পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র দেশগুলো

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড় বিভিন্ন দেশ, আছে কোটি কোটি মানুষ। দেশের ভিন্নতা অনুযায়ী রয়েছে ভিন্ন সংস্কৃতি আর মানুষের মূল্যবোধেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। আবার পার্থক্য ভৌগলিক পরিসরেও। পৃথিবী জুড়ে আছে এমন কিছু দেশের নাম যেগুলো রূপে অথবা গুণে কিছুতেই অপূর্ণ নয়৷ তবে পৃথিবীতে তাদের পরিসর খুবই ক্ষুদ্র। চলুন জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশগুলো সম্পর্কে-

. স্টেট অব ভ্যাটিকান সিটি

ইতালীর রোমে অবস্থিত এই শহরটি মাত্র ০ দশমিক ১৭ স্কয়ার মাইল। তবে এই শহরটি বিখ্যাত পোপের স্বদেশ ও নানা ধর্মের আতিশয্যের কারণে। ছোট্ট এই শহরটির জনসংখ্যা মাত্র ৮০০ জন। এর মধ্যে মাত্র ৪৫০ জন এই দেশের নাগরিক। বাকিদের নাগরিকত্ব অন্য দেশের বা অন্য কোনো শহরের। ১৯২৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ইতালীয় সরকার কর্তৃক সর্বপ্রথম দেশটির সার্বভৌম ক্ষমতা দেয়া হয়। ক্ষুদ্র এই দেশটির তখন থেকেই নিজস্ব মুদ্রা, পাসপোর্ট, নিজস্ব সিলমোহরকরণসহ নিজ দেশ পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত আছে। তবে দেশটির করারোপণ করতে পারেনা। তাদের এই দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে সুইস গার্ড। এছাড়াও পোপদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে এই সুইস গার্ড। যেটি ১৫০৬ সাল থেকে প্রবর্তিত হয়। যাদের খুব ধর্ম প্রীতি আছে বা ভ্রমণপ্রিয় তাদের ওই ছোট দেশের চমৎকার চার্চগুলো দেখার জন্যে হলেও ভ্রমণ করা উচিত৷ এটি এমন একটি ক্ষুদ্রতর দেশ যেটির বৈচিত্র্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। অবাক করে দিবে এর নানান সংস্কৃতি।

. মনাকো

দেশটির আয়তন মাত্র ০ দশমিক ৭৫ স্কয়ার মাইল। মনাকো বেশ সমৃদ্ধশালী একটি দেশ যারা বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। দেশটির অবস্থান ফ্রান্সের সীমান্ত বরাবর। যদিও এর পতাকা মোটামুটি একইভাবে মিলে যায় ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পতাকার সঙ্গে। দুই দেশের পতাকার পার্থক্য মাত্র পতাকাদ্বয়ের প্রশস্ততায়। ইন্দোনেশিয়ার পতাকা সামান্য বেশি প্রশস্ত।

. নাউরো

অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট এক দ্বীপদেশের নাম নাউরো৷ দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৮ স্কয়ার মাইল। অথচ রূপে দ্বীপটি যেন এক অনন্য সুন্দর। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাত্র ১০ হাজার মানুষের বসবাস অস্ট্রেলিয়ান এই ক্ষুদ্র দ্বীপে। তবে দ্বীপটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো দ্বীপটিতে মাত্র ১০ ভাগ লোক চাকরীজীবি যাদের পুরোটাই সরকার কর্তৃক প্রদত্ত। আর বাকি ৯০ ভাগ বেকার৷ নাউরো দেশটিতে সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো জনসংখ্যার শারীরিক স্থুলতা। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্থুলকায় আকৃতির জাতি হিসেবে এরা পরিচিত। পুরুষদের মধ্যে ৯৭ ভাগ পুরুষই এই সমস্যায় ভুগে। অন্যদিকে, মহিলাদের মধ্যে ৯৩ ভাগ। স্থুলতার কারণ বশত ২ ধরণের মারাত্মক ডায়েবেটিক্সে ভুগে দেশটির জনগণ।

. টুভালু

অস্ট্রেলিয়ার উত্তর পূর্ব পাশে অবস্থিত এই দ্বীপটির পূর্ব নাম ছিলো এলাইস দ্বীপ। দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১০ স্কয়ার মাইল। অথচ এর জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি। এই হাজারখানেক জনগণের সেবা প্রদানে দ্বীপটিতে হসপিটাল মাত্র একটি। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ঘনবসতি ৩৮৪ জন করে। তবে দ্বীপটি নিম্নভূমি। সমুদ্র উচ্চতা থেকে দ্বীপটির সর্বোচ্চ ভূমিটি মাত্র ১৬ ফিট উপরে। ১৯৮৬ সালে সমুদ্রের নীচে দ্বীপটির কয়েকটা গুহা আবিষ্কার হয় যেগুলো থেকে ধারণা করা হয় হাজার বছর আগে দ্বীপটি সমুদ্র থেকে আরো উচ্চতায় ছিলো। কিন্তু সময়ের পার্থক্যে এর ব্যবধান কমে আসছে।

. স্যান ম্যারিনো

স্যান ম্যারিনো বোধ হয় সবচেয়ে পুরাতন সার্বভৌম রাষ্ট্র যেটি এখনো টিকে আছে তার ৩২ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে। রাষ্ট্রটির আয়তন মাত্র ২৩ দশমিক ৫ স্কয়ার মাইল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই রাষ্ট্রটির এক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ১৮৬১ সালে স্যান ম্যারিনো সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে এক চিঠি বিনিময় করে যেখানে স্যান ম্যারিনো সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা দাবি করে। বিনিময়ে আব্রাহাম লিংকনকে সে দেশের সসম্মানে নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব পাঠায়। লিংকন সাদর আগ্রহে এই প্রস্তাবে রাজি হন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)