ধুলোর দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

রাজধানী ঢাকা দিন দিন দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। কোনো মৌসুমেই নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারে না। বর্ষাকালে রাজধানীবাসীকে ভুগতে হয় জলাবদ্ধতায় আর শুষ্ক মৌসুমে পোহাতে হয় ধুলোর দুর্ভোগ।

উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলা দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। বর্তমানে রাজধানীতে চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজের কারণে ধুলোর দুর্ভোগ অনেক বেশি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলেছে, রাজধানীতে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা রাস্তার দু’পাশে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। এ ছাড়া রাজধানীজুড়ে চলছে উন্নয়ন কাজ, ফলে যানবাহন চলাচলের সময় ধুলাবালি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ধুলা দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ধুলা দূষণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এলার্জি, চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগ ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ধুলা দূষণে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি একদিকে যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে তেমনি আর্থিক ও পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় অবিলম্বে ধুলা দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

রাজধানীর মিরপুর থেকে প্রতিদিন কারওয়ান বাজার অফিস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী সুলতান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একদিকে অতিরিক্ত যানজট, নানা নাগারিক ভোগান্তি এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ধুলোর দুর্ভোগ। মিরপুর থেকে শুরু করে পুরো রাজধানীতেই ধুলোর বিড়ম্বনা। রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে মাস্ক পরতে হয়। আর বাতাসে ধুলো ছড়িয়ে পড়ায় জামা কাপড়, চুল, ত্বকে ধুলোর প্রলেপ পড়ে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিও। এসব দুভোর্গ থেকে নগরবাসী কি নিস্তার পাবে না? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর উচিত নাগরিকদের এমন দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

এদিকে উন্নয়নমূলক কাজের কারণে ঢাকা মহানগরীতে সৃষ্ট ধুলাবালি প্রতিরোধে সকাল-বিকেল রাস্তায় পানি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ২৮ জানুয়ারি এ নির্দেশের পাশাপাশি ঢাকা শহরে যাদের কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুইবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালত বলেছেন, রাজধানীর যেসব জায়গায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে, সেসব জায়গায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এমনভাবে ঘিরে ফেলতে হবে, যাতে শুকনো মৌসুমে ধুলো ছড়িয়ে বায়ু দূষণ বাড়তে না পারে। পাশাপাশি ‘ধুলাবালি প্রবণ’এলাকাগুলোতে দিনে দুইবার করে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

dhaka

ধুলাবালির সমস্য সমাধানে সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর কাজ করছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। তবে পর্যাপ্ত জনবল ও গাড়ি না থাকায় সব এলাকাতেই পানি ছিটাতে পারছে না সংস্থা দুটি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সকাল-বিকেল সড়কে গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানোর কাজ করছি। প্রতিদিন প্রাইমারি সড়কের ৫০ কিলোমিটার পানি ছিটানো হচ্ছে। আমাদের ১১টি গাড়ি দিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পানি ছিটানো হয়। প্রতিটি গাড়িতে ১০ হাজার লিটার পানি থাকে। এছাড়া প্রতিদিন বই মেলাতে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে।

ধুলাদূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে শনিবার মানববন্ধন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলা দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। এ মৌসুমেই হাজার হাজার ইটভাটায় ইট প্রস্তুত ও পোড়ানোর পাশাপাশি মহানগরীতে অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি বেড়ে যায়। মেট্রোরেলসহ অন্যান্য মেগাপ্রকল্পের জন্য রাস্তা ও আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, গ্যাস-পানি, বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মাটি, বালি, ইটসহ নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ট্রাকে করে শহরে পরিবহন করা, ড্রেন পরিষ্কার করে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা, দোকানপাট ও গৃহস্থালির আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে রাখা, মেরামতহীন ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচল, পাকা ভবন নির্মাণের সময় মাটি, বালু, ইটসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা-ফুটপাতে ফেলে রাখা, পুরাতন ভবন ভাঙা, মেশিনে ইট ভাঙা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধোঁয়া, ইত্যাদি ধুলা দূষণের অন্যতম উৎস। এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ধুলা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ধুলা দূষণের কারণে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে রোগীর প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে ভর্তি হয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ভয়াবহ ধুলা দূষণের শিকার হচ্ছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)