সৌন্দর্যে ভরপুর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন!

অপার সৌন্দর্যে ভরপুর এই পৃথিবী জুড়ে রয়েছে এমন কিছু স্থান যেগুলো দেখলে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও স্বর্গ বলে ভ্রম হয়! এ যেন পৃথিবীর জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত এক অদ্ভূত উপহার। অবিশ্বাস্য এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর প্রায় লাখো মানুষ জড়ো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৬ টি বিখ্যাত বড় নদী জুড়ে এই সৌন্দর্যের অবস্থান। ইউনাইটেড স্টেটসে ১৭তম জাতীয় পার্ক হিসেবে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭৭ মাইল দীর্ঘ এবং প্রস্থে প্রায় ১৮ মাইল। পার্কটির সবচেয়ে সরু অঞ্চলটির প্রস্থ প্রায় ৪ মাইল জুড়ে।

পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম খাদ হলো তিব্বতে, যেটির নাম আরলুং সাঙপো। এর গভীরতা প্রায় ১৭ হাজার ৫৬৮ ফিট, যেটি পৃথিবী বিখ্যাত ক্যানিয়ন। অন্যদিকে, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গভীরতা ৬ হাজার ৯৩ ফিট। ১৮৬৯ সালে অপরূপ এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে সর্বপ্রথম অভিযান শুরু করেন জন পাওয়েল। যেটি পরবর্তীতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামকরণ করেন জন পাওয়েল। এসব অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য্য এতো বছর লুকিয়ে থাকতো আড়ালে আবডালে। বর্তমান পৃথিবীর যোগাযোগের আধুনিকতায় মানুষ ধীরে ধীরে জানছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা এমন আশ্চর্য লীলাভূমির গল্প। বাড়ছে সৌন্দর্য্য দেখার আগ্রহবোধ। দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা পাল্লা দিয়ে দেখছে পৃথিবীর বিস্ময় সৌন্দর্যকে। ১৯১৯ সালের দিকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের দর্শক ছিলো মাত্র ৪৪ হাজার ১৭০। যেটিতে বর্তমানে প্রতি বছর হয় প্রায় ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন দর্শক।

টেডি রোজভেল্ট ছিলেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের এক অনবদ্য সহায়তাকারী। একমাত্র তিনিই চেয়েছিলেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সকলের জন্য উন্মুক্ত হোক৷ বাড়ুক এর দর্শকপ্রিয়তা এবং তার রেশ ধরেই পরবর্তীতে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভে পরিণত হয়েছে৷ যেটি প্রণয়ন করা হয় ১৯১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে। যেহেতু এই খাদটির গভীরতা অনেক বেশি সে কারণে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে আবহাওয়ার পার্থক্যও সেই তুলনায় বেশি। এটি নির্ভর করে আপনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কোনো স্থানে অবস্থান করছেন। সেখানে সবচেয়ে ঠাণ্ডা ও আর্দ্র অঞ্চলটি, সবচেয়ে গরম ও শুকনো অঞ্চল থেকে পার্থক্য মাত্র ৮ মাইল দূরত্ব। এতে মাত্র ৮ ধরণের স্থানীয় মাছ আছে যেটি কলোরাডো নদী হয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে আসে। এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নটি এতোটা বিশাল এটি ছাড়িয়ে যায় বিস্তৃত আইল্যান্ড নামে পরিচিত রোড আইল্যান্ডকেও।

ধারণা করা হয়, এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বিস্তীর্ণ স্থানের আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে প্রায় শত শত গুহা। এই হাজার খানেক গুহার মধ্যে প্রমাণিত গুহা আছে প্রায় ৩৩২টি৷ এর মধ্যে একটি গুহা জনগণের জন্য প্রসারিত করে রাখা আছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পার্শ্ববর্তী আছে শুধুমাত্র একটি গ্রাম। যেটি যুক্তরাষ্ট্রের একদম মূল ভূমিতে অবস্থিত এবং এর জনসংখ্যা মাত্র ২০৮ জন। ১৯৮১ সালে এর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সবচেয়ে কম সময়ে দৌড়ে দ্রুতগামী দৌড়বিদের জায়গাটি করে নিয়েছিলো এলিয়ান কুরেটন। এর প্রায় ৩০ বছর পর এই রেকর্ডটি ভেঙেছে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ব্যবধানে। জ্যারেড স্কট ২০ দশমিক ৮ মাইল দৌড়েছেন ৩ ঘণ্টা ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডে।

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে থাকাকালীন সময়ে আপনি বোনাস পেয়ে যেতে পারেন বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ। সেখানে প্রায় ৯০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৫০ প্রজাতির পাখি, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণীর এক বিশাল সংগ্রহ আছে। এটি সমুদ্রের উচ্চতা থেকে প্রায় ৭ হাজার ফিট উঁচুতে অবস্থিত এবং এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নটি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)