সাতক্ষীরায় সজিনার বাম্পর ফলন

জেলায় সজিনার বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজার ভরপুর সজিনাতে। উৎপাদন খরচ ও পরিচর্যা কম বলেই চাষীরা সজিনা চাষে আগ্রহী। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত সজিনা এখন রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন পাইকারী ব্যবসায়িরা জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে সজিনা ক্রয় করে ঢাকার মোকামে বিক্রি করছে। মৌসুমের শুরুতে ২শ’ টাকা কেজি দরে সজিনা বিক্রয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেতারা তবে কিছু দিন পরে তা কমে ৪০/৫০ টাকায় এসে দাঁড়ায়। তখন দাম কমায় খুশি হয় ক্রেতারা।

স্বাদে ও গুণে ভরপুর এ সবজিটি সকলের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রাম পর্যায়ে সজিনার ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে সজিনার চাষ হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে সজিনার উৎপাদন করতে পারলে অন্যান্য যেকোন সবজি উৎপাদনের থেকে এটি লাভজনক হবে।
ইংরেজীতে সজিনার নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’ যার অর্থ ঢোলের লাঠি। সজিনার ইংরেজী নামটি অদ্ভুত হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এটি নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। বিশেষ করে গাছ বৃদ্ধিকারক হরমোন, ঔষধ, কাগজ তৈরী ইত্যাদি বিষয়ে। বহু দিন হতেই আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

সজিনার ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিবেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাতা শারীরিক শক্তি ও আহারের রুচির উন্নতি হয়। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। ভারতীয়রা এটির স্যুপ খেয়ে থাকে। এ সময়ে ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকেরই মুখে স্বাদ থাকে না। আর এ স্বাদকে ফিরিয়ে আনতে সজিনার জুড়ি নেই।

সজনার ফুল সর্দি কাশিতে, যকৃতের কার্যকারীতায়, কৃমি প্রতিরোধে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহয়তা করে। সজিনার ডাটাতে প্রচুর এমাইনো এসিড আছে। সজিনার বীজ থেকে তেল ও পাওয়া যায় যা বাতের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ঘড়ি ঠিক করার জন্য যে বেল ওয়েল ব্যবহার হয় তা এর বীজ হতে পাওয়া যায়। সজিনা চরম পরিবেশ গত অবস্থা সহ্য করতে সক্ষম। ২০ হতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সজিনা ভাল জন্মায় এবং যেসব এলাকায় ২৫০ হতে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ভাল জন্মায়। বেলে দোঁআশ হতে দোয়াঁশ এবং পিএইচ ৫.০ হতে ৯.০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে। সজিনা চাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয়না। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভাল হয়। সজিনা বৃক্ষটি বীজ ও ডাল এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। তবে সাতক্ষীরাতে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে সজিনার চাষ হয়।

খাদ্যের পুষ্টিগুণ অনুযায়ী সজিনাতে প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্যপোযোগী পুষ্টি উপাদান হচ্ছে জ্বলীয় অংশ ৮৩.৩ গ্রাম, খনিজ ১.৯ গ্রাম, আঁশ ৪.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬০ কিলোক্যালোরি, প্রেটিন ৩.২ গ্রাম, চবি ০.১ গ্রাম, শর্করাা ১১.৪ গ্রাম, ক্যলশিয়াম ২১.০ মিলি গ্রাম, লোহা ৫.৩ মিলি গ্রাম, ক্যারোটিন ৭৫০ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিনএ ০.০৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিনবি (১)০.০২ মিলি গ্রাম, ভিটামিন ৪৫.০ মিলি গ্রাম।

সজিনা চাষের কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই জেলা কৃষি খামারবাড়ির। তবে জেলা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুল মানান জানান, সজিনা একটি লাভজনক সবজি। রোগবালাই প্রায় নেই এবং উৎপাদন খরচ খুব কম। তাই কৃষকদের সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সজিনা উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে সজিনা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে কৃষি কর্মকর্তারা নানামুখি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

দৈনিক সাতক্ষীরা/জি,এম,কে

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)