পাটকেলঘাটা থেকে মাদুর শিল্প বিলুপ্ত প্রায়

পাটকেলঘাটাসহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে প্লাস্টিকসহ আধুনিক বিভিন্ন মাদুরের ভিড়ে বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী মেলে মাদুর শিল্প। প্রয়োজনীয় পুঁজি, কাঁচামাল ও উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতাসহ নানা সংকট মাদুর শিল্প বিলুপ্তির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় অনেকেই ইতোমধ্যে পেশা বদল করেছে। এ শিল্প পাটকেলঘাটা থেকে বিলীন হতে চলেছে। তার একমাত্র কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব। প্রয়োজনীয় মাদুর তৈরির গাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্লাস্টিকের পাতি দিয়ে মাদুর অর্থাৎ বিছানা তৈরি করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মাদুর তৈরি গাছকে কারিকররা পাতি গাছ বলে। এক সময় জেলার প্রত্যন্ত অ ল থেকে মাদুর কেনার জন্য পাটকেলঘাটার দলুয়া বাজারে ভীড় জমাতো ক্রেতারা। এ অ লে মেলেও উৎপাদন হতো বেশ। যেসব জমিতে মেলে চাষ হতো সেখানে এখন ঘের আর ঘের। জানা যায়, পাটকেলঘাটার দলুয়া বাজারে মাদরা, কৈখালী, গাছা, খড়িয়াডাঙ্গাসহ প্রত্যন্ত অ লের সাধারণ মানুষ তাদের উৎপাদিত মাদুর বিক্রি করতে নিয়ে আসতো। কিন্তু একদিকে মেলের চাষ বন্ধ, অন্যদিকে কপোতাক্ষ নদ মরে যাওয়ায় মাদুর শিল্প বিলুপ্তির পথে। পাটকেলঘাটার দলুয়া, গাছা, সৈয়দপুরসহ আশে-পাশের কয়েকটি এলাকা মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ মেলের উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তৃণমূলের মাদুর শিল্প এলাকা। চাহিদার সাথে সংগতি রেখে মৌসুমের একটা বড় সময় জুড়ে শিল্পীরা ব্যস্ত থাকতেন মেলে দিয়ে মাদুর তৈরিতে। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে মাদুর শিল্পের অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। ইন্দ্রজিৎ কুমার ও কল্যাণী রানী বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি কাউন মেলের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। ফলে এক জোড়া মাঝারি ধরনের মাদুর উৎপাদনে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ বাজারে এ মাদুরের প্রতি জোড়ার পাইকারি দাম ৪০০ টাকা। এতে এক জোড়া মাদুরে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ থাকছে না। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এক জোড়া বড় আকৃতির মাদুর তৈরিতে উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ৪৫০ টাকা। অথচ এর বাজারমূল্য ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। মাদুর উৎপাদন থেকে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা আয় হয়। মাদুর শিল্পের এমন দুরবস্থার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এর শিল্পীরা জানান বলা না বলা অনেক কথা। তাদের মতে, মাদুরের প্রধান উপকরণ মেলের চাষ এখন একবারেই কমে গেছে। আর দু’এক জন যারা আবাদ করেন তার দামও গগনচুম্বী। একদিকে আধুনিক প্লাস্টিক শিল্পের আধিক্যে চাহিদা কম অন্যদিকে একটি মাদুর তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ হয় বাজারে ঠিক সে পরিমাণ দাম পাওয়া যায়না। এমন অবস্থায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ফলে উন্নত মাদুর তৈরি করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)