সাতক্ষীরা সড়কে ৭ মাসে প্রাণ হারালো ৩২ জন
সাতক্ষীরা জেলার সব কয়টি রুটে লক্কর ঝক্কর মার্কা ফিটনেস বিহীন যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। ফিটনেস বিহীন এসব যানবাহনের সংখ্যা ছিলো প্রায় আট শতাধিক। আর এ কারণেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে জেলার বিভিন্ন সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ৩২ জন।
সূত্রমতে, ৮শ’টি ফিটনেস বিহীন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে চলাচল করছিলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলো বাস ও ট্রাক। এ ছাড়া জেলায় প্রায় ১৫ হাজার নন্বর বিহীন মোটরসাইকেল চলাচল করছিলো। দিনের পর দিন ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছিল না। এসব ফিটনেস বিহীন যানবাহন সড়কে চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। চির পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককে।
সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-যশোর, সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর, সাতক্ষীরা-আশাশুনি, ভোমরা, খুলনা ও তালার আঠারো মাইল সড়কে চলাচল করে থাকে বাস ৪৫০টি ও ৪০০টি ট্রাক। এছাড়া মাইক্রো, প্রাইভেট, মিনি ট্রাক, জিপ, পিকআপ, অটোরিকসা, ভ্যান চলাচল করে থাকে কয়েকশ’। প্রায় ১২ হাজার মোটরসাইকেল চলাচল করে থাকে। এসব যানবাহনের মধ্যে ৫০০টি যানবাহনের ফিটনেস ছিল না। ২৫০টি বাস, মিনিবাস ও ৫০টি ট্রাক দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেস বিহীন অবস্থায় জেলার বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে চলাচল করছিল। এছাড়া জেলায় প্রায় ১০ হাজার নম্বর বিহীন মটরসাইকেল রয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত জেলার ৮ থানায় ১০ জন নিহত, ৩ জন আহত এবং ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে স্থানীয় পত্রিকার প্রকাশিত খবর বলছে, চলতি বছরের জুন মাসেই একদিনে ছয় জন নিহতসহ ১০ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন। জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত জেলায় সড়কে প্রাণ গেছে ৩২ জনের, আহত হয়েছেন ৫১ জন।
এদিকে জেলায় ট্রাফিক সপ্তাহ উপজেলা বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন জেলা পুলিশ ও বিআরটি কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার সড়কে সবচেয়ে বেশি ফিটনেস বিহীন যানবাহন ও নাম্বার বিহীন মোটরসাইকেল বেশি চলাচল করছিলো। দীর্ঘদিন ধরে লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস ও মিনিবাস চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাস ও ট্রাকের ড্রাইভার জানান, বাস, ট্রাক, মাইক্রোসহ বিভিন্ন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে হলে তাদেরকে ট্রাফিক পুলিশের টাকা দিতে হতো। বিশেষ করে বাস ও ট্রাকের মালিকদের কাছ থেকে মাসে টাকা আদায় করা হতো। এ জন্য বিশেষ সংকেতযুক্ত টোকেন দেয়া হতো। মাস শেষে কখনও কখনও ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য আবার তাদের নিয়োগকৃত লোক যেয়ে টাকা নিয়ে যেতো। টাকা দিলে রাস্তায় তাদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হতো না।
এদিকে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইওয়ান) আজম খান বলেন, জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত জেলার ৮ থানায় ১০ জন নিহত, ৩জন আহত এবং ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের সার্জন আব্দুল মোমিন জানান, বর্তমানে রোডে ফিটনেস বিহীন গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন আটক করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় আগের নম্বর বিহীন মোটরসাইকেল চলাচল করছে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি একেবারে অস্বীকার করেন।
সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক প্রকৌশলী তানভির আহমেদ জানান, ফিটনেস বিহীন যানবাহন মালিকদের তারা নোটিশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনামুলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। তারা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। আটক যানবাহনকে জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মোটরশ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ফিটনেস বিহীন মটর যান ও ডাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ৩৭টি মামলা, ৩৪হাজার টাকা জরিমানা ও ২ জনকে জেল দেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে অনেক অংশে অবৈধ যানবাহন চলাচল কমে গেছে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা বিআরটিএর নিজস্ব অফিস ও যানবাহন না থাকার কারণে আমাদের কাজে ব্যাহত হচ্ছে।