মিষ্টি কুমড়ার এই উপকারিতাগুলো জানতেন?

মিষ্টি কুমড়া আমাদের দেশে পরিচিত একটি সবজি। এটি দেখতে যতটা সুন্দর, এর উপকারিতাও ততটাই বেশি। ভাজা, ভাজি, ভর্তা কিংবা ঝোল করে তো খাওয়া যায়ই, মিষ্টি কুমড়া দিয়ে তৈরি করা যায় সুস্বাদু হালুয়া। আপনি যদি মিষ্টি কুমড়া খেতে পছন্দ না করেন, তবে আপনি অনেক স্বাস্থ্যোপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স, সি এবং ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার, ক্যারটিনয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের ধারক। এছাড়াও বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই সবজিটি আমাদের দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধক কোষ গঠন করে।

ক্যান্সার দূরে রাখে

মিষ্টি কুমড়ায় থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যেটা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কম রাখতেও ভূমিকা পালন করে। আর্টারির দেয়ালে চর্বির স্তর জমতে বাধা প্রদান করে। ফলে মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে হৃদরোগও প্রতিরোধ করা যায়।

চুল ও ত্বক ভালো রাখে

একটি মিষ্টি কুমড়াতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। তাই চকচকে উজ্জ্বল চুল ও সুন্দর ত্বকের জন্য নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।

Mishti-kumra-2

রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে

মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে বিটাক্যারোটিন। বিটাক্যারোটিন এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরের ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দূষণ, স্ট্রেস ও খাবারে যেসব কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেগুলোর কারণে ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ হতে শুরু করে। ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজের ফলে শরীরের ভালো কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে এবং খারাপ কোষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সবুজ, কমলা, হলুদ রঙের সবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি পরিমাণে থাকে। তাই মিষ্টি কুমড়া ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য

মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজ গর্ভবতী মায়েরা তাদের অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যর জন্য নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়া গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

চোখের যত্নে

এককাপ পরিমাণ রান্না করা মিষ্টি কুমড়া আমাদের চোখের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অন্যান্য খাবার থেকে ১০০ গুণ বেশি কাজ করে। বিটা-ক্যারোটিন ও আলফা-ক্যারোটিন মত ক্যারটিনয়েড সমূহ চোখের ছানি পড়া রোধ সহ চোখের রেটিনা কোষ রক্ষা করে। তাই চোখকে সচল ও সুস্থ রাখতে আপনার খাদ্য তালিকায় মিষ্টি কুমড়া যোগ করুন।

Mishti-kumra-3

ওজন কমাতে

কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে একটি উপযুক্ত খাবার। এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার উচ্চ পটাসিয়াম কন্টেন্টও খুব সুন্দরভাবে আপনার শরীরের বাড়তি মেদটুকু সযত্নে ঝড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যারা তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিব্রত তারা নিঃসন্দেহে কুমড়া খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় তা সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই।

বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না

মিষ্টি কুমড়াতে আছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা

মিষ্টি কুমড়ার বিচি আমরা সবজির আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেই। অথচ এটি আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এটি এন্টি অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। কিছু কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এর ভূমিকা অপরিসীম। প্রোস্টেড এবং ব্লাডারের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে (১০০গ্রামে) প্রোটিন আছে ২৯.৮৪ গ্রাম, যা আমরা এক টুকরো (১০০গ্রাম) মুরগীর মাংসে পেয়ে থাকি। অর্থাৎ উৎকৃষ্ট মানের এবং যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন পেতে কম খরচে এটি একটি সহজলভ্য খাবার।

কুমড়ার বিচিতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম আছে যা উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। হার্ট এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও এর ভুমিকা অপরিসীম। কারণ এতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড পলি আনস্যাচুরেটেড এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড আছে যা হার্ট এবং মস্তিষ্কের সুস্থতায় অত্যাবশ্যক। তাছাড়া ও ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য কিছু পুষ্টি উপাদানের শোষনেও ভুমিকা রাখে।

kurmra-4

মিষ্টি কুমড়ার বিচি কিভাবে খাবেন

সাধারণত পাকা মিষ্টি কুমড়ার বিচিই খাওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট। মিষ্টি কুমড়ার বিচি সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে শুকনো করে তাওয়া বা ফ্রাই প্যানে টেলে মচমচে করে ভেজে (অবশ্যই তেল ছাড়া) কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিদিন শুধুমাত্র ভাজা বিচি চিবিয়ে, মিক্সড ফলের সাথে অথবা সালাদে যোগ করে খাওয়া যায়। অনেকক্ষেত্রে ব্লেন্ডারে গুড়ো করে বিভিন্ন ভর্তায় মিশিয়ে, স্যুপে মিশিয়ে অথবা সরাসরি ভর্তা বানিয়ে, সবজি রান্নায় ও মিশিয়ে খাওয়া যায় এবং শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের খিচুড়ি বা অন্য তরল খাবারে মিশিয়ে বাড়তি পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

মিষ্টি কুমড়ার জুসের উপকারিতা

মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এর তৈরি জুস বা রস ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।এটি তৈরির পদ্ধতিও বেশ সহজ। মিষ্টি কুমড়া ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ব্লেন্ডারে দিন। সামান্য পানি দিন। এখন এতে পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে চিনির পরিবর্তে মধু খেলে এটি বেশি কার্যকর হবে।

kumra-5

মিষ্টি কুমড়ায় খুব কম পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় ক্যালরি পাওয়া যাবে মাত্র ২৬। মিষ্টি কুমড়ার জুস খেলে তা শরীরে বাড়তি ক্যালরি জমা হতে বাঁধা দেয়। সাধারণত ব্যায়ামের পরে মিষ্টি কুমড়ার জুস খেলে তা দারুণ কাজ করে। এটি হজমে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে কোষ্টকাঠিন্য কমায়।

মিষ্টি কুমড়ার জুসে থাকা ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমায় যা ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি যেকোনো ধরনের সংক্রমণও কমায়। মিষ্টি কুমড়ার জুস ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে মিষ্টি কুমড়ার জুসের সঙ্গে যদি মধু মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে তা ভালো ঘুমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)