এ কূল ও কূল দু কূলই হারাচ্ছেন এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না। জাতীয় পার্টি বিশেষ করে এরশাদের আচরণে মহাজোটের প্রধান শরীক আওয়ামী লীগ এখন খুবই বিরক্ত। বর্তমানে দেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও এরশাদের ব্যাপারে ইতিবাচকভাবে ভাবছে না। এমন পরিস্থিতিতে মহাবিপদে পড়েছেন এরশাদ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করবেন এমন আগাম ঘোষণা দেওয়ার পরও এখন আওয়ামী লীগের কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১০০ আসন দাবি করছে দলটি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই জাতীয় পার্টিকে ৩০-৩৫  আসনের বেশি দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। বরং জাতীয় পার্টির এমন আবদারে বিস্মিত ও অসন্তুষ্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবাস্তব ১০০ আসনের দাবি পূরণ করে জাতীয় পার্টিকে মহাজোটে রাখার সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে।

মহাজোট ব্যাতীত এরশাদের সামনে আরেকটি বিকল্প হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাওয়া। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা এরশাদকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।, যে কোনো সময় এরশাদ বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারেন এবং সবাইকে বিপদে ফেলতে পারেন বলে তাঁরা মনে করেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘এরশাদের সঙ্গে মিত্রতা করা বিপদজনক ব্যাপার। কারণ তিনি আদর্শহীন রাজনীতি করেন এবং কিছু পাওয়ার আশায় রাজনীতি করেন।’

বিএনপির আরেক নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত এরশাদকে আমাদের জোটে আনার কোনো চিন্তাভাবনা আমরা করছি না।’

দেশের রাজনীতির সর্ববৃহৎ দুইটি জোটের বৈরী অবস্থানের ফলে বর্তমানে জাতীয় পার্টির এ কূল ও কূল দুকূল যাওয়ার মতো একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে।

এরশাদের বিপদ আরও বাড়িয়ে দিতে আজ মঙ্গলবার বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী এবং মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ধানমন্ডি-৩ এর আওয়ামী লীগ অফিসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ যদি শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য করেই ফেলে তাহলে আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব আরও কমে যাবে। এছাড়া ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে এরশাদের বহু দিনের পুরনো ব্যক্তিগত দ্বৈরথ রয়েছে। তাই ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতা থাকা অবস্থায় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতার বিষয়টি সুদূর পরাহত। তাই কৌশলগত কারণে নিজেদের জোটে এরশাদের দলকে না নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, এরশাদকে মহাজোট থেকে আলাদা করাও আসলে বিএনপির একটি রাজনৈতিক কৌশল। কারণ, জাতীয় পার্টি সরে গেলে আওয়ামী লীগ খানিকটা দুর্বল হয়ে যাবে বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দের ধারণা। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই জাতীয় পার্টিকে ঐক্যফ্রন্টেও না নেওয়া এবং মহাজোটেও থাকতে না দেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)