গ্রেনেড হামলার রায় আজ, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বুধবার। রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। রায় ঘোষণার দিন রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো পরিস্থিতি শক্ত হাতে দমনের জন্য প্রস্তুত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে রায়ের দিন জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হামলার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করা হয়।
নগরীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ, পৈশাচিক, নারকীয় ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার বিচারে দেশবাসীর প্রতীক্ষার অবসান হবে বুধবারের রায়ে।
ওই ঘৃণ্য হামলার পর বর্তমান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিলল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হয় ৫ শতাধিক।
আসামিদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস(বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর অন্যতম।
সরকারি মদদে মামলা ভিন্নখাতে নেয়া, তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে রায় হতে যাচ্ছে জঘন্যতম বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহের উর্ধ্বে থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা গেছে বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ২১ আগস্ট হামলা ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্যতম ও বর্বরোচিত হামলা। নিরস্ত্র মানুষের ওপর আর্জেস গ্রেনেডের মতো সমরাস্ত্র ব্যবহার উপমহাদেশে আর হয়নি। তারা এ হামলার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রত্যাশা আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বুধবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় হাওয়া ভবনে বসে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়। চালানো হয় নারকীয় হামলা। এমন নারকীয় ঘটনা বিশ্বের আর কোথাও ঘটেনি। ক্ষমতায় থেকে বিরোধী দলীয় নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা ভাবাও যায় না।
অপরদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবীদের ধারণা, তাদের মক্কেলরা খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
২১ আগষ্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায়, তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ওই তিনজন হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল।
এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জঙ্গি তাজউদ্দিনসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে আছেন।
এর মধ্যে ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা যাতে বর্তমানে আসামি সংখ্যা মোট ৪৯ জন। একই ঘটনায় ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে (সংশোধনী-২০০২) অপর একটি মামলায় আসামি সংখ্যা ৩৮ জন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা হয়। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতারা গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
এদিকে, রায় ঘোষণার দিন আসামি ও ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতের চারপাশের সড়কে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতে তল্লাশি চলবে। বসানো হবে চেকপোস্ট।
এছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। শহরজুড়ে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
অন্যদিকে রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলোকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সেজন্য রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।