ভরাডুবিতে হতাশ বিএনপি, খুঁজছে নতুন মুখ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অবিশ্বাস্য’ ভরাডুবির পর তৃণমূলের হতাশা দূর করতে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে দল পূর্ণগঠন, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিল এবং দলের হারানো যৌলস ফিরে পেতে স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ যুক্ত করতে চায় দলটি।

মার্চে শেষ হচ্ছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির মেয়াদ। তবে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ছাড়া এই মুহুর্তে জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভাবছে না বিএনপি। আপাতত বর্তমান কমিটি ঠিক রেখে কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের কথা ভাবছে দলটি।

বিএনপিতে স্থায়ী কমিটি বরাবরই একটি আকর্ষণীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন পদ মন্তব্য করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সিনিয়র ও দায়িত্বশীল এক নেতা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপির রাজনীতি করা নেতাদের টার্গেট থাকে শেষ জীবনে হলেও স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। কিন্তু দলের চেয়ারপার্সন কারাগারে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করায় এই মুহুর্তে নতুন করে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার মতো পরিস্থিতি নেই।

তিনি বলেন, এখন স্থায়ী কমিটিসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা এখন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি। অনুমতি পেলেই শূন্যপদগুলো পূরণ করার কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি আরো বলেন, শুধু স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্যপদই নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন বিষয় ও প্রবীণ নেতাদের বয়স বিবেচনা করে স্থায়ী কমিটির দুই বা তার বেশি সদস্য রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পরীক্ষিত, ত্যাগী প্রবীণ নেতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদেরও এবার স্থায়ী কমিটিতে স্থান দিতে চায় দলের হাইকমান্ড।

দলটির নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য না হয়েও বেশ কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিভিন্ন বিষয়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। স্থায়ী কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠকে উপস্থিত না থাকতে পারলেও অনেক সময় বিশেষ আমন্ত্রণে কাউকে কাউকে বৈঠকে রাখা হচ্ছে। আবার অনেক সময় বৈঠকের আগে এবং পরে ওই গুরুত্বপূর্ণ নেতার মতামত ও পরামর্শ নিতে হচ্ছে স্থায়ী কমিটিকে। এ নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে স্থায়ী কমিটির পদপ্রত্যাশী সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। তাই এই মুহুর্তে দলের স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করা খুবই জরুরী বলেও জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা।

নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এখন দলকে পুনর্গঠন ও নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের মাঝে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে এবং ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের যাদের বয়স হয়েছে তারা সরে যাবো। কেননা দলটিকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

লন্ডনের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, দলের স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নতুন করে চমক থাকতে পারে। নবীণ ও প্রবীণদের সমন্বয়ে গঠিত হবে দলের স্থায়ী কমিটি। এই কমিটিতে স্থান পাবেন কর্মীবান্ধব, ত্যাগী, স্বচ্ছ ও পরিশ্রমী নেতারা। বয়স একটু কম হলেও সুবক্তা ও দু:সময়ে দলের পাশে থাকা কয়েকজন সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা এবার স্থান পেতে পারেন নতুন এই কমিটিতে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দূরদর্শী ও মাঠে থাকার মতো দুজন অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাকে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে অন্তর্ভুক্ত করার কথা উঠছে। সে বিবেচনায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দাবি রয়েছে। এছাড়া স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে আসতে পারেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মেজর হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমানের মতো প্রবীণ নেতারাও।

আর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আলোচনায় রয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থায়ী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হয় এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমান কমিটি ঘোষণার সময়ই ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। ফলে বর্তমানে পাঁচটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এই পাঁচটি পদের সঙ্গে আরো কয়েকজন নিজে থেকে সরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সেই হিসেবে স্থায়ী কমিটিতে ৭ থেকে ৮জন নতুন মুখ দেখা যেতে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)