সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার পর থেকে অবিভক্ত বাংলাদেশসহ পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। ফলে সংখ্যালঘুদের অনেকেই পূর্ব বাংলা বা অধুনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যেতে শুরু করে। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পরবর্তী সংখ্যালঘুদের জমি শত্রু সম্পত্তি আইন পাশ করে সংখ্যালঘুদের সম্পদ কুক্ষিগত করার চেষ্টা করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন কোন নতুন ঘটনা নয়। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, সরকারি হস্তক্ষেপ, সংঘটিত ঘটনার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ সংখ্যালঘু বসতি এলাকাগুলোতে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা না হলে সংখ্যালঘুদের দেশ ত্যাগের প্রবণতা কমানো যাবে না।
শনিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা শারী আয়োজিত “ জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অধিকাংশ বক্তারা একথা বলেন।

সুরক্ষা নাগরিক অধিকার মর্যাদা (সুনাম) সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ নিমাই চন্দ্র মণ্ডল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, বাংলাদেশ দলিত এণ্ড মাইনরিটি হিউম্যান রাইটস মিডিয়া ডিফেণ্ডার ফোরামের সভাপতি রঘুনাথ খাঁ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অ্যাড. ফাহিদুল হক কিসলু, জেএসডি নেতা সুধাংশু শেখর সরকার, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, সাংবাদিক আমেনা বিলকিম ময়না, ইয়ারব হোসেন, জাগো যুব সংঘের সদস্য ফারুক হোসেন, সুনাম এর সাতক্ষীরা শাখার সদস্য সচীব অ্যাড. নাজমুন্নাহার ঝুমুর, গণফোরামের আলী নুর খান বাবুল, শারীর সমন্বয়কারী রঞ্জন বকসী নুপু, মরিয়ম মান্নান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শত্রু সম্পত্তি আইন করে হিন্দুদের জমিচ্যুত করার পাশাপাশি ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের প্ররোচনায় কয়েক’শ হিন্দু মন্দির, বাড়ি ভাঙচুর , লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায়নের পরবর্তী কালিগঞ্জেন ফতেপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গোবিন্দ লাল সরদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার মাকে দিগম্বর করে নির্যাতন, ডেমরাইলে নরেন মণ্ডল ও তাদের ছয় ভাইয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিশ্বানথপুরে জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরের নেতুত্বে নরেন সরকার ও তাদের ভাইদের বাড়ি ঘর, মন্দির ভাঙচুর, লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ, ওই পরিবারের এক গৃহবধূকে গণ ধর্ষণ, শ্যামনগরের ভুরুলিয়ায় দেবেন মণ্ডলের ছেলেকে হত্যা করে তার লাশ বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখাসহ বিভিন্ন ঘটনার বিচার হয়নি। একইভাবে বর্তমান সরকারের সময়ে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিল ফতেপুর ও চাকদাহে ১২টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও পরবর্তী সময়ে সদরের আগরদাড়ির গোপাল ঘোষাল, তাপস আচার্য, রমেন দাস, শিয়ালডাঙার নবকুমার মণ্ডল, দেবহাটার জগন্নাথপুরে সুভাষ ঘোষ ও তার ভাইদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, শ্যামনগরের নবাকীতে সাধু চরণ মণ্ডলের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। ফলে মনোবল ভেঙে হিন্দুরা দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। শুধু ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম নয়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টানকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। বৈঠকে গত ২২ নভেম্বর কালিগঞ্জের বিশ্বানাথপুরে হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে না, যারা দেশ ছেড়েছিলেন তারা ফিরে আসায় বর্তমানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বেড়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার কবীরের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করা হয়।

বিশেষ অতিথি বলেন, নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যে কোন ধরণের নিপীড়ন নির্যাতন প্রতিরোধে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা রাখবে। তবে দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে যেয়ে অনেকেই ভাল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব প্রতিরোধে প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

তবে প্রধান অতিথি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছে না তারা মুসলিমদের উপরও হামলা করেছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ন্যয় বিচার না হওয়ায় বিচার প্রার্থীরা হতাশ হচ্ছে। এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছার পাশাপাশি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মেসবাহ কামালের লেখা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্বদেশ এর নির্বাহী পরি চালক মধাব চন্দ্র দত্ত।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)