হ্যাকিংয়ের রবিনহুড!!!

কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকে দুনিয়া বদলে গেছে। বর্তমানে সকল কাজেই কম্পিউটারসহ ইকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। প্রায় সকল ইলেকট্রনিক মেশিনে এখন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকি। আর এই পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে ডিজিটাল লাইফের সাজানো গোছানো সংসার যদি কোনো টেকনিক কাজে লাগিয়ে বরবাদ করে দেয়া হয় তাহলে ব্যাপারটা খুবই অপ্রীতিকর হবে! হ্যাঁ, এ রকমের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেয় হ্যাকাররা আর যাদের কার্যকলাপ দেখে ইন্টারনেট সেলিব্রেটি বড় বড় তারকাসহ অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও বিপাকে পড়ে যায়। বিশ্ব বিখ্যাত এসব হ্যাকারেরা কখনো কখনো নিজের লাভের আশায় এই ধরনের অপরাধ করে থাকে আবার অনেক সময় তাদের হ্যাকিং এর পেছনে থাকে কিছু মহৎ উদ্দেশ্য। চলুন জেনে নেই কুখ্যাত এমন ৫জন হ্যাকার সম্পর্কে –

অ্যালবার্ট গঞ্জালেজ

1.হ্যাকিংয়ের রবিনহুড!!!

শুনতে অবাক লাগলেও অ্যালবার্ট গঞ্জালেজ এর কাছে অর্ধেক মার্কিনীদের ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার ছিল। তিনি স্যাডক্রু নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। তিনি দুই নাম্বার পাসপোর্ট দুই নাম্বার স্বাস্থ্য বীমা কার্ড এবং দুই নাম্বার জন্ম সনদপত্র বিক্রি করেও অনেক ইনকাম করেন। অ্যালবার্ট গঞ্জালেজ গ্রেফতার হবার পর ২০ বছরের দুটি সাজা দেয়া হয় যে সাজা তিনি এখনও ভোগ করছেন।

কেভিন পলসন

2.হ্যাকিংয়ের রবিনহুড!!!

তাকে ডার্ক দান্তে নামেও অনেকে জানেন। সম্পূর্ণ একটি রেডিও স্টেশনের সিস্টেম হ্যাক করে একটি লটারি জিতেন তিনি।ওই সময় তিনি পনেরো মিনিটের জন্য সকল ফোন লাইনের উপর কব্জা করে নেন। ওই অনুষ্ঠানটি হ্যাক করে জিতেন বিপুল পরিমান পুরস্কার। এভাবেই একের পর এক হ্যাকিং করার ফলে তিনি এফবিআই এর নজরে আসেন। অত্যন্ত সাহসী এই হ্যাকার পরে নিজেই এফবিআইয়ের সার্ভার এর উপর হামলা চালান এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই তা হ্যাক করে ফেলেন। শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি। কেভিন পাউলসেন একটি সুপার মার্কেট এর পুরো সিস্টেম হ্যাক করেন এবং এর জন্য তাকে ৫১ মাসের সাজা দেয়া হয়। সাজা কাটার পর কেভিন পাউলসেন সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন এবং মার্কিন পুলিশকে অনেকবার সাহায্য করেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েব সাইট মাইস্পেস ব্যবহারকারী সক্রিয় ৭৪৪ জন যৌন অপরাধী চেনার জন্য অপরিসীম ভূমিকা পালন করেন এক সময়ের এই কুখ্যাত হ্যাকার।

কেভিন মিটনিক

3.হ্যাকিংয়ের রবিনহুড!!!

কেভিন মিটনিকের কম্পিউটার হ্যাকার হওয়ার কাহিনী অনেক হৃদয়স্পর্শী।কেভিনকে মার্কিন ইতিহাসে মোস্ট ওয়ান্টেড সাইবার ক্রিমিনাল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। তার জীবন কাহিনী নিয়ে এই পর্যন্ত হলিউডে দুটি ছবি নির্মিত হয়েছে। তিন বছর জেলে রাখার পর তাকে তিন বছর পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়।পরে আবার দেড় বছরের জন্য জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয় কারণ জেল থেকে বের হওয়ার পরপরই তিনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এলার্ট প্রোগ্রাম হ্যাক করে সকল কর্পোরেট তথ্য চুরি করে নেন।কেভিন ৫বছর জেলে থাকার পর নিজেকে বদলে ফেলেন।তিনি সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ হয়ে যান। পরবর্তীতে মানুষের কম্পিউটার সিকিউরিটির উপরে বিভিন্ন টিপস দিতে শুরু করেন। বর্তমানে কেভিন সাইবার সিকিউরিটির উপর নিজের কোম্পানি চালাচ্ছেন।

জনাথন জেমস

4.হ্যাকিংয়ের রবিনহুড!!!

