সংকটে’ চলচ্চিত্র, মুক্তি কোন পথে?

চলতি বছরে ঈদুল আজহা পর্যন্ত দেশীয়, যৌথ প্রযোজনা ও আমদানি-রফতানি মিলিয়ে ৩৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর বেশির ভাগ দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করেনি বলে অভিযোগ বিভিন্ন মহলের। গেল ঈদুল আজহার পর ছবি মুক্তি পেয়েছে মাত্র একটি। যদিও গত বছর এ সময়ে ছিল ভিন্ন চিত্র। কিন্তু চলচ্চিত্র অঙ্গনে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং চলছে আগের মতোই। দৃশ্যত অন্য সব বিষয় ঠিকঠাক থাকলেও ঠিক নেই শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ। ১৭, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয় প্রিয়.কমের। এই তিন দিনের আলাপে উঠে এসেছে সংকটের বহুমাত্রিক চিত্র; মিলেছে সমাধানের পথও। বাংলাদেশের নামী অভিনেতা, আবৃত্তিকার, স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। চলচ্চিত্র বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তার মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। যৌথ প্রযোজনা নিয়ে শুরুতে যে নীতিমালা হয়, সেটি তার হাত ধরেই তৈরি। চলচ্চিত্রের বর্তমান সংকট নিয়ে হাসান ইমাম বলেন, ‘এখন সিনেমায় একটা ক্রাইসিস মোমেন্ট (সংকটকালীন মুহূর্ত) চলছে। আর কবে যে স্বস্তিটা ফিরে আসবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে আলাপ-আলোচনা সবই হচ্ছে। কিন্তু সিনেমা নির্মাণের যে কাজটা, সেটাতে ঘাটতি আছে। আমরা যখন এই জায়গাটাতে বেশি ফোকাস করতে পারব, তখন আর এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হব না।’ বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রে যে কয়েকটি ইস্যু ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে, তার মধ্যে একটি যৌথ প্রযোজনায় আইন না মেনে সিনেমা নির্মাণের অভিযোগ। এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এ অভিনেতার ভাষ্য, ‘যৌথ প্রযোজনার নীতিমালাটা আমার প্রণয়ন করা। যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো যদি মানা হয়, তাহলে আমাদের দেশের কোনো ক্ষতি হবে না।’ ‘যদিও সেগুলো পুরোপুরিভাবে মানা হয় না। যে আইনগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্য দিয়ে মেনে চললে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের লোকজনই ফাঁক-ফোকর খুঁজে। আসল জায়গা ঠিক না করে ভিন্ন জায়গা নিয়ে মাতামাতি করলে তো হবে না।’ চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক মামুনুর রশীদ এ সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন হল কমে যাওয়া ও ‘চলচ্চিত্রের সংস্কৃতি’তে এক ধরনের বিপর্যয় ঘটে যাওয়াকে। ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সিনেমা হলগুলোতে; ১৪০০ থেকে ২৫০-এ নেমে এসেছে। এখন বেশির ভাগ সিনেমা হলে গিয়ে বসে সিনেমা দেখার পরিবেশ নাই। যারা লগ্নিকারক কিংবা মালিক; তারা এটাকে এখন আর ইন্ডাস্ট্রি ভাবছে না। শুধু সিনেপ্লেক্সে মেনটেইন করলে তো আর ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে না। আর মানসম্পন্ন কাজ করার কিন্তু এখন একটা সময় এসেছে’, বলেন মামুনুর রশীদ। ‘অনেক তরুণ চলচ্চিত্র বানাচ্ছে। আমাদের এখানে সিনেমার কালচারটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সিনেমা তো একটা সময় ছিল ডোমেস্টিক সেলিব্রেশন। সেই কালচারটা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে একটা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আমার মনে হয়, এটা আস্তে আস্তে মিটবে। যতদিন না সিনেমা হলের দুর্দিন কাটবে, ততদিন সিনেমার এ সংকটও কাটবে না’, যোগ করেন গুণী এই অভিনেতা। চলচ্চিত্র নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘সিনেমার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর একটা ব্যক্তিগত উৎসাহ আছে। কিন্তু এ ছাড়া অন্য যারা আছেন, তাদের সহযোগিতা তেমন পাওয়া যায় না। মন্ত্রী লেভেলের যারা আছেন, তাদের ফিল্মের কী হলো, তা নিয়ে ভাবনার সময় নাই। এ সমস্যার সমাধান হয়তো একটা বের হবে। আমরা ওয়েট করে দেখি কী হয়।’ দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত মুশফিকুর রহমান গুলজার। সরকারিভাবে সিনেমার নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তার উপস্থিতি রয়েছে। বর্তমানে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচিত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গুলজার মনে করেন, সিনেমার এই সংকটের জন্য দায়ী আমদানি করা চলচ্চিত্রগুলো। তার ভাষ্য, ‘এই ছবিগুলো আমাদের ভালো ছবিগুলো যখন মুক্তি পায়, তখন তাদের ঘাড়ের উপর উঠে বসে। এটার সাথে যোগ হয় এখানকার একটি প্রতিষ্ঠান, যারা হলের মেশিন নিয়ন্ত্রণ করে।’ ‘আমাদের যারা প্রযোজক, তারা অনেক সময় ছবি রিলিজ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে সে একটা বিশাল লোকেশনের মুখে পড়ে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেয়। এখন তো প্রযোজকরা ছবি বানাতে ভয় পায়। এরা তো বাংলা ছবিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার একটি নীলনকশা করেছে।’ চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মনে করেন বর্তমানে চলচ্চিত্রের এ সংকট দূর করার জন্য ‘আমাদের দর্শকটা কারা, তাদের জন্য কেমন জায়গা দরকার, তারা কোন ধরনের গল্প চায়’-এই তিনটা বিষয় বুঝতে হবে। তিনি বলেন,‘আমরা যদি এখনো সেই পুরনো মডেলে পড়ে থাকি, মানে সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তির প্রসেসের কথা বলছি, তাহলে ভুল হবে। মূল কথা হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।’ ‘ডুব’ ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত হওয়া এই নির্মাতা বলেন, ‘এখনকার সিনেমার বাণিজ্য বেশির ভাগ সময় শাকিব খানের ওপর নির্ধারণ করে। কিন্তু সে তো বছরে ৫২টা ছবি করতে পারবে না। তাই শাকিব খানের বাইরে গিয়েও ছবি বানাতে হবে। কারণ সে ছবিরও আলাদা দর্শক আছে। তখন ইন্ডাস্ট্রিটাতে এ প্রবলেমগুলো থাকবে না। আর এ দর্শকরা ছবি দেখতে চায় মাল্টিপ্লেক্সে, আরামদায়ক পরিবেশে। কিন্তু তাদের ধরে রাখার জন্য আমরা কিন্তু প্রপার মাল্টিপ্লেক্স বানাই নাই। আর এখন পাইপলাইনে যে তরুণ মেকাররা আছে, তারা নানানভাবে কিংবা ভিন্ন ভিন্ন ওয়েতে গল্প বলছে।’ ‘এই যে যারা গল্প বলছে, তারা যখন সিনেমা বানাবে, তখন তাদের কাজগুলো ত্বরান্বিত হবে যখন ঢাকা শহরের চার কর্নারে আরও চারটা মাল্টিপ্লেক্স থাকবে। বড় বড় শহরগুলো মিনিমাম দুটি করে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ হবে। আমি বলে দিতে পারি, তখন প্রতি সপ্তাহে রিলিজ দেওয়ার মতো এক ধরনের ছবিও রেডি থাকবে।’ তরুণদের চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ না থাকার বিষয়ে ফারুকী বলেন, ‘এ তরুণরা এখন বানাচ্ছে না, কারণ তারা এখন নানান আয়-ব্যয়ের হিসাব করছে। ভালো ছবির সংখ্যা যদি বাড়াতে হয়, সহজ সমাধান হচ্ছে ঢাকায় মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মানে বাকি সময়গুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য অন্যরকম গল্পের ছবি দরকার।’ বাংলাদেশে এখন যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ছবি প্রযোজনা করছে, তার একটি হলো জাজ মাল্

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)