শ্যামনগর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যে শিক্ষক মন্ডলী অতিষ্ঠ

শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ,বি,এম নাজমুল হকের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে উপজেলার সকল শিক্ষক মন্ডলী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ, এ,বি,এম, নাজমুল হক শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে ঘুষ বাণিজ্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল ছাড় করা হয় না। যে শিক্ষক ঘুষের টাকা দিতে নারাজ তাকে ঘন্টা কি ঘন্টা অফিসে বসে থাকতে হয়। উপজেলার ১শত ৯১ টি স্কুলের মধ্যে ১শত ৬৩টি স্কুল স্লিপ এর আওতায় । প্রত্যেক স্লিপ এর চেকে স্বাক্ষর করাতে শিক্ষা কর্মকর্তা কে অগ্রিম দেড় থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। রুটিন মেন্টিং এর ৬২ টি স্কুলের প্রতিটি চেকে স্বাক্ষর করতে অগ্রিম ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে। ২০১৮ সালে ৩৮ জন সহকারী শিক্ষক যোগদানে প্রত্যেক শিক্ষক এর নিকট থেকে নিয়েছেন সাড়ে ৬শত টাকা এবং বেতন ছাড় করানের জন্য প্রত্যেকের নিকট ২ হাজার টাকা চেয়েছেন। টাকা না দেওয়ায় এখনও পর্যন্ত তাদের বেতন ছাড় হয়নি। সম্পূর্ণ নিয়ম ছাড়াই ডেপুটেশনে রয়েছে কিছু সংখ্যক শিক্ষক। তাদের নিকট থেকে ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা। ডেপুটেশনে থাকা কতিপয় শিক্ষকদের নাম দেওয়া হয়েছে যথা সহকারী শিক্ষক প্রতিমা রানী বৈদ্য ১৯০ নং গোলাখালী আকবর আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৮ নং যাদবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সহকারী শিক্ষক মোঃ আনারুল হককে ১৪২নং শৈলখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে ৫৬নং ভুরুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সহকারী শিক্ষক কানন বালা গাইনকে ১৫৮নং মধ্যম ঝাপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬১নং ভেটখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে রয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো শিক্ষক ডেপুটেশনে থাকলেও তাদের নামের তালিকা জানা সম্ভব হয়নি।
পুরাতন প্রধান শিক্ষক আপগ্রেড স্কেলের সংখ্যা ৪৭জন। সকলে মিলে আনুমানিক ৯০ থেকে ৯৫লক্ষ টাকা এরিয়া বিল পেয়েছে। তাদের নিকট থেকে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে ওই কর্মকর্তা। এছাড়া পেনশন কেস, চলতি দায়িত্বের পোস্টিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২২নং ভৈরবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র মন্ডল জানান, তার স্কুলের স্লিপ এর চেকে স্বাক্ষর করাতে গেলে শিক্ষা কর্মকর্তা তার কাছে অগ্রিম ৩ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। টাকা না দিতে পারায় তার স্লিপ এর চেকে স্বাক্ষর করেনি। প্রধান শিক্ষক ও অত্র স্কুলের সভাপতিকে বার বার সময় দিয়েও অফিসে উপস্থিত থাকেন না ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর অফিসে আসতে বলেও ঘুষের টাকা না দেওয়ার কারণে অশালীন কথা বলে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেন। এমন কি প্রধান শিক্ষককে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে উঠা বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলেন। এ ঘুষের টাকা শিক্ষা কর্মকর্তা সরাসরি গ্রহণ করেন অথবা অফিস সহকারী খায়রুলের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এছাড়া আরএকটি নির্ভর সূত্রে জানা গেছে কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে শিক্ষা কর্মকর্তা মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেন না। ১০৮ নং চাঁদখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান প্রতিদিন স্কুলে দেরিতে আসে এবং কোন দিন ও জাতীয় সঙ্গীতে অংশ নেন না। এ বিষয়ে এলাকা বাসির পক্ষ থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ হলে শিক্ষা কর্মকর্তা উক্ত শিক্ষকের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। যার কারণে উক্ত শিক্ষক বর্তমানে আরোদেরিতে স্কুলে আসছে। উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কয়েক বছর পূর্বে শ্যামনগর উপজেলায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার চাকুরী করার সময় ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র বদলি করেন। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নাজমুল হকের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নহে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)