বেড়েই চলেছে পরকীয়ার সম্পর্ক:ধংস হচ্ছে সোনার সংসার

পরকীয়া এ সময়ের আলোচিত এক সমস্যার প্রতিচ্ছবি ।বাংলাদেশের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে পরকীয়া ।আর এই পরকীয়ার কারণে সন্তান হারাচ্ছে তার মাকে ,স্বামী হারাচ্ছে তার স্ত্রী কে আবার স্ত্রী হারাচ্ছে আশ্রয়ের শেষ স্থল তার স্বামীকে ও।প্রতিদিন পরকীয়ার কারণে কলিজার টুকরা সন্তান ও সোনার সাজানো সংসার ফেলে অন্ধকার পৃথিবীর দিকে পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার নারী পুরুষ ।

সন্তান আর স্বামীকে বাদ দিয়ে ভালবাসার মানুষের হাত ধরে পাড়ি দিচ্ছে দূর অজানায়। সে জানে না এটার শেষ পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে।ভালবাসার মানুষের হাত ধরে চলে যাওয়াকে-ই ভাল থাকার অবলম্বন ভেবে নেয় তারা । শাশুড়ি জামায়ের সাথে পালিয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী স্বামীকে বাদ দিয়ে তার গোপন ভালবাসার মানুষের হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছে। এমন আরও অনেক কিছু। যেটা পুরোটাই পরকীয়ার প্রভাবে হচ্ছে।

পরকীয়া আজ শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান নেই । সমাজের শিক্ষিত মানুষেরা ও আজ পরকীয়ার সাথে জড়িয়ে পড়েছে । শিক্ষক ছাত্রীর সাথে এবং শিক্ষিকা ছাত্রের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে ।প্রায় আমরা খবর শুনি যে ছাত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গেছে শিক্ষক । আবার প্রেমের টানে ছাত্রের হাত ধরে পালালো শিক্ষিকা । এই সব ঘটনা নতুন কিছু নয় ।

কিন্তু কেন এই পরকীয়া !যার কারণে সোনার সংসার গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে।আমাদের সমাজের দিকে তাকালে পরকীয়ার মূল কারণ আমারা জানতে পারবো । আর সে কারণ হলো —

স্বামী স্ত্রীর চাহিদাকে গুরুত্ব না দেওয়া। যেমন সময়, ভালো আচরণ ও শারীরিক সম্পর্কে প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া।স্ত্রী স্বামী’র চাওয়া পাওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার না করা, শারীরিক সম্পর্কে অস্বীকৃতি সহ স্বামীর যৌন কার্যে সাড়া না দেওয়া।এসব কারণে বিবাহিত নারী পরপুরুষ ও বিবাহিত পুরুষ পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কেননা, একজন নারী কিংবা পুরুষ তাঁর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দিয়ে তাঁর প্রত্যাশা বা মনের চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে তাঁর বিপরীত কাউকে খুঁজে নেয়।

আর এই বিষয় টা লক্ষ করা যায় প্রবাসীদের স্ত্রীদের মধ্যে বেশি । বাংলাদেশের পরকীয়ার পরিসংখ্যানে এগিয়ে তারা । প্রবাসী স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সাথে সময় বা তাদের চাহিদা মিটাতে পারেনা । আর এই কারণে তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ।

যে স্বামী তার সন্তান ও সংসার কে ভালো রাখার জন্য নিজের জীবন কে বাজি রেখে বিদেশে পাড়ি দিয়ে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটে টাকা রোজগার করে ।সেই স্বামী বিদেশ থেকে বাড়ি এসে দেখে কলিজার টুকরা সন্তান ও সোনার সংসার ছেড়ে তার স্ত্রী পরকীয়ার সাথে জড়িয়ে পড়েছে বা অন্যের হাত ধরে পালিয়েছে ।

