‘নতুন ব্যাংক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে

>> বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মালিক বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন
>> দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক
>> পিপলস ব্যাংকের মালিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম এ কাশেম

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির আকার বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন নেই। এরপরও রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পেয়েছে তিনটি ব্যাংক। এতে অর্থনীতিতে সুফলের বিপরীতে উল্টো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ব্যাংকিং খাত। এমতাবস্থায় বিভিন্ন মহলের সমালোচনা সত্ত্বেও সরকার গঠনের দেড় মাসের মাথায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক তিনটি হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য সিটিজেন ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংক।

নতুন তিন ব্যাংক অনুমোদন প্রসঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নতুন ব্যাংকের অনুমোদন সমর্থন করি না। কারণ আমাদের অর্থনীতির যে আকার এ অবস্থায় নতুন ব্যাংক প্রয়োজন ছিল না।

তিনি বলেন, এখন ব্যাংকিং খাতের আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন ব্যাংকগুলো উচ্চসুদে আমানত সংগ্রহ করতে চাইবে। এতে সুদ হার বেড়ে যাবে। ফলে ঋণের চাহিদা কমে যাবে। এখন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। সুদহার বাড়লে বিনিয়োগে আরও সমস্যা হবে। সর্বপরি দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন সমস্যা থাকা ব্যাংকগুলোকে একত্রীকরণ করা হবে। এ জন্য মার্জার আইন করতে চেয়েছিলেন। এখন তা না করে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিচ্ছে। যা এ খাতকে আরও চ্যালেঞ্জে ফেলবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের যে অর্থনীতি তাতে ৪০টি ব্যাংকই বেশি। যেগুলো আছে সেইগুলোই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। এর মধ্যে নতুন ব্যাংক আরও সংকট সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, এখন যেসব ব্যাংক রয়েছে তাদের খেলাপি ঋণ, ব্যবস্থাপনা, পরিচলনার ও দক্ষজনবল পেতে সমস্যা হচ্ছে। এরমধ্যে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনে আমানত সংগ্রহ করা কঠিন হবে। এখন ব্যবসার ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামবে। যা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।

সাবেক এ গভর্নর বলেন, এখন যেসব নতুন ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করছে, তারা ভালো নেই। আর তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুনত্ব কোনো কিছু দেখাতেও পারেনি। যেহেতু পূর্ব অভিজ্ঞতায় কেনো সুফল আসেনি, সেহেতু নতুন ব্যাংক খুব চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় পড়বে।

প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, উচিত ছিল যেসব ব্যাংক সমস্যায় আছে তাদের সংযুক্ত করে ব্যাংকের সংখ্যা কমানো। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক কমিয়ে আনা। কিন্তু তা না করে উল্টো নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিচ্ছে। এটি কোনো ইতিবাচক ফল আনবে বলে মনে হয় না।

কার্যক্রম শুরু করতে নতুন তিনটি ব্যাংককে নীতিগত অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন চারশ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচশ কোটি টাকা করতে শর্ত দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, দেশে অর্থনীতি, জিডিপির আকার বড় হয়েছে। নতুন ব্যাংকে যেসব গ্রাহক আমানত রাখবে তাদের স্বার্থ রক্ষায় এ শতর্ জুড়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এখন দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৫৯টি। নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করলে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২টিতে। ব্যাংকিং খাতে নানাবিধ সঙ্কট চলছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দিকে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে অনাগ্রহ জানায়। তবে সরকারের চাপে শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

সরকারের প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের কয়েকটি আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকের আমানতও ফেরত দিতে পারছে না। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে।

এদিকে অনুমোদন পাওয়া বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের’ প্রধান উদ্যোক্তা হলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। যদিও শুরুতে ‘বাংলা ব্যাংক’ নামেই অনুমোদনের আবেদন জমা দেয়া হয়েছিল। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই।

দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক হলেন বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক।

পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্ত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যাংকটির আবেদন করা হয়েছে।

বিধি মোতাবেক, ১০ লাখ টাকা ফি দিয়ে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পেতে আবেদন করতে হয়। আর চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে চারশ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন লাগে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)