এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগরে ইশতেহার

টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রের দায়িত্বে সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ২০০৮ সালে চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। গত ১০ বছরের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহৎ ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।

৭ জানুয়ারি নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর শেখ হাসিনা সরকারের ৭৮তম দিন আজ। দায়িত্ব নেয়ার পরদিন যত পার হচ্ছে সরকারের ২১ দফা ইশতেহার বাস্তবায়নও তত এগিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়ন জংশনে মিলিত হওয়া, ২০৪১ সালে সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো এবং ২১০০ সালে নিরাপদ বদ্বীপ পরিকল্পনাকে এই ইশতেহারে মূল লক্ষ্য ধরা হয়।

এগিয়ে চলা ইশতেহারের ২১টি অঙ্গীকার

১. আমার গ্রাম, আমার শহর- প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণে শুরু হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান ও যোগাযোগে দীর্ঘস্থায়ী ইন্টারনেট লাইন সরবরাহ, রুট লেভেল পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আধুনিক শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবার পরিবেশ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।

২. একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন কাজ চলছে। তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি স্লোগানে তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তায় ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ সৃষ্টির প্রকল্পগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, কানাডাসহ কিছু উন্নত রাষ্ট্রে দক্ষ শ্রমিক সরবরাহের পথ তৈরি করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে আলাদাভাবে কাজ করছে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়।

৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুক্ষে দাঁড়াও স্লোগানে দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রশাসনের গোয়েন্দা বিভাগগুলো আলাদাভাবে সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে তালিকা তৈরি এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কাজ।

৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। নারীর নিরাপদ কর্ম পরিবেশের জন্য একটি বিশেষ সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থা করা হয়েছে বাধ্যতামূলক গোপন নিরাপত্তা টিম। শিশু ধর্ষণ রুখতে এরই মধ্যেই পাস হয়েছে মৃত্যুদণ্ড আইন। প্রশিক্ষণ দিয়ে করা হচ্ছে হিজড়াদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ।

৫. পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় আসছে বিশেষ আইন ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থা।

৬. সন্ত্রাসী-গডফাদার এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত, গ্রেফতার এবং বিচারের মাধ্যমে সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় শূন্যের কোটায়। দেশে দুটি উল্লেখযোগ্য মাদক পয়েন্ট কক্সবাজারের উখিয়ায় ১০২ জনের আত্মসমর্পণ ও রাজধানীর  মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে সফল ক্র্যাশ অভিযান চালানো হয়েছে।

৭. এগিয়ে চলা মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়নে গড়ে ৫০ শতাংশের ওপরে শেষ হয়েছে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলসহ ১১টি মেগা প্রকল্পের কাজ।

৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ়করণ কাজ চলছে। আইনের শাসনের মূল বক্তব্যই হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান; কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা আরো অবারিতকরণ কাজ চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হয়েছে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।

৯. দারিদ্র্য নির্মূলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এই সময়েই নতুনভাবে আরো ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে দারিদ্র্য নির্মূল বাস্তবায়ন কাজ।

১০. সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে শিক্ষা ব্যবস্থার। এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা। শিশু শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে আসছে আরো প্রকল্প।

১১. সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তায় গ্রাম ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি খরচে ডাক্তার ও আরো উন্নত চিকিৎসা পরিবেশ তৈরির কাজ চলছে।

১২. সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহারে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাইজ করণের কাজ এগিয়ে চলছে।

১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে তার মধ্যে অন্যতম পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০২৩ সালে এই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

১৪. কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ ও দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্র সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

১৫. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন তৈরির জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মবৃত্তে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির মাপকাঠি শুধু জ্যেষ্ঠতা নয়; যোগ্যতা ভিত্তিতে করার কাজ এগিয়েছে অনেকটাই। আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত, গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে। নিশ্চিত করা হচ্ছে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সর্বপ্রকার হয়রানির অবসানের কাজ এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা মাফিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। নিয়মানুবর্তী এবং জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে নিতে তৈরি করা হচ্ছে রোডম্যাপ।

১৬. জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরের প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ধাপে ধাপে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেবা প্রদানের জন্য দ্রুত সাড়া দিতে প্রয়োজনীয় যানবাহন-সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ দমনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রয়োজনীয় ভ‚মি ও অবকাঠামোর সংস্থান, প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সদস্যদের কল্যাণমূলক কাজের পরিধি বিস্তারে কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

১৭. ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্র সম্পদ উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। যেটি বাংলাদেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ সমুদ্র সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

১৮. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তায় তৈরি করা হচ্ছে নির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খল কর্ম পরিকল্পনা। পাশাপাশি অইন প্রয়োগ ব্যবস্থাতেও আসছে কিছু পরিবর্তন। ২০২১ সালের মধ্যে যানজটমুক্ত ও শৃঙ্খল নগর পরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

১৯ . প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম ব্যক্তিদের কল্যাণে দেয়া হচ্ছে মাসিক ভাতা, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা।

২০. টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়ার মানসে এখন থেকে অধিকাংশ প্রকল্প হবে সর্বাধুনিক সুবিধা সংবলিত ও কমপক্ষে ১০০ বছর মেয়াদি।

২১. সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সহজ বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন করাসহ রফতানিতে উদ্বুদ্ধ করতেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনা।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমরা সরকারে আসার পর ২১ দফা ইশতেহারের প্রতিটি কাজ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আপনি যদি হিসাব করেন কিছু কাজ আছে প্রায় সফলভাবে শেষের দিকে চলে এসেছি। এর কারণ সরকারের ধরাবাহিকতা। আমাদের পরিকল্পনা আগেই করা ছিল, অনেক কাজ আবার অর্ধেক করা ছিল। তাই আমি বলব, এভাবে এগিয়ে চললে এবং জনগণ  ধৈর্য ধরে সহযোগিতা করলে দ্রুতই দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে সফল হওয়া সম্ভব হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)