সাতক্ষীরা-৩ আসনে শেষ মুহূর্তে নমিনেশন প্রাপ্তির আশায় হেভিওয়েট প্রার্থীরা ঢাকায়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নমিনেশন প্রাপ্তির বুক ভরা আশা নিয়ে শেষ মুহূর্তে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ আংশিক) হেভিওয়েট প্রার্থীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।

এই আসনে কে কোন দলের প্রার্থী হচ্ছেন এ ব্যাপারে সর্বত্র চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। প্রার্থীদের পক্ষের নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষের প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে একশ’ ভাগ আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, চায়ের স্টল, দলীয় কার্যালয় সহ সর্বত্র চলছে মুখরোচক তর্কবিতর্ক ও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গুণগান। আশাশুনি উপজেলার ১১ ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ৪ ইউনিয়ন (মোট ২১ টি) নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসন গঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই আসনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য গণসংযোগ চালানোর পর ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৩ হেভিওয়েট প্রার্থীসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মনসুর আহমেদ ও নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বারবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম ও সাবেক এমপি আলহাজ¦ ডাঃ মোখলেছুর রহমান।

অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক:
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শৈল্যচিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে পরপর দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে তিনি দেশের জন্য এমডিজি পুরস্কারসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার বয়ে আনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সক্রিয় করেছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও নলতা ম্যাটস্ ও নার্সিং ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও সড়ক, বিদ্যুতায়ন ও অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন দৃশ্যমান। তার মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কিছু চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতা এখন তার সাথে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবারও তিনি দলীয় টিকিট পেতে প্রত্যাশা বুকে নিয়ে দলীয় নমিনেশন পত্রও তুলেছেন।

ডাঃ শহিদুল আলম: বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে আছেন ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডাঃ শহিদুল আলম। চিকিৎসক হিসাবে তার পরিচয় সুবিস্তৃত হলেও রাজনীতির ময়দানে তার অবস্থান ভোটারদের মাঝে সমুজ্জল। সেবার মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের মন-মন্দিরে স্থান করে নিয়েছেন। সরকারি চাকুরী ছেড়ে তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যাবত সক্রিয় রয়েছেন। আকস্মিক কিছু না ঘটলে ক্লিন ইমেজের এই নেতা ঐক্যফ্রন্ট বা বিশ দলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে নেতাকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি’র পাশাপাশি পপুলার ভোট পেয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে তিনি জয়লাভ করবেন বলে মনে করছেন ২০ দলীয় জোটের কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া বিএনপি নেতা আশাশুনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান এস এম রফিকুল ইসলাম ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এডঃ বরুন বিশ্বাস এবং নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের জেলা নায়েবে আমির হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাশারও নমিনেশন পাওয়ার দাবীদার। এই অঞ্চলে জামায়াতেরও ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে দাবি জামায়াতের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। জামায়াতের প্রার্থী এখানে জোট থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

ড. আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ :হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম শক্ত নমিনেশন প্রাপ্তির দাবীদার হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। দীর্ঘদিন যাবত তিনি সরকারের উন্নয়ন প্রচারে মোটর শোভাযাত্রা করে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান, পূজা মণ্ডপে সহায়তা প্রদান করছেন। স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক পদচারণয় এই আসনের অনেকের আলোচনা, পর্যালোচনার জায়গা করতে সক্ষম হয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তার অবস্থান অনেক ভাল বলে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা।

এ বি এম মোস্তাকিম: আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বিএম মোস্তাকিম। তার রাজনৈতিক জীবন আশাশুনিবাসীর কাছে খুবই অন্তরঙ্গ। বিএনপি-জামাত সরকারের দুঃশাসনের সময় সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থেকে আওয়ামীলীগকে সু-সংগঠিত করতে বাস্তব ভূমিকা রাখেন। ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জাতীয় নেতৃত্বে আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃ উদ্ধারের সংগ্রামে অংশ নিয়ে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হন। তার কর্মকান্ডে আস্থাশীল মানুষের সমর্থন নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৩-১৪ সালে তিনি বিএনপি-জামাত সরকারের নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ডের সময় জীবন বাজি রেখে অসহায় মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে নৈরাজ্য প্রতিহত করতে রাজ পথে থেকে ভুয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এবং এবছরই তিনি পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই স্বল্প সময়ে তিনি সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও জনগণের পাশে থেকে সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করার কারণে তিনি জনমানুষের কাছে আলাদা জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তার সমর্থক নেতাকর্মীদের মুখে বিএনপির বিপক্ষে তিনিই পারেন নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে বলে দৃঢ়তার সাথে প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে।

মনসুর আহম্মেদ: সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মুনসুর আহমেদ। প্রবীণ এই নেতা দলের দু:সময়ের কান্ডারী হিসাবে সুপরিচিত। একাত্তর সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রীয় অংশ গ্রহণকারী এই নেতা পারুলিয়া ইউপিতে একাধিকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি দেবহাটা আসন থেকে দুইবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির পাশে থাকা এইনেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

আলহাজ্ব ডাঃ মোখলেছুর রহমান: এ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মনোনয়নের জন্য আরও চেষ্টা চালাচ্ছেন, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ ডাঃ মোখলেছুর রহমান। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা হিসাবে এবং ক্ষমতায় থাকার সুবাধে তিনি এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছেন। সৎ ও নির্ভীক নেতা হিসাবে তার সুপরিচিতি রয়েছে। তিনিও নৌকা প্রতীক পেতে আশা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এড. আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ^বিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি বাবুল আফছার, সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের সাবেক এপিপি লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রসুল বিপ্লবসহ আরও কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

অ্যাড. স ম সালাহউদ্দিন: ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাড স ম সালাউদ্দিন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে জনমনে শক্ত স্থান করে নিয়েছিলেন। তার ক্ষমতার সময় অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার প্রতিরোধ এলাকার মানুষের মনে স্বস্তিকর ও সম্মান জনক জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনিও জাতীয় পার্টির হয়ে ১৪ দলের মনোনয়ন ছিনিয়ে আনতে আশাবাদী।

ডাঃ ইসহাক আলি: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সমর্থিত পীর সাহেব চরমোনাই মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মোঃ ইসহাক আলী হাতপাখা নিয়ে নির্বাচনে নামার আশায় এখন মাঠে রয়েছেন। ইতিমধ্যে হ্যান্ডবিল, পোষ্টার, বিলবোর্ড স্থাপনের কাজ করেছেন। চলছে প্রচার প্রচারণা। তারা জাতি ও মানবতার সেবায় কাজ করার প্রত্যাশা জানিয়ে নিশ্চিত প্রার্থী হিসাবে দাওয়াতী কাজ করে চলেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)