বাঙালি জাতির সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী শোকাবহ মাস আগস্ট- এমপি রবি

সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেছেন, ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধূর ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। জাতির পিতার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল ‘সোনার বাংলা’ গড়ার। আমাদের দায়িত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করা। ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শ্যের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালি জাতির অন্তরে অনুকরণীয় হয়ে আছে।

আসুন আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তাঁর স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি। ক্ষুধাম্ক্তু, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের অবশ্যই জয়ী হতে হবে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। আর এই অর্জনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জনগণের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং দেশপ্রেম আজও নতুন প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ব হয়ে নেতৃদ্বয় বিন¤্র্র শ্রদ্ধায় ও অকৃত্রিম ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণ করছে।

বাঙালী জাতির শোকাবহ ১৫-ই আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী শোকের দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বাষির্কী। ১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগস্ট কালরাত্রিতে ঘটেছিল ইতিহাসের সেই কলঙ্কজনক ঘটনা। এক গভীর ষড়যন্ত্রকারী বিপথগামী সৈনিকদের হাতে সপরিবারে প্রাণ শহিদ হয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হচ্ছে জাতির জনকের শাহাদাৎ বার্ষিকী। বাঙালি জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। নৃশংস ওই ঘটনায় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন আরো যারা শহিদ হয়েছিলেন তারা হলেন: জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল। খুনিদের বুলেটে সেদিন আরো প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। প্র্রতিবছর ১৫ আগস্ট আসে বাঙালির হদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। আর আগস্ট মাস বাংলাদেশের মানুষের কাছে শোকের মাসে পরিণত হয়েছে আজকের এই দিনটির জন্যই। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও সেদিন মহান আল্লাহ’র অসীম কৃপায় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সে সময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে সন্তানসহ অবস্থান করছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ রেহানাও ছিলেন বড় বোনের সঙ্গে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সে রাতে কি ঘটেছিল তা স্মৃতিতে আনলে আঁতকে উঠতে হয়। কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালিয়ে পৈশাচিক পন্থায় ঘাতক দল রাতের অন্ধকারে হামলা চালায় স্বাধীনতার স্থপতির বাসভবনে। প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে ছিলেন ঘাতকের বুলেটে ঝাঁঝরা হওয়া চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অভ্যর্থনা কক্ষে শেখ কামাল, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, নিচতলার সিঁড়ি সংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবীর ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে তা অনুমোদন দেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম এ নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে মহান জাতীয় সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ নিশ্চিত করেন আদালত।

পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়। কিন্তু এখনও বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি বিদেশে পলাতক। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পলাতক ছয় খুনির মধ্যে দুই পলাতক আসামি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্টে অবস্থান করছেন। অপর চারজনের মধ্যে দু’জন প্রতিবেশি একটি দেশে, একজন পাকিস্থানে এবং একজন আফ্রিকার উগান্ডায় রয়েছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। বাঙালী জাতি রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালন করছে জাতির জনকের ৪৩ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। বাঙালি জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)