো পণ্য রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা পেট্রাপোল বন্দরে নেই। ফলে এমনিতেই সেখানে সারা বছর পণ্য জট লেগেই থাকে। মালামাল আমদানি-রফতানিতে মারাত্মক সমস্যা হয়। ব্যবসায়ীরা শতভাগ পরীক্ষণে সমস্যার বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হলে তারা আপাতত সিদ্ধান্ত স্থগিত করে পূর্বের নিয়মে পণ্য খালাস সচল রেখেছেন।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখায় কর্মরত ওয়ারহাউজ সুপারেন্টেন্ড মতিনুল হক জানান, শনিবার(২০ এপ্রিল) দিনভর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২৫৬ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আর ভারতে রফতানি হয়েছে ১২৬ ট্রাক পণ্য।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)