নলতা শরীফে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) রচিত শতবর্ষী গ্রন্থ পুন:মুদ্রণ ২০১৮ এর মোড়ক উন্মোচন

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলাধীন নলতা শরীফে অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক, “স্রষ্টার এবাদত সৃষ্টের সেবা” এ মহান ব্রতকে সামনে রেখে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সুফি-সাধক, পীরে কামেল সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল্লাহ হজরত শাহ্ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) রচিত শতবর্ষী গ্রন্থ “টিচার্স ম্যানুয়াল”২০১৫ পুন:মুদ্রণ ২০১৮ এর মোড়ক উন্মোচন এবং তাঁর শিক্ষা ও সমাজ ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা ২ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় মিশন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল এক এমপি’র সভাপতিত্বেপ্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ডা. মো. ফারুক হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছায়ানীড় প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক লুৎফর রহমান (যিনি শুদ্ধ বাংলা বানান ও উচ্চারণের জন্য সারাদেশে কাজ করছেন)। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা নলতা পাক রওজা শরীফের শ্রদ্ধেয় খাদেম আলহাজ্ব মৌলভী আনছার উদ্দিন আহমদ সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের যুগ্ম-সম্পাদক আলহাজ্ব মো. সাইদুর রহমান শিক্ষক। আরো বক্তব্য রাখেন নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মো. আবু সাঈদ, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইন্সটিটিউট (ঢাকা) এর পরিচালক এবং নলতা কেন্দীয় আহ্ছানিয়া মিশন সম্প্রসারিত কার্যক্রম ঢাকা এর সমন্বয়ক আলহাজ্ব এএফএম এনামুল হক সহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার কয়েকজন প্রধান। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা আলহাজ্ব আবুল ফজল শিক্ষকের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেননলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো. আব্দুর রাজ্জাক, সহ-সম্পাদক আলহাজ্ব চৌধুরী আমজাদ হোসেন ও মো. মালেকুজ্জামান, কর্মকর্তা আলহাজ্ব মো. ইউনুছ, অধ্যক্ষ মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. আনোয়ারুল হক সহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক,স্থানীয় তথা জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে আমন্ত্রিত প্রায় ৭০ টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধান বা সহকর্মীগণ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বক্তব্যে বলেন- যে মহামনীষী রচিত শতবর্ষী গ্রন্থ টিচারস্ম্যানুয়েল এর মোড়ক উন্মোচন করছি, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল জীবদ্দশায় তাঁর কোলে বসে আশীর্বাদ নেয়ারএবং সংস্পর্শে থাকার। আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য যে যে ধরণের কৌশল বা জ্ঞান দরকার তা তিনি ১০৩ বছর আগে তার রচিত শতবর্ষী উক্ত গ্রন্থে উল্লেখ করে গেছেন। আমাদের ছেলে-মেয়েরা শুধু সাধারণ শিক্ষায় বি.এ, এম.এ,বিবিএ, এমবিএ পাশ করে, অনেকে পদার্থে লেখাপড়া করে বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু স্বল্প শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিতরা যদি যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী টেকনিক্যাল শিক্ষার জ্ঞান লাভ করতো তা হলে বেকারত্বের অভিশাপ কুড়াতে হতো না। আমরা সংখ্যা তত্ত্বের উপর গুরুত্ব দিয়ে লেখাপড়ার গুনগত মানের দিকে খেয়াল কস দেই বলেই আমাদের এ অবস্থা। ১৮ থেকে ৩৫ বছরের দেশের দুই-তৃতীয়াংশ যুবকরা আগামী ২০ বছর পর বৃদ্ধের দিকে চলে যাবে। তখন তারা কর্মক্ষম হারিয়ে অনুৎপাদনশীল ব্যক্তিদের দলভুক্ত হবে। সে সময় দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে। প্রতিটি দেশের এমন একটি সময় আসে। আমাদের দেশ সে সময়টি পার করছে। আমাদের গ্রাম-গঞ্জের