ওই বাসচালকদের ক্ষমা করা যায় না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বাসচালকদের ক্ষমা করা যায় না। আমরা তাদের কখনও ক্ষমা করব না। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে।

রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ (এসআরসিসি) সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে পথচারীদের জন্য একটি আন্ডারপাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময়ই ড্রাইভারদের ট্রেনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু ট্রেনিং না দিয়ে ড্রাইভারদের গাড়িতে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, যেভাবে শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল তার প্রতিদান তারা পেয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। কিন্তু আন্দোলনের তৃতীয় দিন দেখি ব্যাগের ভেতর থেকে ছাত্রদের পোশাক বের করে অনেকে ছাত্র হয়ে যাচ্ছে। তারা ব্যাগের ভেতর থেকে দা, রামদা এগুলো বের করছে। দর্জির দোকানে স্কুল ড্রেস বানানোর ভিড় বেড়ে গেছে। তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্ররা আন্দোলনের সময় যা বলেছে তাই করা হয়েছে। প্রত্যেকে তাদের কথা শুনেছে। ছাত্রদের আন্দোলনে যখন তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ে, তখন আমি অভিভাবক ও শিক্ষকদের আহ্বান করি তাদের সন্তানদের যেন তারা রাস্তা থেকে সরিয়ে নেন। তারা আমার কথা শুনেছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

সড়কে যাতে কারো প্রাণহানি না ঘটে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেই দেখি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্ব কে নেবে? রাস্তা পারাপারের সময় চারদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাস্তা পারাপারের নির্ধারিত স্থান দিয়েই পারাপার হতে হবে। ড্রাইভারদের বলব, স্টপেজের বাইরে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো নামানো করা যাবে না। করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সারা দেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই। প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ভেবেছিলাম কিভাবে সারা দেশের মানুষকে কম্পিউটার শিখনো যায়। আমি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সে কাজ করেছি। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া ভূউপগ্রহ নির্মাণ করে দিয়ে যান। তার ভিত্তিতে আমরা স্যাটেলাইট পাঠাতে পেরেছি। আমরা ছাত্রদের হাতে বিশ্বকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, শিক্ষাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য বৃত্তি দিচ্ছি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। একটি ছেলেমেয়েও যেন শিক্ষার বাইরে না থাকে, সেদিকে নজর দিচ্ছি। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আমরা নজর দিয়েছি। চিকিৎসক গড়ে তোলার জন্য মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করছি। গবেষণা শিক্ষার দিকেও নজর দিচ্ছি

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি কলেজ সংলগ্ন সড়কে বেপরোয়া দুই বাসের চাপায় প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার পর এর প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নেয়। এরই অংশ হিসেবে এই আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পাঁচটি বাসও হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)