পদ্মা মেঘনা ও যমুনা সর্বনাশা তিন নদী

বাংলাদেশে প্রতিবছরই নদী ভাঙনে বিলীন হয় হাজার হাজার হেক্টর জমি৷ নদীতে ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি হারিয়ে গৃহহীন হয় বহু পরিবার৷ সব হারানো এসব মানুষের অনেকেরই ঠাঁই হয় শহরের বস্তিতে, স্বচ্ছল গৃহস্থ থেকে চলে যান তাঁরা মানবেতর জীবনে৷

বছরে গৃহহীন লাখো পরিবার

রাষ্ট্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)-এর তথ্য মতে, প্রতি বছর ভাঙনে নদীতে চলে যায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি৷ আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখখানেক পরিবার৷ সব কিছু হারিয়ে নানা ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হয় তাঁরা৷

সর্বনাশা তিন নদী

বাংলাদেশ জুড়ে থাকা কয়েকশ’ নদী-উপনদীতে ভাঙন হলেও সবচেয়ে বেশি ভাঙন-প্রবণ যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা৷ স্বাধীনতার পর থেকে নদী ভাঙনে এ দেশের পৌনে দুই লাখ হেক্টরের মতো জমি বিলীন হয়েছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷

যমুনাই নিয়েছে বেশি

প্রতিবছর বর্ষামৌসুমেই সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙনে লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে৷ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের তথ্য মতে, এই এক নদীর ভাঙনেই ৯০ হাজার হেক্টরের মতো জমি হারিয়ে গেছে৷

পদ্মা নিয়েছে ৬০ হাজার হেক্টর

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে প্রমত্ত পদ্মায় বাংলাদেশের ৬০ হাজার হেক্টর (২৫৬ বর্গমাইল)-এর বেশি জমি বিলীন হয়েছে৷

মেঘনায়ও গেছে গ্রামের পর গ্রাম

পদ্মা-যমুনার মতোই ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হয়ে ওঠে মেঘনা৷ এ নদীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল, চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দারা৷ সিইজিআইএসের হিসাবে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেঘনার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকা৷

ভাঙছে নড়িয়া

বর্তমানে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে নিচ্ছে পদ্মা৷ গত দুই মাসে এই উপজেলার অন্তত দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা চলে গেছে নদীগর্ভে৷

স্কুল-কলেজ হাসপাতালও গেছে

নদী ভাঙনে মানুষের ভিটে-মাটির সঙ্গে এলাকার স্কুল-কলেজ, হাপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও হারিয়ে গেছে৷ নড়িয়ার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছিল ২০১৪ সালে৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেই হাসপাতালও গিলতে শুরু করেছে পদ্মা৷ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের বেশিরভাগ অংশ ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীতে৷

শিবিরে আশ্রয়

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক সহায়তায় এগিয়ে আসে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা৷ পরে এক সময় এসব মানুষকে নিজের পথ বেছে নিতে হয়৷ নড়িয়ায় সব হারানো পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ৩৯টি সাইক্লোন সেন্টারে৷ খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনা খাবার পাচ্ছেন তাঁরা৷

‘সবচেয়ে বড়’ দুর্যোগ

নিয়মিত নদী ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন অনেকে৷

ব্লক, বালুর বস্তায় রক্ষার চেষ্টা

বাংলাদেশের ভাঙন-প্রবণ অধিকাংশ নদীর পাড়ই বাঁধাই করা নয়৷ বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে ভাঙন শুরু হলে তা ঠেকাতে তৎপর হন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা৷ ব্লক, বালুর বস্তা ফেলে শহর এলাকা রক্ষার চেষ্টা করেন তাঁরা৷

ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উপায়

বাংলাদেশে নদী ভাঙন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর পূর্বাভাস এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)