জিততে হলে যা করতে হবে বাংলাদেশকে

সিলেট টেস্টের প্রথম দুই দিন জিম্বাবুয়ে এগিয়ে থাকলেও তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয় দিনের পুরোটা সময় একক আধিপত্য বিস্তার রাখে বাংলাদেশ। গতকাল তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১৮১ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের করা ২৮২ রানের জবাবে বাংলাদেশ মাত্র ১৪৩ রানেই অল আউট হয়ে যায়। জিম্বাবুয়ে লিড পায় ১৩৯ রানের। দ্বিতীয় দিনের ১৩৯ রানের সঙ্গে গতকাল ১৮১ রান যোগে বাংলাদেশকে জয়ের জন্য ৩২১ রানের লক্ষ্য দেয় সফরকারীরা। লিটন দাস ও ইমরুল কায়েসের ব্যাটিং নৈপুণ্যে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৬ রানে দিনের খেলা শেষ করে টাইগাররা। আজ পিছিয়ে থাকা ২৯৫ রানের জন্য মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

গতকাল লিটন-ইমরুলের দেখা শুনে দিন শেষ করার ধারাবাহিকতা আজকেও ধরে রাখতে হবে তাঁদের। আজকের সকালের সেশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুবিধা একটাই পুরো দুইদিন হাতে রয়েছে বাংলাদেশের জেতার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশের তাড়াহুড়া না করাই শ্রেয়। সেই সঙ্গে সেশন বাই সেশনের কথা মাথায় রেখে খেলতে হবে বাংলাদেশকে।

ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশকে জেতানোর প্রথম ধাপটা অবশ্যই গড়তে হবে দুই ওপেনার লিটন-ইমরুলকে। গত সাত ইনিংসে এই দুই ব্যাটসম্যানের কাছে থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো রান পায়নি বাংলাদেশ। নেই কোনো অর্ধশতক। কাল প্রথম উইকেট জুটিতে ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলতে পারলে বাংলাদেশের কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

ইমরুল-লিটনের মতো রান খরায় আছেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট স্পেশালিষ্ট বলে খ্যাত মমিনুল হক। গত সাত ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৩৩ রান। সব মিলিয়ে ৮ রান গড়ে করেছেন ৫৯ রান। চারটি ইনিংসে তিনি কোনো রান করতে পারেননি। তাই বাংলাদেশের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে জ্বলে উঠতে হবে তাকে। মমিনুল রানে ফিরলে বাংলাদেশের কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের কাজটাও বেশ কঠিন হয়ে যাবে। যেকোনো বড় দলগুলোর টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ম্যাচটা কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য আজ জিততে হলে টপ অর্ডারকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অত্যন্ত দুইজন ব্যাটসম্যানকে হলেও দলের হাল ধরতে হবে টপ অর্ডারের।

মিডল অর্ডারে মুশফিকুর রহীম ও নতুন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ্‌ রিয়াদকেও নিতে হবে দায়িত্ব। দলের সব ধরণের জয়ে এদের অবদান সবচেয়ে বেশি হলেও বিগত সাত ইনিংস ধরে তাঁদের ব্যাট হাসছে না। মুশির শেষ সাত ইনিংসের গড় মাত্র ১৭। রান করেছেন ১২১ রান। শেষ ৭ ইনিংসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা প্রথম ইনিংসের ৩১ রানই সর্বোচ্চ ইনিংস। মুশফিক পরিশ্রমী ব্যাটসম্যান। অতীত ইতিহাস বলে দলের বিপর্যয়ে সব সময় হাসে মিস্টার ডিপেন্ডবলের ব্যাট। তাই সবার একটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে জ্বলে উঠবে তার ব্যাট।

সবচেয়ে বড় ভয় অধিনায়ক রিয়াদকে নিয়ে। রঙিন পোষাকে যত না দুর্দান্ত ঠিক ততটাই বিমর্ষ সাদা পোষাকের রিয়াদ। শেষ কবে তার ব্যাট হেসেছে পরিসংখ্যান না ঘাটলে বলা মুশকিল যে কারও জন্য।   রিয়াদ তার খেলা শেষ ৭ ইনিংসে রান করেছেন মাত্র ৪২ রান। ৭ ইনিংসের সর্বোচ্চ রান মাত্র ১৭। এভারেজ মাত্র ৬ রান। রান করতে পারেননি তিনটি ইনিংসে। এই বছরের শুরুতে বাংলাদেশের মাটিতে ৮৩ রানের ইনিংস ছাড়া নেই কোনো অর্ধশতক। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে টেস্ট সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। সেটাও কিনা ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তাই শেষ ইনিংসে রিয়াদের জ্বলে ওঠা খুব জরুরী।

সিনিয়রদের পাশাপাশি নতুনদের মধ্য থেকে দুই একজন ভালো করতে পারলেই বাংলাদেশের জন্য জয়টা সহজ হয়ে যাবে। তবে সেখানে থাকবে না কোনো তাড়াহুড়া। দুই দিন ক্রিজে থাকার মানসিকতা ও মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারলেই ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)