ইন্টারনেট দুনিয়ার কমান্ডারও বলা হয় যদিও বর্তমানে তিনি এখন আর বেঁচে নেই। কিন্তু জনাথন মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তার অসাধারণ হ্যাকিং কৌশল এর জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যাকার এর খেতাব অর্জন করেন। এই ছোট বয়সেই তিনি মার্কিন সরকারকে তছনছ করার শক্তি অর্জন করেন। জনাথনের কাছে মার্কিন সরকারের বেশিরভাগ ডেটাবেজের কপি ছিলো। এমনকি রক্ষা বিভাগ নাসার নেটওয়ার্কও তার হ্যাকিং এর আওতার বাইরে ছিলো না। জনাথন নাসার স্টেশন থেকে মহাকাশ স্টেশন পর্যন্ত সকল তথ্য বের করে ফেলেছিলেন। যদি বাজার মূল্য ধরা হয় তাহলে তার মূল্য হবে প্রায় ১৭ লাখ কোটি ডলারের মতো। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে নাসা তাদের নেটওয়ার্ক টানা তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলো। শত চেষ্টার পরও জনাথনকে গ্রেফতার করতে পারছিলো না পুলিশ। কারণ তাকে ট্রেস করা ছিলো প্রায় অসম্ভব। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে জনাথনকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং অনেকগুলো মামলা লাগিয়ে দেয়। জনাথন সকল মামলাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ২০০৮ সালে আত্মহত্যা করেন। আর এভাবেই শেষ হয় ইতিহাসের অন্যতম বড় হ্যাকার এর জীবন কাহিনী।

হামজা বেনডেল্লাজ

5.হ্যাকিংয়ের রবিনহুড!!!

হ্যাকিং জগতের রবিনহুড বলা হয় হ্যাকার হামজা বেনদেলাজকে। তিনি হ্যাকিং বিশ্বে বিএক্স -ওয়ান নামেও পরিচিত। বিশ্ববাসী তাকে কুখ্যাত হ্যাকার হিসেবেই জানে। কিন্তু হামজা বেনডেল্লাজ তার স্পাইআই কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার করে মার্কিন ব্যাংক হতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হ্যাক করেন এবং ব্যাংক হতে হ্যাককৃত সমস্ত অর্থ তিনি অসহায় দরিদ্র ফিলিস্তিনদের বিলিয়ে দেন এজন্য তিনি হ্যাকিং জগতে রবিনহুড নামেই সকলের কাছে পরিচিত। এটি জেনে অনেকেই প্রশ্ন করে যে পশ্চিমা বিশ্বের মতো হামজা বেনডেল্লাজ কি সকলের কাছে শুধুই একজন সাইবার অপরাধী নাকি সত্যিকারের রবিনহুড। হামজা ২১৭ টি ব্যাংক হ্যাক করেন এবং তার হ্যাককৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। হ্যাককৃত সব অর্থ তিনি অসহায় দরিদ্র ফিলিস্তিনদের বিলিয়ে দেন। পরবর্তীতে, থাইল্যান্ডে একটি এয়ারপোর্ট হতে গ্রেফতারকৃত হ্যাকার হামজা মার্কিন প্রশাসনের কাছে বন্দী হন।আদালতে তার বক্তব্য ছিল, “আমি কোনো পাপ করিনি, গরীবের পেট চাপা দিয়ে সমাজের দুর্নীতিবাজরা যে পয়সা ব্যাংকে জমা রেখেছিল আমি তা গরীবের পেটেই পৌছে দিলাম।” হ্যাকিংয়ের অপরাধে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে বলে তার মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং একটি ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিতে দেখা যায় হামজা বেনডেল্লাজ এর মতো একজনের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলছে। ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসছেন এবং এক হাত নেড়ে উপস্থিত দর্শকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। অনেকের মতে, ছবিটি ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। ছবির লোকটি হামজা বেনডেল্লাজ নয়। তবে এখনো প্রশ্ন থেকে যায় যে হামজা বেনডেল্লাজ জীবিত নাকি মৃত এবং জীবিত হলে তিনি এখন কোথায়?

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)