ছেলে-মেয়েদের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় অধিকাংশই না পারে ভালোভাবে জামা-প্যান্ট ইন করতে, না পারে জুতা-মোজা-প্যান্ট ম্যাচিং করে পরিধান করতে। তাই যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী, বিদেশীদের মত টেকনিক্যাল জ্ঞান অর্জন করতে পারলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। আমি কারিগরি শিক্ষার উপর সব সময় দুর্বল। পীর কেবলাও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থে সে সম্পর্কে লিখে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তো অগ্রিম ঘোষণাও দিয়েছেন আগামীতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল ও একটি করে কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের জন্য ইতোমধ্যে নানা ধরণের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন। আর শিক্ষকদের পথ নির্দেশক হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) বর্তমান সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা ১০০ বছর আগে বলে গেছেন। সেজন্য আজ আমরা ধন্য। আমরা সকলে চেষ্টা করবো পীর কেবল রচিত সকল গ্রন্থগুলো ভালোভাবে অনুধাবন করতে। তাহলে তার সময়োপযোগী সকল লেখা সার্থকতা পাবে।
প্রধান অতিথিসহ বক্তাগণ বলেন- আমি যখন খুলনা বিএল কলেজে পড়তাম সে সময় থেকে নলতা শরীফের নাম শুনেছি। সে সময়ে বিএল কলেজে আমার এক শিক্ষক ছিলেন প্রফেসর কে এম আওরঙ্গজেব। তার বাড়ী নলতায়। তিনি পরবর্তীতে মাউশির ডিজি হিসেবে অবসরে গিয়েছিলেন। অবশ্যই কার উপর পীর কেবলার দোয়া ছিল বলে গ্রাম থেকে অত বড় পদে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। কিন্তু এর আগে এখানে আসা হয়নি। আমি সরকারি চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্যিক বা মনীষীর জীবনী পড়ে ১০০ গুণী সাহিত্যিকের লেখনীর উপর একটি গ্রন্থ রচনা করেছি তার মধ্যে সাহিত্যিক হিসেবে হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এঁর অবস্থান ৮ম। আর বিষয়টি এএফএম এনামুল সাহেবের মাধ্যমে পাক রওজা শরীফের খাদেম সাহেব জানতে পেরে আমাকে অতি আবেগ আপ্লুকভাবে পত্র দিয়ে দাওয়াত দিলেন। পত্রের সে ভাব ভাষায় তার আন্তরিকতার ছোঁয়ায় না এসে পারলাম না। তবে আমি আর ছায়ানীড়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বৃহস্পতিবার রাতে এসে রাত বারটা পর্যন্ত নলতা শরীফ এলাকা ঘুরে দেখেছি। কিন্তু এখানকার পরিবেশ দেখে উজ্জীবিত মনে হয়েছে। কোনো ক্লান্তিভাব আসেনি। প্রয়াত শাহজাহান তপন নামক একজন গুণী শিক্ষক ও লেখক ছিলেন। তিনি বহু পূর্বে আদর্শ শিক্ষক হতে গেলে কি কি করতে হয় তা যা বলে গেছেন, বর্তমান সময়ে এসে তা হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা সাহেবর ১০৩ বছর আগে রচিত শতবর্ষী “টিচারস্ ম্যানয়েল” গ্রন্থে তা পাওয়া যাচ্ছে। তাই যিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় শ্রেণি বৈষম্য দূরী করণে পরীক্ষার খাতায় তৎকালীন সময় থেকে নামের পরিবর্তে রোল পদ্ধতি চালুসহ অসংখ্য, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা বা অনুমোদনের ব্যবস্থা করেছেন। সে মহামনীষী রচিত উক্ত গ্রন্থসহ অন্যান্য গ্রন্থগুলি ভালভাবে পড়বো এবং নিজেদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর আহবান জানান। এছাড়া তিনি বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এপিএ এর আওতায় কোনো শিক্ষক কনো ধরণের প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকলে তা অবলোকন করেন। তবে মাদ্রাসা পর্যায়ে ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত কোন শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই বলে তা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান অতিথির নিকট এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দাবী জানান।

অন্যন্য বিশেষ অতিথিদের তথ্যবহুল নানামুখী বক্তব্য পরবর্তী সবশেষে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবু সাঈদ দোয়া পরিচালনা করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)