পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য কিছু সন্ত্রাসী হামলা

এই সিরিজের প্রথম পর্বে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে নৃশংস কিছু সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে জেনেছেন নিশ্চয়ই! যেসব হামলায় প্রাণ হারায় হাজার হাজার নিস্পাপ মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় এই সিরিজের শেষ পর্বে আমরা জানব মানব ইতিহাসের আরো কিছু রক্তাক্ত অধ্যায় সম্পর্কে-

মে ২০১৩ এট্যাক 
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে ২০১৩ সালে ঘটে যায় মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা। ২০১৩ সালের মে মাসের ১৫ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত ইরাকের উত্তর এবং মধ্যভাগে বর্ণগত কারণে প্রায় ১৫ টির ও বেশি বোম্ব ব্লাস্ট এবং ম্যাস শুটিং সংগঠিত হয়। এই হামলাগুলোতে প্রাণ যায় ৫ শতাধিক মানুষের। যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী এবং শিশু। ১৫ মে প্রথম এট্যাক হয় বাগদাদে। সেখানকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৯ টি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ করানো হয়। যাতে ২৩ জন নিহত এবং ১০৮ জন আহত হয়। এছাড়াও নিউ বাগদাদের খাদিমিয়া, কিরকুট এবং থামিয়াতে পরপর আরো অনেকগুলো বিষ্ফোরণ সংগঠিত হয়। এতে প্রাণ যায় আরো পঞ্চাশের বেশি মানুষের। মে মাসের ১৬ তারিখেও একইভাবে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সব বিষ্ফোরণে প্রাণ যায় আরো ৪০ জনের। প্রথম দিকের এই অ্যাটাকগুলো শিয়া জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে শিয়া মিলিশিয়ারা সুন্নিদের টার্গেট করে আরো সুইসাইড বোম্ব ও ম্যাস শুটিং পরিচালনা করে। এই হত্যাযজ্ঞ টানা ৫ দিন ধরে সংগঠিত হয়ে ২১ মে এই ঘৃণ্য হামলার সমাপ্তি ঘটে।

ম্যাসাকার অফ ট্রুজিলো 
১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কলোম্বিয়ার ট্রুজিলো শহরে সংগঠিত হত্যাকান্ডগুলোই ম্যাসাকার ওফ ট্রুজিলো নামে পরিচিত। এই সময়ে লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের সবথেকে ঘৃন্য সব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এসকল হত্যাকাণ্ড মূলত মাদক পাচারকারী গ্রুপ কালি কার্টেল এবং কমিউনিস্ট বিরোধী প্যারামিলিশিয়া গ্রুপ সংগঠিত করে৷ টার্গেট ছিল কমিউনিস্ট গেরিলা, তাদের মদদকারী সাধারণ জনগন এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য ও নেতারা। কালি কার্টেল এবং লস পেপেস নামক প্যারামিলিশিয়ারা শুধু টার্গেটদের হত্যা করেই শান্ত হননি। বরং হত্যার পূর্বে করেছে নৃশংস সব পদ্ধতিতে অত্যাচার। এসকল হত্যাকাণ্ডে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কলম্বিয়ার পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও সহায়তা করে। চার বছর ধরে সংগঠিত এসকল হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারায় ৫ শতাধিক সাধারণ মানুষ। এছাড়াও নিখোঁজদের সংখ্যা এখনো অজ্ঞাত।

সিনেমা রেক্স ফায়ার 
১৯৭৮ সালের ১৯ আগষ্ট ইরানে ঘটে যায় এক অমানবিক সন্ত্রাসী হামলা যা সিনেমা রেক্স ফায়ার বা সিনেমা রেক্স ম্যাসাকার নামে পরিচিত। এই হামলা হয় ইরানের মধ্য পশ্চিমের শহর আবাদানে রেক্স সিনেমা হলে। হামলাকারীরা  ১৯ আগস্ট সিনেমা চলা অবস্থায় সব দরজা বন্ধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সিনেমা হলের ভেতরে অবরুদ্ধ ছিল ৪ শত ২২ জন মানুষ। যারা সকলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এই হামলার আসল কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে এই হামলা ইরানি বিপ্লবের অংশ ছিল বলে ধারণা করা হয়। এই হামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে অবাক করা সব তথ্য। এতে ইরান সরকারের সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক জড়িত বলে ধারণা করা হয়। তবে ইরান সরকার এই ঘৃণ্য ঘটনার তদন্তের কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। হামলায় জড়িত অভিযোগে সাভাকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মনির তেহেরিকে তাৎক্ষনিক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২
জঙ্গীদের কালো থাবা থেকে মুক্তি মেলেনি উপমহাদেশের দেশগুলোরও। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্ডিয়া সকল স্থানেই একাধিকবার জঙ্গী হামলা সংগঠিত হয়। কিন্তু ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ তে সংগঠিত জঙ্গী হামলা উপমহাদেশের সকল ঘৃণ্য হামলাকে হার মানায়। মাটি থেকে প্রায় ৩১ হাজার ফুট উপরে এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানে জঙ্গীরা বিষ্ফোরণ ঘটায় যাতে প্রাণ যায় ৩২৯ জন সাধারণ যাত্রীর। এর মধ্যে ২৬৮ জন যাত্রীই ছিলেন কানাডিয়ায়। এছাড়াও ২৭ জন ইংল্যান্ডের নাগরিক এবং বাকিরা ছিলেন ইন্ডিয়ান। নাইন ইলেভেনের আগ পর্যন্ত এই হামলাটিই ছিল আকাশপথে সংগঠিত সবচেয়ে ঘৃণ্য আততায়ী হামলা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)