কালিগঞ্জে চৈত্রসংক্রান্তিতে বালাপোতা পুরাতন শিব মন্দিরে লাখো ভক্তের মিলন মেলা

সাতক্ষীরা সহ আশেপাশের জেলার হাজারো ভক্তের মিলন মেলা ঘটেছে কালিগঞ্জের বালাপোতার পুরাতন শিব মন্দিরে। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে বাংলা পহেলা চৈত্র থেকে শুরু ভক্তের আগমন । সারা মাস ধরেই ভক্তরা তাই মনের বাসনা পূর্ণ করতে ছুটে আসেন এই মন্দিরে । হিন্দু ধর্মলম্বীরা শিবকে সন্তুষ্ট করতে সকল ধরনের পূজা অর্চনা, উপবাস ও মানত করে থাকেন মন্দিরে। গত চল্লিশ বছর ধরে মন্দিরটিতে চলে আসছে শিব পূজা বা চৈত্রসংক্রান্তির উৎসব ।

চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকে বালাপোতা মন্দিরে আরম্ভ হয় চৈত্রসংক্রান্তির মহাউৎসব। ১ মাস যাবৎ বিভিন্ন পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে চলে এই উৎসব। আগামীকাল চৈত্রসংক্রান্তি পূজার মাধ্যমে এ উৎসব শেষ হবে । জনশ্রুতিতে আছে ১৯৮০ সালে ৪০ বছর আগে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে তারকেশ^রের শিবর দর্শনে একদল সন্ন্যাসীরা ভারতে যাওয়ার সময় বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাধা দেয় । এ সময় শিবের মাথায় জল দিতে না পেরে ভক্তরা মর্মাহত হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সেই রাতে ওই গ্রামের মৃত প্রতীপ পাবন সরকার স্বপ্ন দেখেন বালাপোতা গ্রামে একটি শিব লিঙ্গ রয়েছে। পরদিন সকালে প্রতীপ পাবন ভক্তদের সাথে নিয়ে ওই স্থানে একটি শিব লিঙ্গ দেখতে পান। এ সময় তিনি ওই স্থানে একটি শিব মন্দির গড়ে তোলেন। সেইখান থেকে হাজার শিব ভক্ত আসে ওই মন্দিরে। এর পর প্রতি বছর চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকে হাজার হাজার নারী ও পুরুষ ডাব ও পানি নিয়ে শিবের মাথায় পানিদেন। রোদে পুড়ে উপবাস থেকে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরে প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়, শিব লিঙ্গের মাথায় দুধ ও পানি ঢালার পরে। নিজেদের মনের আশা পূর্ণ করতে দুঃখ,দুর্দশা ও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাজার হাজার ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সমাধানের জন্য এবং বেকার যুবকরা চাকরি পেতে মানত করেন বালাপোতা এই শিব মন্দিরে। আগত ভক্তদের বিশ্বাস ধামে এসে শিবকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ হয়ে যাবে । এই মন্দিরে এসে শিব লিঙ্গের মাথায় পানি ঢেলে যে যা চায় তাদের মনের আশা পূরণ হয় এমনই জানালেন আগত ভক্তরা। এজন্য দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভক্তরা মন্দিরের আশে পাশে খোলা আকাশের নিচে সপরিবারে কাটিয়ে দেন পুরো ১ মাস । পহেলা চৈত্র থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত শত কষ্ট সহ্য করে শিব সান্নিধ্য পেতে প্রতি বছরই প্রায় কয়েক লক্ষ ভক্তদের ঢল নামে বালাপোতা পুরাতন এই শিব মন্দিরে।

মন্দিরে আগত চন্দ্রীমা সরকার বলেন, তীর্থস্থান এসে বাবার মাথায় জল দিলে মনের কামনা বাসনা পূর্ণ হয়। এখানে এসে যে যা চেয়েছে সে খালি হাতে ফিরে যায়নি। এজন্য আমরা এখানে এসেছি বাবার মাথায় জল দিয়ে মনের কামনা বাসনা পূর্ণ করার জন্য।

মন্দিরের পুরহিতের ছেলে অশিত পাবন সরকার বলেন, ১৯৮০সালে এই ঠাকুর আমার বাবা পেয়েছিলেন । তার ২০০৩ সালে দেহ ত্যাগ পর আমার দায়িত্ব পড়েছে । এখানে ভক্তরা যারা আসে তাদের আমি সেবা করি।

মন্দিরের সভাপতি মুরারি মোহন সরকার বলেন, পহেলা চৈত্র থেকে পূজা আরম্ভ হয় এবং আগামী কাল শিবের মাথায় ফুল পড়ার মাধ্যমে শেষ হবে । এখানে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ভক্তদের সুবিধা অসুবিধা গুলো দেখছেন ।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বলেন , চৈত্র সংক্রান্তির তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদ্মার এপারে সব থেকে বড় অনুষ্ঠান হয় বালাপোতার এই পুরাতন শিব মন্দিরে। প্রতি বছর এই সংক্রান্তিতে মনের বাসনা পূরণের জন্য শিবের মাথাই জল দিয়ে থাকে ভক্তরা । এবার ১৪ এপ্রিলে চৈত্র সংক্রান্তির মূল অনুষ্ঠানে বাবার মাথায় হাজারো ভক্তদের জল ঢালার মধ্যদিয়ে উৎসবের শেষ হবে ।

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের চাম্পাফুল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোজ্জামেল হক গাইন বলেন, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বছররে হাজারো মানুষের মিলন ঘটে বালাপোতার এই মন্দিরে । ভক্তরা শান্তি পূর্ণ ভাবে সারামাস ধরে শিবের মাথায় জল ঢালছেন । আগামীকাল অনুষ্ঠানটি শেষ হবে ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)