তালার বিভিন্ন বিলে ফাঁদ পেতে পরিযায়ী পাখি শিকার

গ্রামের পাশেই বিল ও জলাশয়। বিলের মাঝে মৎস্য ঘের। ঘেরের মাঝে পানিতে বাঁশ পুতে রেখে ফাঁস জাল টানিয়ে রাখা। আর একটু সরে গিয়ে একাধিক জায়গায় লোহার চিকন তার দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখা। কুয়াশা ঢাকা ভোরে পরিযায়ী পাখিরা এবং রাতে রাতচরা পাখি ফাঁদে আটকে যায়। দূরে ওৎ পেতে থাকা শিকারিরা ফাঁদে আটকানো পাখি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
ফাঁস জাল ও বিশেষ ফাঁদ পেতে পাখি শিকার চলছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিভিন্ন বিল অঞ্চলে। এই উপজেলার নওয়াপাড়া , ধলবাড়ীয়া, কলিয়া ও লক্ষণপুর গ্রামের মাঝখানে বাগের বিল অবস্থিত। কলিয়া গ্রামের উত্তর-পশ্চিমে ও লক্ষণপুর গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগের বিলের অন্তত চারটি জায়গায় পাখি ধরার ফাঁস জাল ও লোহার তারের বিশেষ ফাঁদ পেতে পরিযায়ী ও রাতচরা পাখি ধরতে দেখা গেছে।
গত এক মাসের পর্যবেক্ষণে তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পাখি শিকারের দৃশ্য দেখা গেছে। উপজেলার মহান্দি , নওয়াপাড়া , কলিয়া , ধলবাড়ীয়া, শুকদেবপুর , হাজরাকাঠি , নুরুলপুর ও ঘোনা গ্রামে খাঁচা দিয়ে তিলা ঘুঘু শিকারের দৃশ্য বিদ্যমান। এছাড়া উপজেলার ইসলামকাঠি , ধানদিয়া ইউনিয়ন ও পাটকেলঘাটা হারুন-অর রশীদ কলেজ এলাকায় গোপনে এয়ারগান ব্যবহার হচ্ছে বলে জানা যায় এবং খানপুর গ্রামে কারেন্ট জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির পাখি ধরতে দেখা যায়।

বন্যপ্রাণী ( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা ) আইন ২০১২ এ উল্লেখ্য রয়েছে , কোন ব্যক্তি পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার অথবা হত্যা করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। দন্ডিত ব্যক্তি অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদন্ড , দুই লাখ টাকার অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এই অনুচ্ছেদে আরও উল্লেখ রয়েছে , কোন ব্যক্তি পাখি বা পরিযায়ী পাখির ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে দন্ড দ্বিগুণ হবে।

বিবিসিএফ ( বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন ) এর অন্তর্ভুক্ত জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ ওয়াইল্ড লাইফ’র সাধারণ সম্পাদক জনাব রাশেদ বিশ্বাস জানান , প্রতি বছর শীত ঋতুতে পরিযায়ী পাখিরা আমাদের প্রকৃতিকে সম্মৃদ্ধ করছে। এরা এদেশের জলবায়ুর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এরা বেঁচে থাকার তাগিদে অতিথি হয়ে আমাদের দেশে আসে। দুঃখজনক যে , একশ্রেণীর নির্মম -নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক প্রকাশ্যে কখনো গোপনে এয়ারগান , ফাঁসজাল , খাঁচা ও ফাঁদ পেতে পরিযায়ী ও দেশীয় প্রজাতির পাখি ধ্বংস করে চলেছে। শিকারিদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষায় পুলিশ ও প্রশাসনকে প্রচলিত আইন প্রয়োগ করা উচিত।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব মদিনুল আহসান জানান, উল্লেখিত বিলগুলোতে প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া, যারা পাখি শিকার করেন তাদের সকলকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনা হবে। বন্যপ্রাণী ও দেশীয় প্রজাতির পাখি দেশের সম্পাদ্য।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)