৫১ শতাংশ শেয়ার বেচতে হবে বিদেশি আইসিটি কোম্পানিগুলোকে

বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে স্থানীয় উদ্যোক্তার কাছে ৫১ শতাংশ শেয়ার বেচতে হবে বিদেশি আইসিটি কোম্পানিগুলোকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও সেল হতে গত সপ্তাহে (৩১ জানুয়ারি) গেজেট আকারে প্রকাশিত ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮’ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিষয়টি এমনই।

এই নীতিমালার আইনি কাঠামোয় বলা হয়েছে ‘ডিজিটাল কমার্স খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিবিধান পালন করতে হবে, তবে বিদেশি ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দেশীয় কোনো ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ ব্যতীত এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না এবং দেশীয় ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থসমূহকে প্রাধান্য দেয়া।

আর নীতিমালার কর্মপরিকল্পনায় ডিজিটাল কমার্স ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল কমার্স খাতে বাংলাদেশি কোম্পানি ও অনুরূপ বিদেশি কোম্পানি ৫১:৪৯ ইক্যুইটি ভিত্তিক মালিকানা ব্যবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ করা।’

এতে ডিজিটাল কমার্সের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল বাণিজ্য যা ইন্টারনেট ও অন্যান্য ডিজিটাল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সকল প্রকার পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদন হয়ে থাকে।

আর ডিজিটাল কমার্স প্লাটফর্ম ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন যা ব্যবহার করে অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা, বিপণন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্ম পরিচালনা করা হয়।

ফলে উবারের মতো কোম্পানিগুলোও এই নীতিমালার আওতায় পড়ে যায়। এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

এ নীতির কারণে দেশীয় ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্স শিল্প অধিকতর বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ২০১৮ সালের জুলাইতে এই নীতিমালা মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার ৫১:৪৯ ইক্যুইটিভিত্তিক মালিকানার শর্তটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আপত্তির কথা জানায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

তাদের বক্তব্য ছিল, জাতীয় বিনিয়োগ নীতিতে ১০০ ভাগ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধাসহ এ সংক্রান্ত নীতি মেনেই এখানে ব্যবসা করছেন তারা।

এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘৫১:৪৯ ইক্যুইটিভিত্তিক মালিকানার শর্তটি’ সংশোধনের উদ্যোগ নিলে এবার আপত্তি তোলেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতির আওতায় ব্যবসা করছেন এ খাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, তারা বিডার আওতায় গিয়ে এখানে এসেছে। ফরেন ইনভেস্টমেন্টের কিছু রুলস ফলো করে এখন মার্কেট অপারেশনে আছে। গেজেট হওয়া এ নীতিমালা পাওয়ার পর বিডার বক্তব্য কী, তারা পুরো বিষয়টাকে কীভাবে দেখছে, সেটা বুঝতে হবে।

‘এছাড়া অনেকগুলো অর্গানাইজেশন আছে যারা এই নীতিমালায় পড়বে কিনা সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

এদিকে গেজেট হওয়া নীতিমালাটি এখনও দেখেননি বলে জানিয়েছেন দারাজের এমডি সৈয়দ মোস্তাহিদল হক। নীতিমালা দেখার পর এ বিষয়ে বক্তব্য জানানো কথা জানিয়েছেন তিনি।

আজকের ডিলের প্রতিষ্ঠাতা এবং বেসিস পরিচালক ফাহিম মাসরুর বলেন, গেজেট হওয়া নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫১:৪৯ ইক্যুইটিভিত্তিক মালিকানার শর্তটি দেশীয় ই-কমার্স খাতকে বিকশিত হবে। এটি এখন প্রতিপালন করা উচিত।

এই শর্ত সংশোধন বা তুলে নেয়ার বিষয়ে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট বিসিএস, বেসিস, ই-ক্যাব ও বাক্যসহ কয়েকটি সংগঠন সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তির কথা জানিয়েছিল।

ওই সভায় বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকারের বক্তব্য ছিল, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শুধু বিদেশি পণ্যগুলো তাদের ইচ্ছেমতো মূল্যে বিক্রি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাগুলো কুক্ষিগত করবেন। এতে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ ইকুইটি প্রদান করা হলে তারা এদেশ থেকে মুনাফা পাচার করার সুযোগ পাবে।

একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানিক বৈঠকে দেশীয় ই-কমার্স উদ্যোক্তারা আবারও বিষয়টি নিয়ে সম্মিলিতভাবে আপত্তির কথা জানান। সেখানে তারা বলেন, শর্তহীনভাবে এ সুযোগ দেয়ার পক্ষে তারা নন। শর্তহীন শতভাগ বিদেশি মালিকানা অনুমোদন দেয়া হলে তাদের অস্থিত্ব বিপন্নের আশংকা রয়েছে ।

প্রিয়শপ ও আজকের ডিলের সঙ্গে বাগডুম ডটকম, কিকসা, রকমারি, পিকাবু, অথবা, এনআরবি বাজার এবং হাংরিনাকি ডটকম ওই বৈঠকটির আয়োজক। সেখানে আয়োজকরা ছাড়াও ই-কমার্স খাতের ইকোসিস্টেমে থাকা বিভিন্ন উদ্যোগের প্রতিনিধি ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।

তখন উদ্যোক্তারা জানান, বিদেশি মালিকানাধীন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান বাজারে পণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে কমিয়ে বাজার দখল করার উদ্যোগ নিয়েছে।

শেষে ই-কমার্স খাতে শর্তসাপেক্ষে বিদেশিদের শতভাগ বিনিয়োগের সুযোগ দিতে অনাপত্তির কথা বলেন তারা।

সে সব শর্তের মধ্যে রয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান কোনো একক বিনিয়োগ হিসেবে আসতে পারবে না।

‘বিদেশে নিবন্ধিত হোল্ডিং ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’ হিসেবে আসতে হবে এবং বিদেশে নিবন্ধিত হোল্ডিং কোম্পানিতে কমপক্ষে ৫ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থাকতে হবে, ই-কমার্স কোম্পানির প্রযুক্তি প্লাটফর্ম সম্পূর্ণ দেশিয় প্রযুক্তিবিদের মাধ্যমে তৈরি হতে হবে, সব ধরনের ডেটা দেশের অভ্যন্তরে হোস্টেড করতে হবে, শুধুমাত্র ‘মার্কেটপ্লেস’ মডেলে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ হতে পারবে ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের নামে এবং বিদেশি ব্যবস্থপনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ সীমা কার্যকর থাকবে।

তবে শেষ পর্যন্ত গেজেট হওয়া নীতিমালায় বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায় দেশীয় ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্বের শর্তটিই বহাল রাখা হলো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)