অন্যদিকে, স্টার জলসা আর জি বাংলার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি ঘরে ঘরে। যেখানে পরকীয়ার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে প্রতিটা পর্বে পর্বে। শুধু অপেক্ষায় থাকে পরবর্তী পরকীয়ার কৌশল অবলম্বন করার জন্য। ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে সোনার সংসার। ঘরের স্ত্রী, সন্তান, এমনি কি শ্বশুর শাশুড়িও স্টার জলসা থেকে শিক্ষা নিয়ে তার প্রয়াগ করছেন বাস্তব জীবনেও। ফলে ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে অনেক নব দম্পতির স্বপ্নের সাজানো সংসার। সমাজের ঘটে চলা এমন বাস্তবতার সম্মুখীন অধিকাংশ পরিবার। তবুও যেন ঘরে ঘরে থেমে নেই স্টার জলসা আর জি বাংলার দর্শক।

প্রতিদিন কোথাও না কোথাও স্টার জলসা আর জি বাংলার প্রভাবে স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। নিজের সন্তান ফেলে স্ত্রী বা স্বামী পরকীয়ায় পাড়ি দিচ্ছে অজানায়। এমন ঘটনার সংখ্যা রয়েছে হাজার হাজার ।

ভালোবাসায় সাফলতা না পাওয়া ও পরকীয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আমরা দেখি আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি ছেলে মেয়ে ভালবাসার সম্পর্কের সাথে জড়িত।কিন্তু তাদের এই ভালোবাসা সফল হয় খুবিই কমই।প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্ক অনেক পরিবার মেনে নেয় না । তখন দেখা যায় যে,মেয়ে মত না থাকার স্বর্তে ও তার বাবা তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়।কিন্তু সে কি তার নতুন স্বামী কে পেয়ে খুশি হয়ে ভালভাবে সংসার করছে ? না ,এমন টা খুবিই কম দেখা যায়।যেটা দেখা যায় সেটা হলো ,সে তার সেই ভালবাসার মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পরকীয়ার সম্পর্কে পা রাখে। শুরু করে তাদের পরকীয়ার জীবন । এমন দৃষ্টান্ত আজ বাংলার জমিনে হাজার হাজার।

পরকীয়ার জের হিসাবে আবার কখনো কেউ বেছে নিচ্ছে আতœহত্যার পথ।সোনার সংসার আর সন্তান কে ছেড়ে ভালবাসার মানুষের হাত ধরে সুখী হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত খুবিই কমই রয়েছে ।বেশিরভাগই দুঃখের মধ্যেই পতিত হয় তাদের জীবন ।দুঃখ যখন চরম পর্যায়ে এসে যায় তখন সে আত্মহত্যার করে।আবার কখনো পরকীয়ার সম্পর্ক যখন মানুষের সামনে এসে যায় । তখন মানুষের সামনে মুখ দেখাবে কি করে এই ভেবে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ।

সাতক্ষীরা জজকোর্টের আইনজীবী ও সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাইমুল হক কিসলু বলেন,, আমাদের সমাজে স্বামী, স্ত্রী বা সন্তানরা স্টার জলসা, জি বাংলার জন্য দিনের ও রাতের অনেকাংশ সময় ব্যয় করে। এখান থেকে নেতিবাচক শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ ঘটায় ফলে ঘরে ঘরে অশান্তি বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে ভেঙ্গে যায় সংসারটি।প্রত্যেকেরই বিনোদন প্রয়োজন আছে তবে সেটাকে কেউ বিরুপভাবে গ্রহণ করলে তার দায় কে নেবে। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে স্ত্রী-স্বামীরা। কখনো সন্তানদের দূরে ঠেলে প্রেমিকের সঙ্গে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন,প্রতিদিন এই ধরণের মামলা অনেক আসে।কিন্তু আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে ধারা না থাকায় যৌতুক বা স্ত্রী নির্যাতন মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে হয়। আমরা চাই সৃজনশীল সংস্কৃতি চালু হোক আর অপসংস্কৃতি দূর হোক।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)