সাতক্ষীরায় তালাবদ্ধ অবস্থায় বন্দি ময়মনসিংহের মেয়ে সালমা

রাতভর মশায় কামড়েছে। শিশুটিরও শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। এমন অমানবিক অবস্থায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তা হীনতায় ফেলে রেখেছে আমাকে। তারপরও রাতে গলা টিপে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। টেনে হেঁচড়ে বাইরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে বিরতিহীন অনশনে থাকা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার গৃহবধূ সালমা খাতুন এভাবেই তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শ্বশুর বাড়ির লোকজন এতো নিষ্ঠুর, এতো নির্মম যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি একটা মেয়ে । আমার নিরাপত্তার বিষয়কেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমার এই দুঃসময়ে পুলিশ শুধু দেখে গেছে, কিন্তু নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা করেনি, স্বামীর ঘরে উঠতেও সাহায্য করেনি। এখন আমি অমানবিক অবস্থায় রয়েছি। আমার চারদিকে তালাবদ্ধ। সেখানে একটি বাথরুম নেই। সিঁড়ির নিচে কি করে থাকবো।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মহিষতাড়া গ্রামের শেখ জামাল হোসেনের মেয়ে সালমা খাতুন। তার সাথে বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরার সুলতানপুরের দুলাল হাসানের ছেলে অমিত হাসান ফহাদের।

তিনি জানান ২০১২ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে সে বছরের ১৪ জুলাই তাদের বিয়ে হয় ময়মনসিংহে। এর মধ্যে তাদের ঘরে আসে মেয়ে অবন্তী হাসান ফারিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালে স্বামী অমিত হাসান ফহাদ স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে ফেলে চলে যায়। এরপর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই, এমনকি কোন খোঁজখবরও নেয় না। তবে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন তিনি বলে জানালেন সালমা।

সালমা খাতুন জানান, অনেক চেষ্টার পর অবশেষে তিনি তার কন্যা শিশুকে নিয়ে অমিত হাসানের সাতক্ষীরার বাড়িতে ধর্ণা দিয়েছেন সোমবার দুপুর ২টা থেকে রাত পার হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন।

সালমা বলেন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের পর তার ও তার স্বামীর কিছুদিনের জন্য জেল হয়। এরপর তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠায় নিজেদের স্বামী স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। কিন্তু এতে বাধ সাধেন স্বামী অমিত হাসান ফহাদের মা আকলিমা খাতুন। অবশেষে গত ১২ আগস্ট শ্বাশুড়ি আকলিমা সব মেনে নিয়েছেন বলে তাকে জানান এবং তাকে সুলতানপুরে চলে আসতে বলেন। তিনি আরও জানান এখন বুঝছি তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাকে ডেকে এনেছেন।

সালমা খাতুন জানান তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় পৌঁছান। শ্বাশুড়ি আকলিমা তাকে একটি ভাড়া বাসায় রেখে দেন। এরপর কয়েকদিন আগে থেকে তাকে ভাড়া বাসা থেকে তাড়াতে শুরু করেন আকলিমা। নিরুপায় হয়ে তিনি আকলিমাদের বাড়ির দরজায় এসে অনশন শুরু করেছেন। তিনি জানান তার মেয়ে ফারিয়ার ডিএনএ টেস্ট হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে সে ফহাদের ঔরসজাত। তার কাছে বিয়ের কোন দালিলিক কাগজপত্র নেই। সব কিছু রয়েছে স্বামী অমিত হাসান ফহাদ ও ম্যারেজ রেজিস্টারের কাছে। এখন তিনি দাঁড়াবেন কোথায় এই প্রশ্ন রাখেন সালমা খাতুন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইল আকলিমা খাতুন জানান আগামি ২৪ সেপ্টেম্বর তার ছেলের মামলার দিন। এ মামলার বাদি সালমা খাতুন নিজেই। আমি বলেছি ওইদিন তাকে জেল থেকে জামিনে আনতে পারলে ফহাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন সালমা যে তার স্ত্রী এমন কোনো প্রমাণ সে দেখাতে পারেনি।

সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন জানান ‘ সালমাকে ওই বাড়িতে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। তারপর ফহাদ বাড়ি এলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এর পর থেকে বাড়ির প্রাচীরের মধ্যে রাখা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)